সবুজ মেঘের ছায়া-বারো

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

মিসেস মার্গারেট আজ একটা হুইল ওয়াকার নিয়ে এসেছিলেন। তিনি যে সব সময় হুইল ওয়াকার নিয়ে চলেন, তা নয়। তিনি এখনো যথেষ্ট স্বাবলম্বী। হুইল ওয়াকারটা তখনই আনেন, যখন তিনি কিছু একটা কেনাকাটা করেন। এতে তার আর হাতে কিছু বহন করতে হয় না।

হুইল ওয়াকারের নিচে একটা স্টিলের ঝুড়ি আছে। চৌকোনা ঝুড়ি। নাবিদ দুটি দুই লিটার দুধের কন্টেইনার ও একটা রুটি প্লাস্টিক ব্যাগে দিয়ে ঝুড়িতে সুন্দর করে রেখে দিল।

মার্গারেট কৃত্রিম দাঁত বের করে সুন্দর একটা হাসি দিয়ে চলে গেলেন। নাবিদ মার্গারেটের গমন পথের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল। এমনিই। নিজে নিজে একটু হাসলও।

নাবিদ এই দোকানটা চালাচ্ছে চার বছর ধরে। আর মার্গারেটের সঙ্গে তার পরিচয় প্রায় তিন বছর আগে। পরিচয়ের পর থেকেই বলা যায় মার্গারেট এই দোকানের স্থায়ী ক্রেতা। প্রায় প্রতিদিনই তিনি একবার না একবার দোকানে আসেন। কখনো দুপুরে, কখনো বিকেলে। তবে সকালে তিনি দোকানে কমই আসেন।

মার্গারেট দোকানে মূলত আসেন জুঁইয়ের সঙ্গে গল্প করতে। মৌনতাকে নিয়ে কাছে কোথাও বিকেলে একটু হেঁটেও আসেন। জুঁই অবশ্য মৌনতাকে মার্গারেটের সঙ্গে হাঁটতে দিতে ভয় পায়। মৌনতা যা চঞ্চল! আর মার্গারেট হলেন একজন আটাত্তর বছর বয়স্কা মহিলা। ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে গিয়ে তিনি যদি মৌনতাকে সামলাতে না পারেন? তিরাপা রোডে কত গাড়ির আসা-যাওয়া করে।

কিন্তু মৌনতা মার্গারেটের সঙ্গে হাঁটতে ভালোবাসে। ফুটপাতে পাশাপাশি হাঁটতে গিয়ে সে মার্গারেটকে কত যে প্রশ্ন করে। মার্গারেট সব সময় হাসিমুখে মৌনতার প্রতিটা প্রশ্নের জবাব দেন। আর পাশাপাশি ওরা যখন হাঁটে, তখন পেছন থেকে তাদের দুজনকে দেখতে অদ্ভুত লাগে। একজন বয়সে নুইয়ে পড়া আটাত্তর বছর বয়স্কা মহিলা। আর অন্যজন সাড়ে পাঁচ কী পৌনে ছয় বছরের বাচ্চা মেয়ে। দুজনকেই মনে হয় যেন দুই ভুবনের দুজন শিশু...!

মার্গারেটের বাসা নাবিদের দোকান থেকে খুব বেশি দূরে নয়। মাত্র দুটো স্ট্রিট পরেই, ক্যান ব্রাউন ড্রাইভে। ক্যান ব্রাউন ড্রাইভের রিটায়ারমেন্ট ভিলেজের একটা এক বেডরুমের ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টে তিনি থাকেন।

নাবিদ ও জুঁই মৌনতাকে নিয়ে বেশ কয়েকবার মার্গারেটের বাসায় গিয়েছে। বাসায় গেলে হয়তো মার্গারেট এক কাপ কফি বানিয়ে খাওয়াবেন বা কফির সঙ্গে দুটো বিস্কুট দেবেন। কিন্তু এই এক কাপ কফি বা দুটি বিস্কুট দেওয়ার মধ্যে যে তিনি আন্তরিকতা ও ভালোবাসা দেখান, তা নাবিদ বা জুঁই দুজনের কাছে অমূল্য মনে হয়।

মিসেস মার্গারেটের সঙ্গে প্রথম পরিচয় ও কথাবার্তাগুলো নাবিদের এখনো মনে আছে। বছর তিনেক আগের কথা। এক সকালে মার্গারেট একটা রুটি ও দুই লিটার দুধের একটা কন্টেইনার নিতে এসেছিলেন।

নাবিদ সেদিন কুশল বিনিময় করে জিজ্ঞেস করেছিল, গুড মর্নিং, কেমন আছেন?

মার্গারেট অপূর্ব একটা হাসি দিয়ে বলেন, গুড মর্নিং। আমি খুব ভালো আছি। তুমি কেমন আছ?

নাবিদ বলে, আমি ভালো আছি।

দোকানে কাস্টমারদের সঙ্গে এ সব আলাপ বা কুশল বিনিময় নাবিদের গতানুগতিক একটা অভ্যাস। এটা তার একটা ব্যবসার নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বলা যায়। তবে নিউজিল্যান্ডে পার্ক, দোকান, শপিংমল বা ফুটপাতে হাঁটতে গেলে একেবারে অচেনা মানুষও এভাবে কুশল বিনিময় করে। এখানকার লোকজন এটাকে একধরনের সৌজন্যতা মনে করে।

মার্গারেট রুটি ও দুধের কন্টেইনারটা কাউন্টারের সামনে রাখতে রাখতে বলেন, তুমি দোকানটা খুব সুন্দর করে সাজিয়েছ।

নাবিদ মৃদু হাসি দিয়ে বলে, থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ।

: ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম। আজ প্রথমবার তোমার দোকানে এলাম।

: হ্যাঁ, আমিও তাই ভাবছি। আপনাকে এর আগে কখনো দেখিনি।

: আচ্ছা, দোকানটা কি তোমার নিজের, নাকি তুমি এখানে শুধু এমপ্লয়ি হিসেবে কাজ কর?

: জি, আমার নিজের দোকান।

: বেশ বেশ, তোমার দোকানে আমাকে কিন্তু প্রায়ই আসতে হবে।

: তাই! এটা তো আমার জন্য সুখের খবর। আপনি এই সাবার্বে মনে হয় নতুন এসেছেন?

: হ্যাঁ। এ সাবার্বে একেবারেই নতুন।

: এই সাবার্বে কবে এসেছেন?

: এই তো, গত পরশুদিন। গোল্ডেন এজ রিটায়ারমেন্ট ভিলেজে উঠেছি। ক্যান ব্রাউন ড্রাইভে। মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিতে। হা হা হা...!

: মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি মানে! বুঝলাম না।

: রিটায়ারমেন্ট ভিলেজে মানুষ ওঠে কেন? শান্তিমতো মৃত্যুর প্রস্তুতি নিতেই তো, তাই না? হা হা হা!

নাবিদ মিসেস মার্গারেটের হাসির বিনিময়ে হাসে না। চুপ হয়ে যায়।

মার্গারেট কী ভেবে জিজ্ঞেস করেন, তুমি হাসলে না কেন? চুপ হয়ে গেলে যে?

নাবিদ এবারও চুপ। তার দোকানে কত রকমের কাস্টমার আসে। সবার সব কথার জবাব দিলে হয় না। সে গম্ভীর গলায় বলে, কথাটা কি হাসির?

: কোন কথাটা?

: মৃত্যুর কথাটা?

মার্গারেটও একটু গম্ভীর হয়ে বলেন, ইয়ংম্যান, জীবনটাকে এ বয়সেই এত সিরিয়াসলি নিচ্ছ কেন? মৃত্যুর জন্যই বা এত চিন্তিত কেন? আমার বয়স হয়েছে। রিটায়ারমেন্ট ভিলেজে না থেকে আর কোথায় থাকব? হয়তো একেবারে শেষ বয়সে অচল হয়ে গেলে আমাকে পাশের হাইকেয়ারে পাঠিয়ে দেবে।

নাবিদ জিজ্ঞেস করে, আপনার ছেলেমেয়ে নেই? ওদের কাছে তো থাকতে পারতেন?

: না, আমার কোনো ছেলেমেয়ে নেই।

: ও, সরি!

: কারও ছেলেমেয়ে না থাকলে কি তাকে সরি বলতে হয়?

: না মানে, আমি ওটা মিন করে বলিনি।

মার্গারেট জিজ্ঞেস করেন, তাহলে কোনটা মিন করে সরি বললে?

নাবিদ এবার বিব্রতবোধ করে। মনে মনে বেশ বিরক্তও হয়। বলে, ইয়ে মানে!

: মার্গারেট তখন হেসে ফেলেন। বলেন, তুমি তো দেখছি আসলে একটা আচ্ছা বোকা...? আমি তো তোমার সঙ্গে মজা করছিলাম!

নাবিদ হেসে ফেলে।

মার্গারেট জিজ্ঞেস করেন, এনিওয়ে, তুমি কোথায় থেকে এসেছ?

: কোথায় থেকে মানে?

: মানে, তোমার দেশ?

: জি, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি।

: বাংলাদেশ! যেখানে সব সময় বন্যা হয়?

: বাংলাদেশে সব সময় বন্যা হয় না। কখনো কখনো হয়।

: ও, আচ্ছা। যখন বন্যা হয়, তখন তো তোমাদের সমস্ত দেশ ডুবে যায়, তাই না? তখন তোমাদের লোকজন কোথায় থাকে? তোমাদের দেশ শুনেছি খুব নিচু। কোনো পাহাড় পর্বত কী একেবারেই নেই? কিংবা উঁচু জায়গা?

: আমাদের দেশের সমস্ত জায়গায় বন্যা হয় না। দেশের কোনো কোনো অংশে হয়। আর যেসব অংশে বন্যা হয়, সেসব অংশের লোকজন সেভাবেই বাড়িঘর বানায়। সেভাবে জীবনযাপন করে। এ ছাড়া আমাদের দেশে প্রচুর পাহাড় পর্বতও আছে।

: তাই! বলো কী! আমি তো জানতাম বন্যার সময় পুরো বাংলাদেশই পানির নিচে চলে যায়। আমি বেশ কয়েকবার তোমাদের দেশের বন্যাদুর্গতদের জন্য বিভিন্ন চ্যারিটি অর্গানাইজেশনে ডোনেশন দিয়েছি। আমার সেই ডোনেশনগুলো তাহলে গেল কোথায়?

: ওগুলো যথাস্থানেই গিয়েছে। নিউজিল্যান্ডে আমাদের বাঙালি কমিউনিটির লোকজনও এখান থেকে টাকাপয়সা তুলে বন্যাদুর্গতদের সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশে পাঠায়।

: সরি, আমি তো আবার ভুল বুঝলাম।

: না না, অসুবিধা নেই।

: আমি অবশ্য বিশ-পঁচিশ বছর আগেও বাংলাদেশ সম্বন্ধে তেমন কিছু জানতাম না। এখন বন্যার কারণে যতটুকু জানি।

: আসলে নিউজিল্যান্ডে বাঙালিদের অভিবাসন শুরু হয় বিশ-পঁচিশ বছর ধরে। এর আগে হাতেগোনা বাঙালি থাকলেও তেমন উল্লেখ করার মতো ছিল না।

: আমিও তাই বলি। আমার পেশাগত জীবনে প্রচুর ইন্ডিয়ান, শ্রীলঙ্কান, এশিয়ান, এমনকি পাকিস্তানি ক্লায়েন্ট থাকলেও কখনো কোনো বাংলাদেশি ক্লায়েন্ট পাইনি।

: আপনি কোন প্রফেশনে ছিলেন?

: আই ওয়াজ সোসাইটি গার্ল।

নাবিদ বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে, সোসাইটি গার্ল?

মার্গারেট বলেন, হ্যাঁ, ইন মাই ইয়াং এজ।

নাবিদ এবার মিসেস মার্গারেটের কথার মানে খানিকটা বুঝতে পেরেও ঠিক পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেনি। তাই আবার জিজ্ঞেস করে, মানে?

মার্গারেট পাল্টা জিজ্ঞেস করেন, তুমি কোন কথার মানে জিজ্ঞেস করছ? আই অ্যাম নট ক্লিয়ার।

: ওই যে বললেন, সোসাইটি গার্ল?

: হ্যাঁ, আমার বয়স যখন অল্প ছিল, তখন ছিলাম। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি অবশ্য পেশাটা ছাড়িনি। একটা এজেন্সি খুলি। হ্যামিল্টনে নয়, অকল্যান্ডে। সেই এজেন্সিটা আমি প্রায় বিশ বছর চালাই। আমার স্বামী আমাকে এজেন্সিতে সাহায্য করত। এই যেমন ক্লায়েন্টদের কাছে এজেন্সির গার্লদের গাড়ি করে নিয়ে যাওয়া ও নিয়ে আসা। ম্যানেজমেন্ট সাইডটা দেখা। কখনো কখনো বড় বড় বিজনেসম্যান ক্লায়েন্টদের ম্যানেজ করা। কিন্তু আমার স্বামী মারা যায় পর আমি একা এজেন্সিটা চালাতে না পেরে বিক্রি করে দিই। পরে আমার পুরোনো শহর এই হ্যামিল্টনে চলে আসি। হ্যামিল্টন ইস্টের নিক্সন স্ট্রিটে বাড়ি কিনি। ওই বাড়িতেও বেশি দিন থাকতে পারিনি। বয়স, বুঝেছ বয়স। একবার ম্যাসিভ হার্টঅ্যাটাক হয়ে গেছে। মরতে মরতে বেঁচে গেছি। তাই একা থাকার সাহস পাই না বলে গোন্ডেন এজ রিটায়ারমেন্ট ভিলেজে চলে এসেছি।

নাবিদ সেদিনের পর মার্গারেটকে এ ব্যাপারে আর কোনো প্রশ্ন করেনি। এরপরে বহুবার বহু ধরনের কথাবার্তা হয়েছে। কিন্তু নাবিদ এ প্রসঙ্গ আর কখনো টানেনি।

নাবিদ আজকাল প্রায়ই ভাবে, এ এক আজব দেশ নিউজিল্যান্ড! অবশ্য আজব বললে ভুল হবে। নিউজিল্যান্ড দেশটা একটা চমৎকার দেশ। একে তো দেশটা বিধাতার সৃষ্টি একটা স্বর্গভূমি। তার ওপর মানুষগুলোকে যেন বিধাতা নিজ হাতে বিশেষভাবে সৃষ্টি করেছেন। এখানে একজন আরেকজনকে মানুষ হিসেবেই শ্রদ্ধা করে। পেশগত প্রসঙ্গ তুলে বৈষম্যের দেয়াল সৃষ্টি করে না। এখানে কেউ কাউকে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয় না যে তিনি মন্ত্রী বা মেয়র। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি মেথর বা তিনি পতিতা বা সোসাইটি গার্ল। এখানে সবাই সমান। সব পেশাই শ্রদ্ধার। একটা আদর্শ রাষ্ট্র বা আদর্শ সমাজ গড়ে তুলতে সব পেশাকেই সমান গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।

এ ছাড়া, এখানে পতিতাবৃত্তি কোনো সমাজ বহির্ভূত ব্যবসা নয়। পতিতালয়গুলো সরকারি আইন অনুযায়ী বৈধ। ওদের আলাদা কোনো পাড়া নেই। শুধু সাধারণ অফিস-আদালত বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশেই নয়, পতিতালয়গুলো গির্জা বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পাশেও বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিউজিল্যান্ডের পার্লামেন্টে বেশ আগেই বিল পাশ করে অন্যান্য চাকরিজীবীদের মতো পতিতা বা সোসাইটি গার্লদের চাকরিজীবী বা নিয়মমাফিক পেশা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

নাবিদ জানে, স্পেশালিস্ট বাদে সাধারণ পেশাজীবীদের মধ্যে নিউজিল্যান্ডের দুটি পেশার মানুষ সবচেয়ে বেশি বেতন পান। আইন পেশার লোক ও পতিতা। আইন পেশার লোকেরা সাধারণত ঘণ্টায় বেতন এক শ দশ বা এক শ বিশ ডলার পান। অন্যদিকে পতিতাদের বেতনও সমপরিমাণ। কখনো কখনো আরও বেশি।

মার্গারেট পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন। যার কারণে তাদের কোনো ছেলেমেয়ে ছিল না। বিশ বছর স্বামীর সঙ্গে সুখের সংসার করেন। তেরো বছর আগে তার স্বামী মারা যায়। কখনো কোনো কথা উঠলে মার্গারেট তার স্বামীর কথা খুব করে বলেন। স্বামীর ভালোবাসার কথাও তিনি খুব বলেন। কখনো মার্গারেটের বাসায় গেলে দেখা যায়, ছোট্ট লাউঞ্জের প্রতিটা দেয়ালে তাদের যুগল ছবি বা স্বামীর হাসি হাসি ছবি সুন্দর সুন্দর ফ্রেমে সাজিয়ে রাখা।

মার্গারেট চলে যাওয়ার পর প্রায় এক ঘণ্টা ধরে দোকানে কোনো কাস্টমার নেই। সোমবারে এমনটাই হয়। সকালের নয়টা-দশটার পর এমনিতেই কাস্টমার থাকে না। তার ওপর উইকএন্ড শেষে সোমবারে কাস্টমার যেন আরও কমে যায়।

নাবিদ কাউন্টারের কাছে হেলান দিয়ে একটা টাইম ম্যাগাজিনের পাতা উল্টাচ্ছিল। ঠিক তখনই জুঁই ফোন দিল। ফোন দিয়েই বলল, শুনছ, বাসায় তো আর থাকা যাচ্ছে?

নাবিদ জিজ্ঞেস করল, কেন, কী হয়েছে?

জুঁই বলল, আরে বলো না, পচা গন্ধে বাসার দরজা খোলা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে কোথাও কিছু একটা মরে পচে আছে। তুমি সকালে বের হওয়ার সময় পাওনি?

নাবিদ বলল, না, আমি তো সকালে বের হওয়ার সময় তেমন কোনো গন্ধ পাইনি।

: আমিও মৌনতা স্কুলে দেওয়ার সময় গন্ধটা তেমন পাইনি। বাসায় ফিরে গন্ধটা পেতে শুরু করি। প্রথমে ভেবেছিলাম সামান্য ইঁদুর পচা গন্ধ। কিন্তু বেলা যত বাড়ছে, গন্ধটা যেন ততই বাড়ছে। মনে হয় না, কোনো ইঁদুর পচা গন্ধ।

: ঠিক আছে, আমি বাসায় এসে একটা ব্যবস্থা করব। তুমি কি তিনটা-সোয়া তিনটার দিকেই দোকানে আসবে?

: এ ছাড়া উপায় কী? মৌনতাকে স্কুলে দিয়েছি। কিন্তু আমি এতক্ষণ বাসায় কীভাবে থাকব? গন্ধে তো আমার বমি আসছে।

: তাহলে তুমি একটা কাজ কর। তুমি এখন দোকানে চলে আস।

জুঁই বলল, হুম, তাই ভালো হবে। আমি এখন দোকানে চলে আসি। তুমি বাসায় এসে এর একটা বিহিত কর।

নাবিদ বলল, আচ্ছা। (ক্রমশ)

মহিবুল আলম: গোল্ড কোস্ট, কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: <[email protected]>