সিডনিতে বিশ্ব আর্থিক সম্মেলন

বিশ্ব আর্থিক সম্মেলনের প্রচারপত্র
বিশ্ব আর্থিক সম্মেলনের প্রচারপত্র

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে শুরু হয়েছে বিশ্ব আর্থিক সম্মেলন সিবোস ২০১৮। সিডনির আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে গতকাল সোমবার (২২ অক্টোবর) শুরু হওয়া এই সম্মেলন চলবে আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এই সম্মেলন হলো বৈশ্বিক অর্থ বাজারের সঙ্গে বিশ্বের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্টদের মেলবন্ধন। প্রতিবছর গোটা বিশ্ব থেকে বিপুলসংখ্যক ব্যবসায়িক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা যোগ দেন এই সম্মেলনে। এ বছর সম্মেলনে প্রায় ৮ হাজার ব্যবসায়িক প্রতিনিধি, সিদ্ধান্ত প্রণেতা ও বিশেষজ্ঞ যোগ দিয়েছেন।

সম্মেলনের প্রথম দিন বিভিন্ন বিষয়ে দফায় দফায় আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রদর্শনী হয় বিভিন্ন আর্থিক উদ্যোগ, পরিকল্পনা ও ধারণার। এবারের সম্মেলনে প্রায় ২০০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন বিষয়ের প্রদর্শনী করেছে। গুগল, ওরাকল ও মাইক্রোসফটের মতো শীর্ষ প্রতিষ্ঠানও যোগ দিয়েছে এ সম্মেলনে। সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশ থেকে অন্যদের সঙ্গে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান এখন সিডনিতে অবস্থান করছেন। তিনি পঞ্চমবারের মতো এ সম্মেলনে যোগদান করলেন। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে ৩৫ বছরের অভিজ্ঞ আনিস এ খান বাংলাদেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। অবদান রেখেছেন বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের নানা অগ্রযাত্রায়। গতকাল সিডনির এক হোটেলে বসে সিবোস সম্মেলন ও বাংলাদেশের ব্যাংকিং বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

বাংলাদেশের বেশির ভাগ ব্যাংকেরই ক্রেডিট রেটিং নেই

আশির দশকে যখন বাংলাদেশে বিভিন্ন বিদেশি ব্যাংক তাদের কার্যক্রম শুরু করে, তখন বিভিন্ন সময়ে সেসব কার্যক্রমের সঙ্গে আনিস এ খান জড়িত ছিলেন। তিনি বললেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করেছি। সে সুবাদে বহুবার আমার অস্ট্রেলিয়ায় আসা হয়েছে। আবার কখনো প্রশিক্ষণ নিতে আসা হতো। এর থেকেই আমার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একটা যোগসূত্র তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে বিদেশি ব্যাংকগুলোর যোগদান চোখে পড়ার মতো নয়। কারণ ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংকের যে সম্পর্ক হয় সেটা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক হতে গেলে ব্যাংক ক্রেডিট রেটিং প্রয়োজন। এই রেটিংস আন্তর্জাতিক ক্রেডিট সংস্থাগুলো দিয়ে থাকে। এই রেটিংয়ের ওপর নির্ভর করে সাধারণ ভাষায় এক ব্যাংক আরেক ব্যাংককে কটটুকু বিশ্বাস করবে। তবে বাংলাদেশে এই ধারণাটি সবেমাত্র হামাগুড়ি দিতে শুরু করেছে। হাতেগোনা কয়েকটা ব্যাংক ছাড়া বাংলাদেশের বেশির ভাগ ব্যাংকের কারওরই ক্রেডিট রেটিং নেই। এ জন্যই বাংলাদেশের ব্যাংকিংয়ে আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর তেমন কোনো সম্পর্ক দেখা যায় না। যাদের আছে তারা ব্যক্তিগতভাবে সেই সম্পর্ক তৈরি করেছে।’

সম্মেলনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন ধারণা পাওয়া

‘বিভিন্ন বিদেশি ব্যাংকের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে না গিয়ে সিবোস সম্মেলনে এলে রথ দেখা আর কলা বেচার মতো দুই কাজই একসঙ্গে হয়ে যায়। একদিকে, গোটা বিশ্বের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন নতুন ধারণা যেমন পাওয়া যায়, তেমনই বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এক ছাদের নিচে আলোচনাও করা যায়। এর সুফলটা আমরা নিজেরাই পেয়েছি। গত পাঁচ বছরে এই সম্মেলনের সুবাদে বহু আন্তর্জাতিক ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের সুদৃঢ় সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে।’

আনিস এ খান
আনিস এ খান

প্রবাসীদের রেমিট্যান্স আদান-প্রদান

‘যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংকের শাখা রয়েছে। তবে গোটা বিশ্বে এর সংখ্যা একেবারেই কম। অস্ট্রেলিয়াতে নেই। কারণ ভিন দেশে ব্যাংকিং সেবা চালু করতে যে পুঁজি আর সরকারি সহযোগিতার প্রয়োজন, বাংলাদেশের বেশির ভাগ ব্যাংকেরই সেটা দুর্বল। তবে অনেক ব্যাংকই রেমিট্যান্স আদান প্রদানের আন্তর্জাতিক মাধ্যমগুলোর সঙ্গে এক হয়ে কাজ করছে।’

বাংলাদেশের ব্যাংকিংয়ের রূপ বদলাচ্ছে দ্রুত

‘বাংলাদেশে এখন অর্থ লেনদেনের বিষয়টা সবার হাতে পৌঁছে গেছে। গ্রামগঞ্জে এর সুবিধা প্রসারে আমরা কাজ করছি। ব্যাংককে গ্রাহকসেবার মানোন্নয়নে মনোযোগী হয়ে উঠেছে প্রায় সকলেই। পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে অর্থ লেনদেনের বিষয়টিকে সহজতর করতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সুবিধা ও সহজলভ্যতা বাড়ানো হচ্ছে। সকল উদ্যোগগুলোই ফলপ্রসূ হচ্ছে।’