ব্যস্ততা আর ভালোবাসায় উন্নয়ন মেলা

শোভাযাত্রা
শোভাযাত্রা

আয়োজনের চাঞ্চল্যই যেন আজ উন্নয়ন মেলার বিজ্ঞাপন। সবাই ব্যস্ত। দূতাবাসের কর্মকর্তা, স্কুলের শিক্ষক দৌড়াচ্ছেন। যার যার কাজ সেই সেই দেখছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের সামলাতে গভীর মনোযোগ দিচ্ছেন। পুরস্কারগুলো গোছগাছ করার জন্যও প্রচুর হিমশিম খেতে হচ্ছে। এরই মধ্যে পড়ে গেলাম আমি। অডিটোরিয়ামে কেবলই ঢুকেছি। বিশাল এক জায়গা। স্টলের বিক্রয়কর্মীদের ভরা মৌসুম বুঝি!

শুরুতেই ছিল শোভাযাত্রা। দেশের সবকিছু দেখে সাধারণ মানুষ খুশি। ২০১৪ সালের পর এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণ। আছে দারিদ্র্যের হার ২২ দশমিক ৪ শতাংশে হ্রাস, মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৬০২ মার্কিন ডলারে উন্নীতকরণ, ৩২ বিলিয়ন ডলারের ওপর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন শুরু ইত্যাদি। ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকেরা ব্যানার নিয়ে প্রদক্ষিণ করেছে স্কুল মাঠ। এই সুর এই গানই বর্ণাঢ্য এই যাত্রার মধ্য দিয়ে উচ্চকিত।

রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান তখন সামনে বসা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল। গভীর ভালোবাসা তার দেশের জন্য। বললেন, দেশের ধারাবাহিক উন্নয়ন তুলে ধরার জন্য উন্নয়ন মেলার আয়োজন করা হয়েছে। হ্যাঁ, আজকের আয়োজন দূতাবাসের উদ্যোগে। আর বরাবরের মতোই স্কুল এমন কর্মকাণ্ডে সাহায্য করে যাচ্ছে। শিক্ষকেরা অনুঘটকের ভূমিকা রাখছেন।

পুরস্কার বিতরণী
পুরস্কার বিতরণী

রাষ্ট্রদূত ইমরান শোভাযাত্রা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এই বার্তা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ও পদ্মা সেতু নির্মাণের মতো কর্মোদ্যোগের খবরটি সরকারি আমলা নয় বরং একজন সাংস্কৃতিক কান্ডারির মতো অধিকতর প্রাঞ্জল করে বলেন। চতুর্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলার সংগতি রেখেই এই মেলা। তার হাত নাড়াচাড়া, উচ্চারণ, মুখের অভিব্যক্তির মধ্য দিয়ে উন্নয়নের অভিযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ দেখতে পাচ্ছিলাম।

বঙ্গবন্ধু পরিষদ আবুধাবির সভাপতি ইফতেখার হোসেন বাবুল। ফাঁকে কথা তার সঙ্গে। তিনি আজকের উন্নয়ন মেলাকে মাইলফলক হিসেবে বর্ণনা করেন। দেশে শেখ হাসিনার মতো সৎ ও সাহসী নেতৃত্বের প্রয়োজন। দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, দেশ এমন যোগ্য নেতৃত্বই চায়। তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যাকে জাতীয় সংসদে পুনর্বার নির্বাচিত করার আহ্বান জানান।

একই সারিতে বসা বাংলাদেশ সমিতির সভাপতি প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেন। তার কৃতজ্ঞতার প্রকাশ। বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রবাস থেকে গর্ববোধ করছি। তিনি সরকারের লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রবাসী হিসেবে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। দেশ আরও এগিয়ে যাবে, এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। দেশ পরিচালনায় সরকারকে অভিনন্দন জানান।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

মেলায় উন্নয়নের একটি প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয়। এর মধ্য দিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গঠনে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ সোজা কথা নয়! কৃষকদের জন্য কৃষি কার্ড ও ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলা কিংবা বিনা জামানতে বর্গাচাষিদের ঋণ প্রদানই কি সহজ ব্যাপার! একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, আশ্রয়ণ প্রকল্প, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, কমিউনিটি ক্লিনিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, বিনিয়োগ উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণের ওপরে এতটা আন্তরিক হওয়া কেবল একটি জনবান্ধব সরকারের পক্ষেই সম্ভব।

শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচির মুখস্থ বয়ানে না গিয়ে অধ্যাপক ড. হাবিবুল হক খন্দকার বলেন ভিন্নভাবে ভিন্ন কথা। যায়েদ ভার্সিটিতে বাঙালি এক ছেলে শিক্ষকতা করেন, তার শিক্ষার পটভূমি এই বাংলাদেশর স্কুল। বলেন, এও দেশের উন্নয়ন। তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি উন্নয়ন আমাদের আলোড়িত করে, অন্যদিকে এই সন্তান নতুনদের জন্য হয়ে ওঠেন অনুপ্রেরণা।

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এ দেশের সন্তানেরা ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতার রক্ত সূর্য। এ দেশ আজ ধাবমান সামনের দিকে বিপুল গতিতে। কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, অর্থনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষা বিজ্ঞান প্রযুক্তি, সাহিত্য শিল্পকলায় এই সরকার সাফল্যের স্বর্ণ চূড়া স্পর্শ করেছে। বাংলাদেশ সড়ক, রেল সেতু, সমুদ্র বিজয় থেকে শুরু করে পদ্মা সেতু, বিনা মূল্যে বই বিতরণ, কৃষিঋণ, আমদানি, রপ্তানি, দারিদ্র্য বিমোচন, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, নারীর ক্ষমতায়নে অসমান্তরাল সাফল্য দেখিয়েছে।

ছোটদের আনন্দ-উল্লাস
ছোটদের আনন্দ-উল্লাস

বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুলের অধ্যক্ষ মীর আনিসুল হাসান ব্যস্ত সময় পার করেন। অনুষ্ঠান যে তারই স্কুল চত্বরে। তিনি বলেন, সারা দুনিয়ায় ঘটে যাওয়া অভূতপূর্ব উন্নয়নের পাশাপাশি বাংলাদেশও এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে। দেশ একটি আধুনিক সভ্য মানবিক ভূমি নির্মাণের স্বপ্ন দেখে আজ। তীব্র স্রোতস্বিনী নদীর মতো ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছে যাওয়া তার লক্ষ্য।

মহিলা সমিতির সভাপতি জাকিয়া হাসনাত ইমরান। বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশ চালাচ্ছেন। তাঁরই হাতে আজকের উন্নয়ন। এ গর্ব নারীর, এ অহংকার মায়ের।

ছবি সাঁটানো হয়েছে। উন্নয়নের চিত্র। ছবিতে বাংলাদেশ জীবন্ত হয়ে উঠেছে।

মেলায় দূতাবাসের স্টল
মেলায় দূতাবাসের স্টল

নিউইয়র্কে সফরের প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমডিজি পুরস্কার নিচ্ছেন। সাউথ সাউথ পুরস্কার। দারিদ্র্য দূরীকরণে প্রশংসার স্মারক। অন্য জায়গায়, কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী। সাব মেরিন কেবল দেখা যাচ্ছে। সমুদ্র পথে যোগাযোগ। আছে বাংলাদেশ টেক্সটাইলের কর্মকাণ্ড। প্রধানমন্ত্রী আইপিএস পুরস্কার—ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করছেন। পদ্মাসেতুর মূল অংশ নির্মাণের শুভ উদ্বোধনের দৃশ্য। অন্য একটি ছবিতে, পদ্মাসেতুর সর্বশেষ চিত্রটি

মঞ্চের সামনে দেয়াল ধরে এগিয়ে গেছে সে চিত্রমালা। ছাত্র-ছাত্রীরা নতুন বছরে বই নিচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী সেসব বিতরণ করছেন খোলা এক মাঠে। ছোটরা আমার বাংলা বই ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছে। আনন্দময় শৈশব। টেবিলের ওপর লাইটে বিদ্যুৎ সংযোগ, ছোটরা প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। ঢাকার হাতির ঝিল। পাশে অট্টালিকা। রাস্তা চলে গেছে।

দেখা যাচ্ছে ইলিশের ঢিবি। রূপালি সম্পদ। অপূর্ব দৃশ্য! পাট গাছ দাঁড়িয়ে। কৃষক কাটছেন কাস্তে দিয়ে। জাগের পর ধুয়ে রোদ্দুরে শুকিয়ে গাঁট বাঁধার জন্য আয়োজন চলছে। পরিবেশ রক্ষায় পরিষ্কার অভিযানের চিত্র। দেখা যায় বৃক্ষরোপণ অভিযান চলছে।

এরপর রোহিঙ্গা শিবির দর্শন। প্রধানমন্ত্রী শরণার্থীদের পাশে আছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন। মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল। বাইরে নোঙর করা জাহাজ। ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের হাইওয়ে। দেখা যাচ্ছে নোভো থিয়েটার। বাংলা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ। ডিজিটাল বাংলাদেশের চিত্র।

মিলনায়তনে উপস্থিতি
মিলনায়তনে উপস্থিতি

মেলায় স্টল সংখ্যা পাঁচ। বাংলাদেশ দূতাবাস, মহিলা সমিতি, ইসলামিয়া স্কুল, জনতা ব্যাংক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ। তারিখটা ছিল ৪ অক্টোবর। বৃহস্পতিবার। দিনব্যাপী ছিল সে আয়োজন। হরেক রকম পিঠা নিয়ে বসেছেন নারীরা। এই-ই বাঙালির ঐতিহ্য। ছোটরা দেখছে, খাচ্ছে, পরিচিত হচ্ছে শেকড়ের সঙ্গে। এটা বিশাল অর্জন। বাইরেও ছিল একটি স্টল।' প্রাণ' সে প্রাণের নাম।

আয়োজনে ছোটরা নৃত্য পরিবেশন করে। ছিল ফারলুনা হকের নাটক। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন পর্যায়ক্রমে ড. মোকসেদ আলী ও রিয়াজুল হক। বন্ধুত্বের নবায়ন হয় কাউন্সেলর ও চ্যান্সারি প্রধান শহীদুজ্জামান ফারুকীর সঙ্গে। দাঁড়িয়ে দূতাবাসের রাজনৈতিক কাউন্সেলর ইকবাল হাসান খান। শুভেচ্ছা বিনিময় হয় আমাদের। শ্রম বিষয়ক কাউন্সেলর আরমানউল্লা চৌধুরী বসা পাশে। চোখে চোখে ভালোবাসা প্রকাশ পায়।

শুভেচ্ছা বিনিময় হয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের শওকত আকবরের সঙ্গে। বেলায়েত হোসেন হিরুর সঙ্গে হাত মেলাই। বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, মাকে হৃদয়ে ধারণ করি বলেই আমরা আজ উন্নয়ন মেলায়। বেলা পড়ে আসে। সবাই বেরিয়ে যাচ্ছে। ছোটদের তুলে দিতে তড়িঘড়ি ছুটছেন শিক্ষকেরা। অধ্যাপক আবু তাহের। তারা ব্যস্ত। স্কুলের সহ-অধ্যক্ষ মোকলেসুর রহমান। তারও ব্যস্ততা। আমরা চলি সামনের দিকে।