দিঘল মেঘের দেশে-তেইশ

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

পুলিশ অফিসার বললেন, ওয়ান এইট ইয়ার্স ওল্ড বয় হ্যাজ বিন সেক্সুয়ালি অ্যাসালটেড বাই মিস্টার আজমল হোসেন…! রাকিবের মুখ হা হয়ে গেল। সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না আজমল হোসেনকে জড়িয়ে এমন একটা কথা শুনতে।

সেক্সুয়ালি অ্যাসালটেড? আট বছরের বালক? না–না, এটা অসম্ভব। রাকিব মাথা নাড়ল। ভাবল, কোথাও একটা ভুল হচ্ছে।

নিউজিল্যান্ডের শিশু আইন ও নারী আইন খুবই কঠিন। অ্যান্টি স্ম্যাকিং ল বলে এখানে একটা আইন আছে। যে আইনের কারণে এ দেশের কোনো বাবা-মা বা প্রাপ্তবয়স্ক কেউ কোনো ছোট শিশু বা তাদের সন্তানদের চড়-থাপ্পড়ও মারতে পারেন না—সন্তান বা শিশুরা যতই বেয়াদব হোক বা বেয়াড়া হোক। যদি কোনো বাবা-মা তাদের সন্তানদের চড়-থাপ্পড় মারেন আর কোনো কারণে সন্তানদের শরীরে আঘাত চিহ্ন পাওয়া যায়, তাহলে পুলিশ বা সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারের লোকজন এসে বিনা প্রশ্নে বাচ্চাদের তুলে নিয়ে যাবে। বাবা-মা শত কাঁদলেও তারা তাদের সন্তানদের ফিরে পাবেন না। এখানকার নারী আইন এত কঠিন যে, এ দেশে পুরুষেরা নারীদের কাছে প্রায় ভেড়া হয়ে থাকেন।

সেক্সুয়ালি অ্যাসালটেড বাই আজমল হোসেন...! কথাটা এমনভাবে রাকিবের কানে বাজছে যে, সে কিছুতেই তা মাথা থেকে দূর করতে পারছে না। একটা লাল পিঁপড়া যেন মগজের ভেতর ঢুকে গেছে। পিঁপড়াটা হাঁটছে আর কামড়াচ্ছে।

রাকিব জানে, উন্নত বিশ্বের অনেক দেশ আছে যেখানে কিছু বিকৃত মন-মানসিকতার বয়স্ক লোকেরা বাচ্চা ছেলেমেয়েদের ধরে নিয়ে পটিয়ে খারাপ কিছু করে। নিউজিল্যান্ডেও প্রতি বছর এ রকম দু-একটা ঘটনা ঘটে। তবে অস্ট্রেলিয়াতে এসব বিকৃত ঘটনাগুলো বেশি ঘটে। ইউরোপের অনেক দেশে তো এসব ঘটনা অহরহই ঘটতে শোনা যায়। কিন্তু আজমল হোসেন স্যার? রাকিব নিজে নিজে আবার না বোধক মাথা নাড়ল। ভাবল, অসম্ভব।

তবে জাহিদ সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পারল, সত্যিকারের ঘটনাটা কী! পুলিশ অফিসার যেভাবে ঘটনাটা বলেছেন, মোটেও তা ঘটেনি।

জাহিদ এর আগে বহুবার আজমল হোসেনকে সতর্ক করে দিয়েছিল, যাতে তিনি হাঁটতে গিয়ে কোনো বাচ্চা ছেলে পেলে কাছে টেনে আদর না করেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা!

আজমল হোসেনের একটা অভ্যাস আছে, তিনি যখন রাস্তায় হাঁটেন কোনো সাত-আট বছরের বালক দেখলেই কাছে ডাকেন। কখনো মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। কখনো হাত টেনে আদর করেন। পিঠ চাপড়ে স্নেহ প্রকাশ করেন। সব সময় পকেটে ললিপপ বা চকলেট নিয়ে ঘোরেন। সেগুলো ওদেরকে দেন। যা নিউজিল্যান্ডের মানুষ সন্দেহের চোখে দেখে।

জাহিদ জানে, আজমল স্যারের মনে একটা স্মৃতি বারবার ঘুরেফিরে আসে। তিনি নিউজিল্যান্ডে আসার সময় তার আট বছরের ছেলে অনন্তকে রেখে এসেছেন। যদিও সেই আট বছরের অনন্ত এখন চৌদ্দ বছরের তরুণ। কিন্তু এই সহজ সরল মানুষটাকে এ কথা কে বোঝাবে, তার ছেলে আর এখন আট বছর বয়সী নেই?

রাকিব ও জাহিদ দুজনই চুপ। তারা দুজন চুপ করে টেবিলের একপাশে বসে আছে। সাইদ আহমেদ পুলিশ অফিসারটার সঙ্গে কথা বলছেন।

ঘটনাটা খুবই ছোট্ট। আজমল হোসেন গতকাল তিনটার দিকে লরেন্স স্ট্রিট ধরে হাঁটতে গিয়ে একটা পার্কের পাশে এক আট বছরের ছেলেকে একা পেয়ে হাত ধরে টানাটানি করেছেন। খুব অশোভন আচরণ করেছেন। ছেলেটা আজমল হোসেনের এই অশোভন আচরণে ভয় পেয়ে চিৎকার দেয়। এতে আশপাশের বাড়ি-ঘরের লোকজন বেরিয়ে আসে। ছেলের বাবা-মা এসে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ডাকে।

রাকিব ভাবল, আজমল স্যারের ঘটনা ভাবলে অনেক কিছু, আবার না ভাবলে কিছুই না।

সাইদ আহমেদ বোঝানোর ভঙ্গিতে বললেন, অফিসার, মিস্টার আজমল হোসেন মোটেও এ ধরনের মানুষ নন। আমাদের দেশের কালচারে আছে, কোনো মুরব্বি বাচ্চা ছেলেমেয়ে দেখলেই একটু আদর করে। মাথায় হাত বুলিয়ে স্নেহ করে। এতে বাচ্চারা খুব অনুপ্রাণিত হয়। মুরুব্বিদের সামনে ওরা সহজ বোধ করে। আনন্দ পায়।

পুলিশ অফিসার বললেন, ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। ছেলেটার বাবা-মা অভিযোগ করেছেন, আজমল হোসেন নাকি তাদের ছেলেকে নির্জন পার্কে পেয়ে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করেছেন। জোরজবরদস্তি করেছেন। আপত্তিজনক স্থানে স্পর্শ করেছেন!

সাইদ আহমেদ বললেন, ওটা তো ছেলেটার বাবা-মার অভিযোগ। কিন্তু আজমল হোসেন কী বলেছেন? তিনি কি কোনো স্টেটমেন্টে দিয়েছেন?

: হ্যাঁ, দিয়েছেন।

: কী স্টেটমেন্ট দিয়েছেন?

: তার স্টেটমেন্ট স্পষ্ট নয়। তিনি একেক সময় একেক কথা বলেছেন।

: আমরা কি আজমল হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে পারি?

: না, আপনারা একজন ল ইয়ার ছাড়া মিস্টার আজমল হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে পারেন না।

: ও! বলেই সাইদ আহমেদ রাকিব ও জাহিদের দিকে তাকালেন।

পুলিশ অফিসার বললেন, তবে আপনারা যদি চান তাহলে তার স্টেটমেন্ট শুনতে পারেন। আমরা রেকর্ড করে রেখেছি।

সাইদ আহমেদ বললেন, হ্যাঁ হ্যাঁ, সেটা খুব ভালো হয়। আমরা আজমল হোসেনের স্টেটমেন্টটা শুনতে চাই, প্লিজ!

পুলিশ অফিসার বললেন, আপনারা বসুন। আমি ভেতর থেকে তার রেকর্ড করা স্টেটমেন্টটা নিয়ে আসি।

সাইদ আহমেদ সায় দিয়ে মাথা ঝাঁকালেন।

পুলিশ অফিসার ভেতরে চলে যেতেই সাইদ আহমেদ জাহিদের দিকে তাকিয়ে বললেন, স্যারকে নিয়ে তো আর পারা গেল না জাহিদ!

জাহিদ বিষণ্ন দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকাল। মুখে কিছু বলল না।

রাকিব বলল, সাইদ ভাই, আজমল স্যারের পরিস্থিতি তো খুব খারাপ।

সাইদ আহমেদ বললেন, তাই তো দেখছি।

: এখন উপায়?

: জানি না রাকিব।

: আমাদের মনে হয় আজমল স্যারের জন্য ল ইয়ার ধরতে হবে।

: তাই তো দেখছি। কিন্তু ল ইয়ার ধরলেই কী সমাধান হবে? চাইল্ড অ্যাবিউজ কেস। তাও আবার আন-এক্সপেক্টেড সেক্সুয়াল টাচ। সেক্সুয়াল অ্যাস্যলট কেস।

: কিন্তু ল ইয়ার ধরা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায়ও তো নেই।

: হুম, কিন্তু রাকিব, ল ইয়ারের ফি দেবে কে? আজমল হোসেনের কাছে মনে হয় না তেমন কোনো টাকাপয়সা আছে। তিনি কাজই করতে পারেন না। এখানকার ল ইয়ার ফি জানো কত? একজন মিডিয়াম ক্লাসের ল ইয়ারে ফি ঘণ্টায় এক শ বিশ থেকে এক শ পঞ্চাশ ডলার। পুরো কেসটা হ্যান্ডেল করতে পনেরো-বিশ হাজার ডলার লেগে যাবে।

: তা লাগবে। কিন্তু আমাদের তারপরও ল ইয়ার ধরতে হবে। টাকাপয়সার সমস্যা হলে আমরা সবাই দেব। প্রয়োজনে নিউজিল্যান্ডের সমস্ত বাঙালিদের কাছে হাত পাতব।

: রাকিব, তুমি কী বলো না!

: কেন সাইদ ভাই, আমি কোনো ভুল বলেছি?

: হ্যাঁ, আজমল স্যারের এটা কোনো ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত কেস না। আজমল স্যারের এই কেসের কথা কোনো বাঙালি শুনলে টাকাপয়সা থাক দূরের কথা সবাই ছি–ছি করবে। তুমি এখানকার বাঙালি জাতটাকে তো চেন না। এরা যে কী চিজ!

রাকিব আর কথা বাড়াতে পারল না। পুলিশ অফিসার ভেতর থেকে ফিরে এলেন। হাতে একটা ডিজিটাল ক্যাসেট প্লেয়ার।

পুলিশ অফিসার চেয়ার টেনে বসে ডিজিটাল ক্যাসেট প্লেয়ারটা চালু করে দিয়ে বললেন, শুনুন।

ওরা শুনতে শুরু করল। ডিজিটাল ক্যাসেট প্লেয়ারের শব্দ বাদে রুমটায় পিন পতন নীরবতা।

ওরা কিছুক্ষণ শুনেই বুঝতে পারল, ছেলের বাবা-মা পুলিশের কাছে যে অভিযোগ করেছে, এর সঙ্গে আজমল হোসেনের স্টেটমেন্টের কোনো মিল নেই। তিনি থেমে থেমে তিন-চার বারে স্টেটমেন্টটা দিয়েছেন। স্টেটমেন্ট দেওয়ার মাঝখানে তিনি দুই-তিনবার ফুঁপিয়ে কেঁদেছেন। ¾ ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দটা স্পষ্ট।

আজমল হোসেনের কান্নার শব্দে রুমের পরিবেশটা আরও ভারী হয়ে উঠল। ওরা বুঝল, আজমল হোসেনের এই কান্না ভয়ের চেয়েও লজ্জার। কষ্টের চেয়েও গ্লানি ও যন্ত্রণার।

ক্যাসেটের প্লেয়ারটা বেজে শেষ হলে পুলিশ অফিসার জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা কি ক্যাসেটটা আবার শুনবেন?

সাইদ আহমেদ বললেন, না।

পুলিশ অফিসার ক্যাসেট প্লেয়ারটা একপাশে রেখে কী একটা প্যাড বের করলেন।

রুমের পরিবেশটা কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে রইল।

পুলিশ অফিসারটা তাদের নিয়ে যে রুমটাতে বসেছেন, সেই রুমটা বেশ ছোট। একটা টেবিল। টেবিলের চারপাশে চেয়ার। রুমের উত্তরে একটা ছোট্ট জানালা। জানালার পাশে একটা ফিজোয়া গাছ। এ জন্য রুমে আলো খুব কম আসছে। রুমের সেন্ট্রাল লাইটটা জ্বালানো।

সাইদ আহমেদ জিজ্ঞেস করলেন, অফিসার, আপনি একটু দয়া করে বলবেন, আমরা মিস্টার আজমল হোসেনের জন্য কী করতে পারি?

পুলিশ অফিসার পাল্টা জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা মিস্টার আজমল হোসেনের জন্য কী করতে চান?

সাইদ আহমেদ বললেন, আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না কী করব। এর আগে এ রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি তো।

: আপনারা ক্রিমিনাল ল ইয়ার ধরতে পারেন।

: ক্রিমিনাল ল ইয়ার...।

: হ্যাঁ, আপনাদের কি কোনো ক্রিমিনাল ল ইয়ার জানাশোনা আছে?

: না, নেই। তবে ইন্টারনেট বা ইয়েলো পেজ দেখে একজন নিতে পারব।

: এটাই ভালো। আপনারা একজন ক্রিমিনাল ল ইয়ার এনে মিস্টার আজমল হোসেনকে ছাড়িয়ে নিতে পারেন।

: তারপর?

: তারপর আর কী, পরে কেস কোর্টে উঠবে। কোর্ট যা সিদ্ধান্ত নিবে তা-ই হবে।

সাইদ আহমেদ হতাশ গলায় বললেন, ও, সমস্যা তো সেখানেই।

পুলিশ অফিসার জিজ্ঞেস করলেন, সমস্যা সেখানে মানে?

: আজমল হোসেন একজন খুব গরিব বৃদ্ধ মানুষ। তার কাছে ল ইয়ারের ফি চালানোর মতো অত টাকাপয়সা নেই।

: তাহলে তো সমস্যাই। ল ইয়ার বাদে তো মিস্টার আজমল হোসেনকে আপনারা নিতে পারবেন না।

: আর কোনো উপায় আছে?

: হ্যাঁ, আছে। আরও একটা উপায় আছে।

সাইদ আহমেদ আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কী উপায়?

পুলিশ অফিসার বললেন, আপনারা যদি সেই ছেলেটার বাবা-মাকে বুঝিয়ে তাদের দিয়ে অভিযোগটা উঠিয়ে নিতে পারেন।

সাইদ আহমেদ জাহিদ ও রাকিবের দিকে তাকিয়ে কিছুটা উৎফুল্ল হয়ে বললেন, এটা তো বেশ ভালো আইডিয়া।

: হ্যাঁ, তাহলে কেস আর কোর্টে উঠবে না। এখানেই নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।

: বেশ, তাহলে আমরা ওটাই করি।

: কিন্তু ওখানেও একটু সমস্যা আছে।

: কী সমস্যা?

: ছেলের বাবা-মার সঙ্গে আপনারা যোগাযোগ করতে গেলে তারা যদি আপনাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেন, তাহলে আজমল হোসেনের সঙ্গে আপনাদেরকেও জেলে যেতে হবে।

: সেটা কী রকম?

: নির্ভর করবে তাদের অভিযোগের ওপরে।

সাইদ আহমেদ মলিন হেসে বললেন, অফিসার, আমরা সেভাবেই সামলে যাব। এ ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায়ও নেই।

পুলিশ অফিসার বললেন, সবচেয়ে ভালো হয় আপনারা যদি আগে ফোন করে যান। ফোন করলেই তাদের হাবভাব বুঝতে পারবেন।

সাইদ ভাই বললেন, ঠিকই বলেছেন, আমরা ফোন করেই যাব। থ্যাংক ইউ অফিসার, রিয়েলি থ্যাংক ইউ।

পুলিশ অফিসার মৃদু হাসলেন। কিছু বললেন না।

জাহিদ অনেকক্ষণ পর কথা বলল। সে বোঝানোর ভঙ্গিতে বলল, অফিসার, মিস্টার আজমল হোসেন খুব ভালো মানুষ। তিনি বাংলাদেশে খুব সম্মানী লোক ছিলেন। কলেজে শিক্ষকতা পেশায় ছিলেন। তিনি সরাসরি আমার শিক্ষক ছিলেন। তাকে আমি চিনি সেই কবে থেকে। তিনি এমনটা করতেই পারেন না।

পুলিশ অফিসার বললেন, আমারও তাই বুঝতে পেরেছি। কিন্তু কী করব, আইন! তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তাও আবার খুব খারাপ অভিযোগ। আমরা তো আইনের বাইরে যেতে পারি না। উই আর ডুয়িং আওয়ার ডিউটি।

সাইদ আহমেদ কথাটা টেনে নিয়ে বললেন, আজমল হোসেন খুব সহজ সরল মানুষ। তিনি বাংলাদেশ ছাড়ার সময় আট বছরের একটা ছেলে রেখে এসেছেন। সেই ছেলের বয়স এখন চৌদ্দ বছর। কিন্তু তিনি এত ভুলো মনের যে ভার মনে এখনো আট বছরের ছেলের চেহারাটাই ভাসে। তাই তিনি আট বছরের কোনো বাচ্চা ছেলে দেখলেই নিজের ছেলের কথা মনে করে আদর করতে যান। পিতৃস্নেহ দিতে চান।

পুলিশ অফিসার বললেন, যাই হোক, অভিযোগটা তো এ জন্যই উঠেছে। আর মিস্টার আজমল হোসেন যে ভুলো মনের তা আমরা গতকালই টের পেয়েছি। তিনি নিজের মোবাইল নম্বর বলতে পারেননি। বাসার নম্বরও না। তার কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই যে তার ডিটেলস খুঁজে পাব। পরে তার ওয়ালেটে দুটো ব্যাংক কার্ড পাই। সেই ব্যাংক কার্ডে সূত্র ধরে ব্যাংকে ফোন করে আজ ভার বাসার ঠিকানা পাই। আমরা প্রথমে ধরে নিয়েছিলাম, তিনি হয়তো ইচ্ছে করে ফোন নম্বর বা বাসার নম্বর বলছেন না। পরে বুঝতে পারি যে তিনি ভুলো মনের।

সাইদ আহমেদ ঈষৎ হেসে বললেন, তিনি সত্যি খুব ভুলো মনের। দীর্ঘদিন কলেজে পড়িয়েছেন তো। একজন মানুষ দীর্ঘদিন ছাত্র-ছাত্রী পড়ালে যা হয়, সাইকোলজিক্যাল সমস্যায় ভোগেন। সবকিছু ভুলে যান। তার সেই সমস্যাটাই হয়েছে। তিনি হেস্টিংসে আপেল অরচার্ডে কাজ করতে এসেছেন। তার এই ভুলো মনের জন্য কোনো অরচার্ডে দুই দিনের বেশি কাজ টিকিয়ে রাখতে পারেন না। এ জন্য বলা যায়, তিনি একরকম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। (ক্রমশ)

মহিবুল আলম: গোল্ড কোস্ট, কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: <[email protected]>

ধারাবাহিক এ উপন্যাসের আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন