জাতীয় নির্বাচন ও তরুণদের পছন্দ-অপছন্দ

আমার মতো প্রজন্মের সব তরুণদের মনেই হয়তো এই একই প্রশ্ন। বাংলাদেশের রাজনীতির কতটুক গুণগত পরিবর্তন হয়েছে, তার একটা দৃশ্যত প্রমাণ পাওয়া যায়, রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়নের চিত্র দেখলেই। সব দলই তরুণ ভোটারদের ভোট ব্যাংক নিয়ে সোচ্চার অথচ তরুণদের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে কোনো দলকেই মনোনয়নের ব্যাপারে অতটা সচেতন অবস্থায় দেখছি না।

তরুণেরা যা যা পছন্দ করেন না—

আদর্শ ও নৈতিকতা বিবর্জিত রাজনীতিবিদ।
দুর্নীতিবাজ ও সামাজিকভাবে কলুষিত ব্যক্তি।
মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের মতাদর্শ ব্যক্তি।
অতি রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট ও প্রতিহিংসামূলক মনোভাব।
কূট সমালোচনা।
পরিবারতান্ত্রিকতা।

এ রকম আরও অনেক কিছুই রয়েছে অপছন্দের তালিকায়। বিষয়গুলোর দিকে কোনো দলই সেভাবে সুনজর দেয়নি।

বর্তমান সরকারের অনেক অবদান রয়েছে আমাদের আর্থসামাজিক উনন্নয়নে। দেশের অবকাঠামো গতিশীল করা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ আরও বেশ কিছু জাতীয় ইস্যুতেও তাদের ভূমিকা প্রশংসনীয়। পক্ষান্তরে দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামোর একটি অন্যতম চালিকা শক্তি হলো ব্যাংক। সেই ব্যাংকিং খাতকে নিয়ে এই সরকারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। আইনের শাসন ও রাজনৈতিক সহনশীলতার মারাত্মক অভাব দেখেছি বিগত সময়ে। ক্ষমতা গ্রহণের শুরুর দিকে এই সরকারের প্রতি তরুণদের বেশ সমর্থন থাকলেও শেষ সময়ে এসে বেশ কিছু ইস্যুতে ব্যাপক একটি মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনেও তাদের আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ।

অন্যদিকে বিরোধী দলগুলোর সবচেয়ে প্রশংসনীয় ভূমিকা হলো রাজনৈতিক নির্লিপ্ততা। এটি একদিকে যেমন নির্বিঘ্নে সরকারি সমস্ত উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়িত করার সহায়ক ছিল। বিগত আমলের বিরোধী দল মানেই শুধু বিরোধ সৃষ্টি করা। হরতাল অরাজকতা তৈরি করা। এই রাজনৈতিক চর্চা থেকে বেরিয়ে এসে দেশকে একটি নতুন মাত্রা দিয়েছে। আবার আমরা এও দেখেছি তারা নিজেদের দলীয় অভিযোগ আর নালিশ নিয়েই বেশি তৎপর ছিল। জনসম্পৃক্ত দাবিগুলো নিয়ে কখনোই তেমন সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করেনি। জাতীয় কোনো দাবি আদায়ের আন্দোলনে তাদের সেভাবে কোনো বলিষ্ঠ ভূমিকা নিতে দেখিনি। যুদ্ধাপরাধীর বিষয়েও নিজেদের অবস্থান জাতির সামনে পরিষ্কার করেনি। এই নির্বাচনেও তাদের লক্ষ্য নিয়ে জাতি রহস্যে নিমজ্জিত।

এসব বিষয়গুলো মাথায় রেখেই তরুণদের সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। আগামী দিনে কে হবে তাদের যোগ্য প্রতিনিধি। আমি বিশ্বাস করি তরুণেরা পরিবর্তনের দিকেই বেশি আগ্রহী। আর সেই পরিবর্তন মানেই কি সরকারের পরিবর্তন! নাকি সরকারের বিগত দিনের ভুল ত্রুটি শুধরে নিয়ে নতুন অঙ্গীকারের পরিবর্তন?

আমি আশা করি তরুণ সমাজকে কেউ বিভ্রান্ত করতে পারবে না। তারা সঠিক সময়ে, সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে প্রস্তুত।
...

রাকিবুল রাশু: থাইল্যান্ডে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশি।