বাঁধন তুমি কেমন আছ!

এম হাসান রহমান বাঁধন
এম হাসান রহমান বাঁধন

বাঁধন তুমি কেমন আছ—এ প্রশ্নের উত্তর হয়তো কারও জানা নেই। কারণ সেই বাঁধন এ মুহূর্তে আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার অনেক স্মৃতি আমাদের তাড়া করে ফেরে। কবির ভাষায়—চলে গেলে আমারও অধিক কিছু থেকে যাবে আমার না-থাকা জুড়ে। গত বছর ২৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস রাজ্যের উচিটা শহরে বাংলাদেশি তরুণ মেধাবী ছাত্র এম হাসান রহমান বাঁধনকে কে বা কারা গুলি করে হত্যা করেছিল। পরদিন সকালে প্রকৃতি ঘেরা শান্ত-নিরিবিলি আবাসিক এলাকা ইস্ট পেইজেন্টের ৭৮০০ ব্লকের একটি বাড়ির সামনে রাস্তায় একটি মিনি ট্রাকের ট্রাংকে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় এসে স্বপ্নপূরণের খুব কাছে গিয়েও না ফেরার দেশে চলে যাওয়াকে হাজারো প্রবাসী বাঙালিদের উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে দেয়।

এক বছর পর গতকাল (২৫ নভেম্বর ২০১৮) সকালে ঘুম থেকে উঠে বুকের ভেতর চাপা ক্ষোভের আগুন দাউ-দাউ করে জ্বলছিল। এক বছর পেরিয়ে গেল। আমেরিকার মাটিতে আধুনিক ও উন্নত তদন্তকারী দল এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাদের তদন্ত এখনো চালিয়ে যাচ্ছে—স্থানীয় টিভি চ্যানেল-১২–এর খবর দেখে আস্থার জায়গাটা আরও শক্ত হলো। অন্তত সুষ্ঠু বিচার হবে। টিভি রিমোট বন্ধ করে বাঁধনের ছোটবেলার বন্ধু আবদুল্লাহ নঈমকে কল দিলাম। ফোনের ওপার থেকে নঈম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, আজ তো এক বছর পার করলাম। জানি না বন্ধু বাঁধনের সঙ্গে পরপারে দেখা হবে কি না। তবে তার শূন্যতা আমাকে কাঁদায়। এইতো সেদিন উত্তরা মডেল স্কুল, এরপর ঢাকা বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে দুজনই তিন মাস আগে-পরে স্কলারশিপ ‍নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাই।

পঞ্চম শ্রেণি ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলেন বাঁধন। এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ। এরপর বন্ধুদের সঙ্গে ঠাট্টা করে স্রেফ নিজের যোগ্যতা যাচাই করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রে পড়ালেখার যোগ্যতার যুদ্ধে উত্তীর্ণ হয়ে স্কলারশিপ নিয়ে ২০১১ সালে বাংলাদেশ ছাড়েন।

বাঁধন ক্যানসাসের উচিটা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যারো স্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ার সুযোগ পান। উচিটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে অ্যারো স্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আন্ডার গ্রেড শেষ করে ক্যানসাস ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স শেষ করার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। বাড়তি আয়ের জন্য রাত জেগে পিৎজা ডেলিভারির কাজ নিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে আমেরিকার বিমানবাহিনীর ভর্তি পরীক্ষায় বাঁধন ভালো নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। আর এ পথ ধরে নাসার মহাকাশচারী হওয়ার যার স্বপ্ন ছিল তাঁর। কিন্তু নরঘাতকের বুলেট বাঁধনের স্বপ্ন ভেঙে দিল।

বাঁধনের সহপাঠী উচিটা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তানিয়া জানান, বাঁধন একজন ভালো মানুষ ছিলেন। যেকোনো পরিস্থিতি সহজে সামাল দেওয়ার এক অদ্ভুত ক্যারিশমা তাঁর ছিল। এ মৃত্যুর সুষ্ঠু বিচার নিয়ে আমরাও শঙ্কিত।

আইন অন্ধ কিন্তু বিচার স্বচ্ছ। আমেরিকার এ প্রতিষ্ঠিত আইনি সত্যকে বিশ্বাস করে ক্যানসাস রাজ্যের উচিটা শহরের আমরা বাঙালি সমাজ বাঁধনের এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের প্রত্যাশায় রয়েছি।