ঝুমকা কাহিনি

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

তোমরা মনুষ্য জাতি বড়ই বিচিত্র। তোমরা যে কতটা বিচিত্র, তাহা আমার মতো এই প্রাণহীন জড়পদার্থ যদি বুঝিয়া থাকে তাহা হইলে অন্য প্রাণীকুলের অবস্থা একবার চিন্তা করিয়া দেখ। সে যাহাই হউক অন্য প্রাণীকুলের কথা বাদ। আজকে শুধু আমার কথাই বলিতে বসিয়াছি। তোমার দুদণ্ড সময় থাকিলে বসিয়া শোনো। আমি এক জোড়া ঝুমকা। নিছক ঝুমকা যাকে বলে কর্ণের অলংকার। আমি আবার তোমাদের স্ত্রী প্রজাতিদের কাছেই বেশি পছন্দের। আমার বিশেষ কোনো আকার বা আকৃতি নাই। একেকজন আমাকে একেকভাবে তৈরি করে। আবার তোমরা সেই আকৃতি দেখিয়া আকৃষ্ট হইয়া আমাদিগকে ক্রয় কর। আমাদের সামাজিক মূল্য আবার নির্ভর করে আমরা কী দিয়া তৈরি তাহার ওপর। সামাজিক মূল্যের বিবেচনায় আমার অবস্থান খুব একটা খারাপ না। কারণ আমি স্বর্ণের তৈরি। বুঝিতেই পারিতেছ কী অবস্থা। তোমরা হয়তো ভাবিতেছ, ইস ঝুমকার আবার আত্মকথা। কে শুনিবে শুনি তোমার আত্মকথা। তাহা ঠিক, এই ব্যস্ততার যুগে চারদিকে এত কথামালার ছড়াছড়ি, কার সময় আছে এই প্রাণহীন জড় পদার্থের আত্মকথা শুনিবার। আমিতো বলিয়াছি, যদি তোমার সময় থাকে তবে শুনিতে পার।

আমি ঝুমকা। শুধুই এক জোড়া ঝুমকা। প্রায় বছরাধিককাল আগে উত্তরবঙ্গের কুড়িগ্রাম জেলার কোনো এক প্রত্যন্ত গ্রামে একজন বয়োজ্যেষ্ঠ স্বর্ণকারের হাতে আমার জন্ম। আমার জন্মদাতা একজন সহজ সরল সাদামাঠা ধরনের স্বর্ণকার। যাহার কাছে জীবন একটা গৃহপালিত মুরগির মতো। দিন শেষে সর্বদাই নিজের ঠিকানায় ফেরা। সে যাহাই হউক, তাহার সুনিপুণ হাতের স্পর্শে আমি হইয়া উঠিলাম অসাধারণ রূপবতী এক জোড়া ঝুমকা। নিজের রূপের কথা ঢাকঢোল পিটাইয়া বলিতে নাই, কিন্তু আমি বলিলাম। কারণ আমি আসলেই অনেক রূপবতী।

সবারই জীবনের একটা উদ্দেশ্য ও সার্থকতা থাকে। বিশেষ করিয়া মনুষ্য প্রজাতি যদি তাহাদের জীবনে সার্থকতা খুঁজিয়া না পায় তবে বোধ করি তাহাদের জীবন বেদনা বিধুর। তোমরা কী ভাবিতেছ? জড় পদার্থের আবার সার্থকতা থাকিবে নাকি? ওমা, বল কী? থাকিবে না? অবশ্যই থাকিবে। যেমন আমার জীবনের সার্থকতা আমি বুঝিয়া লইয়াছি, কোনো এক সুন্দরী রমণীর কর্ণ যুগলে নিজেকে আত্মসমর্পণ। তোমাদের রমণীদের তো আবার কত ধরনের কর্ণ রহিয়াছে। যেমন শুনিয়াছি কুলো কর্ণ, পদ্ম কর্ণ, হস্তী কর্ণ, মাধুকা কর্ণ, আরও কত কী। তোমরা পার বটে। আমার আবার ওসবে কোনো আকর্ষণ নাই। একটা হইলেই হইল। তবে সার্থকতার কথাই যদি বলি এমন কারও কর্ণ যুগলে যদি স্থান পাই যাহাতে অন্য মনুষ্য কুলও বারংবার তাহার দিকে তাকাইতে গিয়া যদি আমার দিকে তাকিয়ে দেখে নেহাত মন্দ হয় না।

জন্মের পরপরই আমি অস্থির হইতে থাকি কখন আমি শোভা পাইব এমন কারও কর্ণ যুগলে। অবশেষে আমার অপেক্ষার বুঝি অবসান হইল। আমার জন্মের সময় আরও কয়েকজন জন্ম নিল। আমরা সৌন্দর্যমণ্ডিত অলংকারের বাক্স বন্দী হইয়া ঢাকার পথে চলিলাম। পরিশেষে আমার জায়গা হইল কোথায় জান? ঢাকার আসাদ গেটের আড়ং-এর অলংকারের কাচঘেরা সুদৃশ্য বাক্সে। আমাকে পরম যত্নে ঝুলাইয়া দেওয়া হইল। আমাকে এমনভাবে রাখা হইল যেন আমি সবার চোখে পড়ি সর্বাগ্রে। আমি আগেই বলিয়াছি পরমা সুন্দরী না হইলেও আমি রূপবতী ছিলাম। কারণ আমাকে শোকেসে রাখিবা মাত্রই আমাকে দেখিবার জন্য একরূপ হুড়োহুড়ি লাগিয়া যায়। অনেকেই আমাকে সযতনে আগলাইয়া ধরিয়া তাহাদের কর্ণের সহিত স্পর্শ করিয়া আয়নাতে দেখিতে লাগিল। ভালোই লাগিতেছিল। আবার যন্ত্রণাও পাইতেছিলাম। এক দিন, দুই দিন এইভাবে প্রায় সপ্তাহ খানিক কাটিয়া গেল। প্রথম দিকে নিজের রূপের জন্য কিছুটা অহংকারী থাকিলেও যখন পর্যন্ত না কেও আমাকে কিনিয়া লইতেছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি স্বস্তি পাইতেছিলাম না। তোমাদের একটা গানে আছে না, অনেক বড় সুন্দরীও বর পায় না। আমার সেই অবস্থা। অনেক সুন্দর ঝুমকা হওয়া সত্ত্বেও কোনো এক জোড়া কর্ণ আমাকে এখনো তাহাদের অলংকার হিসেবে ধারণ করিল না। কী জানি কী কারণ।

এইভাবে আরও কতগুলো দিন কাটিয়া গেল। কী জানি হয়তো আসিল সেই শুভ দিন। এক দম্পতি আসিলেন আমাকে দেখিতে। মেয়েটি আমাকে দেখিয়াই এমন চোখ বড় বড় করিয়া তাকাইতে লাগিলেন, আমি ভাবিলাম কী ব্যাপার। পরে বুঝিলাম, আমাকে তাহার খুবই পছন্দ হইয়াছে। আমাকে লইয়া বারংবার নাড়িয়াচাড়িয়া দেখিতে লাগিলেন। তাহার সুদৃশ্য কর্ণ যুগলের সাথে কয়েকবার লাগাইয়া আয়নাতে পর্যবেক্ষণ করিলেন। আমি নিজেও তাহার কর্ণখানি ভালো করিয়া পর্যবেক্ষণ করিয়া লইলাম। আর যাহাই হউক হস্তী কর্ণ তো নহে (অবশ্য আমি জানিই না হস্তী কর্ণ আবার দেখিতে কেমন হয়)। গত কয় দিনে তো কত রকমের কর্ণই পর্যবেক্ষণ করিলাম। এই মানুষটির কর্ণদ্বয় হইলে মন্দ নয়। অনেক আগ্রহ নিয়া আমাকে দেখিয়া আবার রাখিয়া দিলেন। তাহার সাথের মানুষটি খুব একটা আগ্রহ লইয়া আমার দিকে তাকাইলেন না। ইহা অবশ্য নতুন কিছু নহে। আড়ংয়ের অলংকারের এই পাশটায় যত মানুষ আসিয়াছে তাহাদের মধ্যে পুরুষ মানুষগুলোর আমাদের প্রতি খুব একটা আকর্ষণ দেখি নাই। এইখানে আসিলেই তাহাদের দেখিয়া মনে হয় যেন তাহাদিগকে পিপীলিকায় কামড় দিয়াছে। তাই তাহারা চলিয়া যাইবার জন্য অস্থির হইয়া যান। অথবা তাহাদের বউ যদি কোনো একটা অলংকার লইয়া নাড়াচাড়া করিতে থাকেন, জামাই বেচারা অন্যদিকে মুখ করিয়া থাকেন। চোখে মুখে যেন দুনিয়ার বিরক্তি। আমার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে এমন অনেক ঘটিয়াছে। কিন্তু এই দম্পতির ক্ষেত্রে একটু ব্যতিক্রম লক্ষ্য করিলাম। মেয়েটি আমাকে নাড়িয়াচাড়িয়া দেখিতেছিল। ছেলেটিও খুব আগ্রহ লইয়া তাকাইতেছিল আমার দিকে। আমার মনে এক ধরনের আসার সঞ্চার হইলেও পরক্ষণেই তাহা দমিয়া গেল। যখন দেখিলাম তাহারা একজন আরেকজনের দিকে তাকাইয়া কিছু একটা ভাব বিনিময় করিয়া আমাকে রাখিয়া চলিয়া গেলেন।

কিন্তু যাহাই বল জহরি যেমন জহরত চিনিতে ভুল করে না, আমার কেন জানি মনে হইতে লাগিল ওই মেয়েটির কর্ণ যুগলেই আমি হয়তো শেষমেশ ঝুলিয়া পরিব। সেদিন আর তাহারা আমাকে ক্রয় করিলেন না। আমি কিঞ্চিৎ ব্যথিত হইলাম। কয়েক দিন পরে ভদ্রমহিলা আবারও আসিলেন কিন্তু এইবার একা। এইবারে আমি আর আশা জাগাইতে পারিলাম না। আমার অভিজ্ঞতায় যেটা বলে মেয়েরা যতই অলংকার পছন্দ করুক জামাই যদি সাথে না থাকে তাহারা উহা কিনিবেন না। দুই–একটা ব্যতিক্রম থাকিতে পারে, তবে তাহার সংখ্যা নেহাত কম। যাহাই হউক তিনি আমাকে আবারও তাহার কর্ণ যুগল স্পর্শ করাইলেন। আমিও আনন্দিত হইলাম। কিন্তু অনেক নাড়িয়াচাড়িয়া আমাকে দেখিয়া তিনি যখন আমাকে যথাস্থানে রাখিয়া দিলেন আমি পুনরায় আশাহত হইলাম।

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

তবে কাহারোই কষ্টের দিন বেশি দীর্ঘায়িত হয় না। আমার হইল না। একদিন দেখিলাম হন্তদন্ত হইয়া সেই ভদ্রলোক দরজা দিয়া ঢুকিলেন। কোনো দিকে না তাকাইয়া তিনি সোজা আমার কাছে চলিয়া আসিলেন। আসিয়াই আমাকে হাতে লইয়া নাড়িয়াচাড়িয়া দেখিলেন এবং আমাকে কিনিয়া লইবার ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন। আমি ভালোই অবাক হইলাম। কী ব্যাপার? যেদিন দুজনে আসিলেন সেদিন নিলেন না। আবার ভদ্রমহিলাও কিনিলেন না। উনি কেন আমাকে একাকী লইতে আসিলেন? পরে মনে পড়িল কী জানি হয়তো বউকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য। তোমাদের রমণীকুল নাকি সারপ্রাইজড হইতে অনেক পছন্দ করে। আমি আবেগে উদ্বেলিত হইয়া চলিলাম তাহার সাথে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় পৌঁছিয়া তিনি আমাকে তাহার ব্যাকপ্যাকে লুকাইয়া রাখিলেন। কালো ব্যাগপ্যাকের অন্ধকার গহ্বরে আমি কিছুটা ভয়ে কোকড়াইতে লাগিলাম আর বাহির হইবার জন্য অপেক্ষা করিতে লাগিলাম, কখন আসিবে আমার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। তিনি সহাস্য বদনে আমাকে ব্যাগ থেকে বাহির করিয়া নিজের হস্তে কখন তাহার প্রিয়তমা স্ত্রীর কর্ণে পরিধান করাইবেন। তখনই আমার ঝুমকা জীবন সার্থক হইবে।

কিন্তু বিধি বাম। রাত ক্রমাগত বাড়িতে থাকিল। সবাই ঘুমের আয়োজনে ব্যস্ত। ভাবিলাম এই বুঝি সেই সময়। চুপি চুপি বাসার অন্য লোকচক্ষুর অন্তরালে আমাকে বাহির করিয়া হয়তো নিজেই স্ত্রীর কর্ণলতিকায় পরাইয়া দেবেন। না তাহা হইল না। তাহারা পরম নিশ্চিন্তে ঘুমাইয়া পড়িলেন। আমি তাহাদের মৃদুমন্দ নাসিকা গর্জনের আওয়াজ পাইতে লাগিলাম।

এভাবেই দুই দিন বিগত হইয়া গেল। আমি এই রহস্যর কোনো কুলকিনারা করিতে পারিলাম না। মাথায় নানা রকম দুশ্চিন্তা আসিয়া ভর করিতে লাগিল। আচ্ছা উনি কী আমাকে অন্য কাহারও জন্য ক্রয় করিয়াছেন? নাহ, তাহা কী করিয়া হয়? গত দুই দিনে বুঝিলাম, ওনারা আসলে দেশে বেড়াইতে আসিয়াছেন। এখন তাহাদের ফিরিয়া যাইবার সময়। তাহারা গোছানো লইয়া ব্যতিব্যস্ত। একটা প্রশ্ন আমার মাথায় রহিয়াই গেল। আচ্ছা ভদ্রমহিলা কী একবারও ওনার ব্যাকপ্যাকটিতে হাত দিবেন না? একবার ভুলেও যদি ব্যাগটা উনি খুলিতেন তাহা হইলেতো আমাকে অনাদিকাল এই অন্ধকার জগতে থাকিতে হইত না। কী জানি বাবা এটাও একটা রহস্য।

ওনাদের সব গোছগাছ শেষ দেখিয়া আমি মোটামুটি আশা ছাড়িয়া দিলাম। তাহারা কানাডা ফিরিয়া যাইবার আগে আর আমার আলোর মুখ দেখিবার উপায় নাই। তবে বিমানবন্দরে পৌঁছিয়া একটু আশা জাগিল। এ ব্যাপারে অবশ্য বিমানবন্দরের বাংলাদেশ বিমানের নিরাপত্তা রক্ষীদের আমার পক্ষ থেকে সাধুবাদ জানাইতেই হয়। সিকিউরিটি বেল্টে যখন সব জিনিস পত্র রাখিতে বলা হইল, একজন অফিসার ওনাদেরকে বারবার বুঝাইয়া দিলেন কাহারও ব্যাগে যদি কোনো অলংকার থাকে তবে সব বাহির কোরিয়া বেল্টে রাখিতে হইবে। এই কথা শ্রবণ করিয়া যাত্রী মহোদয়গণ যারপরনাই বিস্মিত হইলেন এবং পরস্পর কানাকানি করিতে লাগিলেন। আমি আনন্দে আত্মহারা হইয়া বলিতে লাগিলাম, বাছাধন এবার কোথায় যায় দেখি। ওরে বাপরে, ভদ্রলোক এমনি কঠিন, ব্যাগ হইতে সবকিছু বাহির করিলেন শুধু আমাকে মোড়ানো প্যাকেটটা ছাড়া। ভাবিতে লাগিলাম তাহাতে কী? স্ক্যানে তো ধরা পড়িবই। তখন? কিন্তু না, স্ক্যানে ধরা পড়িলেও আমাকে বাহির করিবার কোনো রকম নির্দেশ দ্বিতীয় অফিসার দিলেন না। অনেকেই বলাবলি করিতেছিলেন, দুনিয়ার কোনো এয়ারপোর্টেই এই সিকিউরিটি বেল্টে গয়না বাহির করিয়া রাখিতে বলে না। বিচিত্র বড়ই বিচিত্র।

এরপর আর কী। ওনারা আমাকে লইয়া কানাডা পৌছাইলেন। যথারীতি তাহাদের দৈনন্দিন কাজ শুরু হইল। অন্ধকারেই কাটিয়া গেল আমার কয়েকটি মাস। বাড়িতে সর্বমোট চারজন মানুষ অথচ একটা কাকপক্ষীও জানিল না যে ওনার ব্যাগপ্যাকে আমি কাঁদিয়া কাঁদিয়া মরিতেছি। উনি আমাকে প্রতিদিন কাঁধে করিয়া বহন করিয়া লইয়া যাইতেছেন আবার ফিরিয়া আসিতেছেন। আমি ওনার পিঠ আর ল্যাপটপের চিপায় পড়িয়া দিন কাটাইতে লাগিলাম। কোনো দিন নিজেও আমাকে খুলিয়া দেখিলেন না। কী অদ্ভুত আচরণ। এক সময় ভাবিতে লাগিলাম উনি হয়তো আমার কথা বিলকুল ভুলিয়াই গেছেন। বলাই বাহুল্য এরই মধ্যে তাহাদের বিবাহ বার্ষিকীও পার হইয়া গেল। আমি মোটামুটি ত্যক্ত বিরক্ত হইয়া এক ধরনের অশীতিপর জীবন যাপন করিতে লাগিলাম।

জানুয়ারি মাস আসিল। বাইরে হিম হিম ঠান্ডা। কোনো এক রাতে বাসায় ভদ্রলোক তার ছেলে আর মেয়ের সঙ্গে কী সব ফিসফাস করিয়া আলাপ করিলেন। ছেলেমেয়েরা হাসিয়া গড়াগড়ি যাইতে লাগিল। আমি কিছুই বুঝিলাম না। এই লিভিং রুমে বসিয়া একাধিকবার ওনার স্ত্রী ওনাকে বলিয়াছেন, কী এত ভালোবাসাবাসির কথা বল, কবিতা লেখ, কিন্তু আড়ংয়ের ঝুমকা জোড়া এত পছন্দ করিলাম কিনিয়াতো দিলা না। ভদ্রলোক তখনই বেসুরো গলায় শুনাইতেন, মোর প্রিয়া হবে এসো রানি দেব খোঁপায় তারার ফুল, কর্ণে দোলাব চৈতি তিথির তৃতীয়া চাঁদেরও দুল। আমিতো গান শুনিয়া অবাক, বউয়ের কানে পরাইবে চাঁদের দুল? হা–হা–হা, তোমাদের কবিরা পারেনও বটে। যাহা হউক, অবশেষে আমাকে উনি সযতনে ও খুবই সন্তর্পণে ব্যাগপ্যাক হইতে বাহির করিলেন। রাখিলেন নিজেদের ডাইনিং টেবিলে। আমার পাশে কয়েকটা মোমবাতি, একটা কেক আর একগুচ্ছ তাজা লাল গোলাপ। আমি এক নিমেষে আমার গত চার মাসের অন্ধকারে থাকার ও নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাতের কথা বেমালুম ভুলিয়া গেলাম। এরপর ছেলেমেয়েরা তাহাদের মাকে ডাকিয়া আনিল। সবাই সমস্বরে বলিয়া উঠিল, হ্যাপি বার্থডে। আমি বুঝিলাম আসল কাহিনি। মেয়েটি আড়ংয়ের প্যাকেটে মোড়ানো আমাকে দেখিয়া মোটামুটি মূর্ছা যাইবার জোগাড়। বলিতে লাগিল ইহা কী করিয়া সম্ভব। আনন্দের আতিশয্যে আমারও একই অবস্থা। তিনি খুবই সযতনে আমাকে তাহার দুইটি সুদৃশ্য কর্ণ লতিকায় পরিধান করিলেন। আয়নাতে বারবার দেখিলেন। তাহার চোখে মুখে আমি যেই আনন্দের আভা দেখিতে পাইলাম উহার মূল্য অপরিসীম। আমি নিশ্চিত উনি আমাকে বাংলাদেশে পাইলে হয়তো এতটা আনন্দিত হইতেন না। খুব অবাক হইয়া ভাবিতে লাগিলাম, বাপরে বাপ্, ভদ্রলোকের ধৈর্য। এই জন্যেই শুরুতেই বলিয়াছি, তোমরা মনুষ্য প্রজাতি বড়ই বিচিত্র। যাহাই হউক আমার ঝুমকা জীবন সার্থক হইল।
...

নুরুল হুদা পলাশ: সাস্কাতুন, সাস্কাচেওয়ান, কানাডা। ইমেইল: <khanmnh9@gmail. com>