টিয়ে রাজকন্যার আখ্যান-তিন

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

ব্যাপারটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল কিনা রাকিব ঠিক বুঝতে পারল না। এই বাড়াবাড়িটা বছর খানেক আগে হলে রাকিব করত না। এমনকি কয়েক মাস আগেও এমন বাড়াবাড়ি করতে দ্বিধা করত। কিন্তু আজ নদীর জন্য করল। আজ সকালেই রাকিব হ্যামিল্টনের ডাউন টাউন প্লাজায় গিয়ে মাইকেল হিল জুয়েলার্স থেকে আট শ ডলার দিয়ে নয় ক্যারেট সোনার ওপর এম্যারল্ড ও ডায়মন্ডের হাত, কান ও গলার একটা সেট কিনে নিয়ে এল। সে এম্যারল্ডের এই গয়নার সেটটা মূলত নদীর টিয়ে রঙের শাড়িটা সঙ্গে মানিয়ে পরার জন্য কিনে নিয়ে এসেছে। টিয়ে রঙের শাড়ির সঙ্গে স্ফটিক সবুজ এম্যারল্ডের গয়নার সেটটা যা মানাবে!

কিন্তু নদী ব্যাপারটা কীভাবে নেবে সেটাই আসল। রাকিব নদীর চোখের ভাষা বুঝতে পারলেও তার ভেতর যে একটা অজানা শঙ্কা, সেটা এখনো যায়নি। অনেকটা ঘর পোড়া গরুর সিঁদুরে মেঘ দেখে যে ভয়, ঠিক তেমনটাই।

রাকিব বাসায় ফিরেছে বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেছে। এদিকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল প্রায় হয়ে এসেছে। আজ শনিবার। সাধারণত শনিবার এলেই রাকিব নদীকে নিয়ে কত কী যে পরিকল্পনা করে!

আজও রাকিবের পরিকল্পনা ছিল। গত সপ্তাহেই রাকিব নদীকে বলে রেখেছে, আজ তাকে নিয়ে ম্যাটাম্যাটা শহরের কাছে হবিটন মুভি সেটে যাবে। ম্যাটাম্যাটা শহরটা হ্যামিল্টন থেকে খুব বেশি দূরে নয়। মাত্র ষাট কিলোমিটার। অফিসের কাজে রাকিব দুবার ম্যাটাম্যাটা গিয়েছিল। ম্যাটাম্যাটা শহরটা মূলত কৃষকদের শহর। যদিও জেলা শহর, কিন্তু শহরটা আয়তনে খুবই ছোট। শহরের এপাশ-ওপাশ দশ মিনিটেই ঘুরে আসা যায়।

ম্যাটাম্যাটা শহরের কাছেই বিখ্যাত ট্রিলজি মুভি লর্ড অব দ্য রিং ও হবিটন মুভির বিশাল-বিস্তৃত সেট নির্মাণ করা হয়েছিল। কৃত্রিমভাবে হবিটনদের বসবাসের জন্য অনেকগুলো বাড়িও তৈরি করা হয়েছিল। ট্রিলজি মুভি লর্ড অব দ্য রিং ও হবিটনের ট্রিলজির শুটিং কবেই শেষ হয়ে গেছে। লর্ড অব দ্য রিং মুভির জন্য নিউজিল্যান্ডের পরিচালক স্যার পিটার জ্যাকসন হলিউডে অনেকগুলো ক্যাটাগরিতে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছেন। পরে আর সেই সব মুভির সেট ভেঙে ফেলা হয়নি। হবিটন হাউস নামে খ্যাত সেসব মুভির সেটগুলো পর্যটকদের জন্য রাখা হয়েছে। শুধু নিউজিল্যান্ডের নয়, পৃথিবীর বহু দেশের পর্যটক নিউজিল্যান্ডে ভ্রমণে এলে সেই মুভি সেটগুলো টিকিট কেটে দেখতে যান।

কিন্তু নদী গতরাতে মন খারাপ করা সংবাদটা দেয়। তার নাবিদ ভাইয়া ও জুঁই ভাবি মৌনতাকে নিয়ে অকল্যান্ডের রেইনবো এন্ডে যাবেন। মৌনতা নাকি গত কয়েক দিন ধরে জেদ ধরে বসে আছে। কথা শুধু মৌনতার জেদ নিয়ে নয়। তারা মৌনতাকে নিয়ে দুপুর অবধি রেইনবো এন্ডে কাটাবেন। দুপুরের পর তারা অকল্যান্ডে একটা বাঙালির বিয়েতে অংশগ্রহণ করবেন। রাত অবধি বিয়েতে থাকতে হবে। তাই নদীকে দোকানে বসতে হবে। এ জন্য সে একদিনের বেতনও বেশি পাবে। নদী এখনো তার নাবিদ ভাইয়ের দোকানে শনিবারে কাজ শুরু করেনি। শুধুমাত্র রোববারেই কাজ করে।

গতরাতে নদীর কাছ থেকে এই খবরটা পাওয়ার পর থেকেই রাকিবের মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। নদীকে সপ্তাহের ছয় দিন রাকিব খুব একটা কাছে পায় না। আর যাও পায়, তা কালেভদ্রে। শুধু শনিবারেই পায়। তাই শনিবারের এই দিনটায় রাকিব নদীর জন্য প্রচণ্ডভাবে অপেক্ষায় থাকে। শনিবার সকাল হলেই তার ভেতর একটা আবেগ জড়িয়ে ধরে। বারবার ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায়। ভাবে, আহা, কখন নদী আসবে?

রাকিব এখনো ব্যালকনিতেই দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতে এখন বরাবরের মতো কফি কাপ নেই। তার যে কফির তৃষ্ণা পায়নি, তা নয়। বিকেলের এ সময়টায় কফি হাতে ব্যালকনিতে দাঁড়ানোর আনন্দই আলাদা। রাকিব এই ছোট ছোট আনন্দগুলো খুব উপভোগ করে।

আজ নদী আসবে না বলে রাকিব সকালে ঘুম থেকে একটু দেরি করে ওঠে। হাতমুখ ধুয়ে প্রায় দশটার দিকে সকালের নাশতা করে। তারপর দুপুর অবধি বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে একটা কবিতা নিয়ে ঘষামাজা করে। শেষপর্যন্ত কবিতার কিছুই হয়নি। দুপুরে হঠাৎ করেই তার মাইকেল হিল জুয়েলার্সে যাওয়ার চিন্তাটা মাথায় আসে।

গত এক সপ্তাহ ধরেই রাকিবের মাথায় নদীর টিয়ে রঙের শাড়ির বিষয়টা কিলবিল করছিল। টিয়ে রঙের শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে এক সেট গয়নার কথা ভাবছিল। আজ হ্যামিল্টনের ডাউন টাউন প্লাজায় মাইকেল হিল জুয়েলার্সে ঢোকা মাত্রই ডিসপ্লেতে রাখা এম্যারল্ডের গয়নার সেটটা তার চোখে পড়ে যায়। দাম একটু বেশি। নদীর জন্য আট শ ডলার দিয়ে গয়না কিনবে, এটা রাকিব মোটেও চিন্তা করেনি। ভেবেছিল, দেড় শ-দুই শ ডলারে মধ্যে একটা গয়নার সেট কিনবে। কিন্তু টিয়ে রঙের শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে স্ফটিক সবুজ পাথর...! রাকিব আট শ ডলার দিয়ে গয়নার সেটটা কিনতে দ্বিধা করেনি।

কিন্তু এখন গয়নার সেটটা কিনে এনে বাসায় এসে অস্বস্তির মধ্যে পড়ে গেছে। নদী হাসিখুশি ও সরল প্রকৃতির। প্রাণ খুলে খিল খিল করে হাসতে জানে। কিন্তু রাকিব সেই নদীর মুখেই শুনেছে, নদী যখন কঠিন হয়ে যায়, তখন নাকি সত্যিকারের কঠিন হয়ে যায়। আর নদী কখনো কারও মুখের ওপর উচিত কথা বলতে একটুও দ্বিধা করে না। সরল মেয়েদের দোষগুণ দুটোই থাকে। ওরা যখন কঠিন হয়, সেই কঠিন আর ভাঙা যায় না।

বাইরে বিকেলটা কেমন ঝিম ধরে আছে। বিকেলটার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিতেও ঝিম ধরা ভাব। রাকিবের নিজের মধ্যে সেই ঝিম ধরা ভাবটা এসে বসত গেড়েছে। বিকেলের কাচা সোনা হলুদ রোদ এসে বাসার সামনের ঘাসের লন ও ড্রাইভওয়েতে চিরল ফালি ফালি হয়ে পড়েছে। গত মঙ্গলবার থেকেই ডে-লাইট সেভিংস শুরু হয়েছে। ডে-লাইট সেভিংসের কারণে দিন এক ঘণ্টা বেড়ে গেছে। এখন সন্ধ্যা হয় প্রায় সাতটা-সোয়া সাতটার দিকে। এখন থেকে দিন ক্রমাগত বেড়েই যাবে। মধ্য গ্রীষ্মে এক সময় সন্ধ্যা হবে পৌনে দশটায়।

এখন অবশ্য বসন্ত কাল। উঠতি বসন্ত। চারদিকে বিভিন্ন রাস্তায় সাদা চেরি ও বেগুনি জাকারান্ডা ফুলে ছেয়ে গেছে। ওক গাছ ও ম্যাপল গাছে সবুজ পাতা ছেড়েছে। রাস্তার পাশের সাদা চেরি আর বেগুনি জাকারান্ডা ফুলের দিকে তো বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না। মনে হয় দৃষ্টি আপনা থেকেই নেমে আসে। প্রকৃতির এত সৌন্দর্য তা নিউজিল্যান্ড না এলে বোঝাই যেত না। একেক দেশে একেকটা ঋতুর একেক রকমের সৌন্দর্য। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের প্রত্যেকটা ঋতুরই হাজার রকমের সৌন্দর্য। যে সৌন্দর্য শুধু চোখে দেখা যায়, অনুভব করা যায়, ভালোবাসা যায়!

রাকিব ব্যালকনিতে দাঁড়িয়েই দিঘল ম্যাকফার্লেন স্ট্রিটের ম্যাপল আর ওক গাছগুলোর দিকে তাকাল। ওক গাছের পাতা শীতের রং ধারণ করার আগে সব সময়ই স্ফটিক সবুজ হয়। কিন্তু ম্যাপল গাছের পাতা চার ঋতুতে চারটা রং ধারণ করে। এখন ম্যাপল গাছের পাতার যে সবুজ কচি রং, তা যেন সবুজ কোনো তরুণীর গায়ের রঙের মতো রং। হাত দিয়ে স্পর্শ করতে ইচ্ছে করে।

রাকিবের মনে হলো, নদীর গায়ের রংটা যেন ম্যাপল গাছের এই সবুজ কচি পাতার মতো। হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে!

রাকিব ঘড়ি দেখল। বিকেল প্রায় পাঁচটা বাজে। আরও দুই ঘণ্টা তাকে নদীর জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে। নদী সাতটার সময় দোকান বন্ধ করবে। তারপর সরাসরি হ্যামিল্টন ইস্টে চলে আসবে। আজ রাতে ওরা দুজন একত্রে কারি পটে রাতের খাবার খাবে। সেদিন রাকিব যখন জাহিদকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যায়, নদী ফোন পেয়ে আসবে না বলেও পরে যখন আসে, তখন সে খেয়ে এসেছে বলেই রেস্টুরেন্টে কিছুই খায়নি।

রাকিব বুঝতে পারল না, এম্যারল্ডের গয়নার সেটটা নদীকে কারি পট রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খাওয়ার সময়ই দেবে কিনা? নাকি দোকানে গিয়ে দিয়ে আসবে? আরও দুই ঘণ্টা তার অপেক্ষা করতে ইচ্ছে করছে না।

রাকিব আবার ঘড়ি দেখল। ঘড়িতে এখনো পাঁচটাই বাজে। মিনিটের কাঁটাটা শুধুমাত্র একটু নড়েছে। রাকিব ভাবল, ধ্যাত! সময়টা যেন কিছুতেই যেতে চাচ্ছে না। মনে হচ্ছে, কলকলে ঝরনার নিচে বড় একটা পাথরের মতো সময়টা স্থির হয়ে আছে। ভিজছে শুধু ভিজছে। যেন কী অনুভূতির ভেজা কল কল, কল কল!

রাকিব আবার দিঘল ম্যাকফার্লেন স্ট্রিটের দিকে তাকাল। ম্যাকফার্লেন স্ট্রিট ধরে দু-একটা গাড়ি আসা-যাওয়া করছে। ফুটপাত ধরে এক জোড়া বৃদ্ধ দম্পতি কল কল হেসে হাত ধরে হাঁটছে। লনের পাশের ওক গাছটায় কয়েকটা চড়ুই পাখি। চড়ুই পাখিগুলো অনবরত ডাকছে কিচ কিচ, কিচ কিচ, কিচিরমিচির, কিচ কিচ। পাশেই দুটো শালিক বসে আছে। কাছে কোথাও একটা ঘুঘু ডাকছে ডুউব ডুউব, ডুউব ডুউব।

মোবাইলটা তখনই বেজে উঠল। রাকিব মনে করল, নদীর ফোন। তবে হ্যামিল্টন ডাউন টাউন প্লাজা থেকে আসার পর নদীর সঙ্গে তার একবার কথা হয়েছে। রাতে কারি পট রেস্টুরেন্টে ডিনারের কথাটা তখনই আলাপ করেছে। কিন্তু রাকিব এম্যারল্ড গয়নার সেটটা কেনার কথা একবারও বলেনি। সে সাক্ষাতে বলবে বলে ওটা চেপে গেছে। এ ছাড়া ফোনে বললে নদী আবার কী প্রতিক্রিয়া দেখায়?

রাকিব প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইলটা বের স্ক্রিনে দেখল। নদীর ফোন নয়, জাহিদের ফোন। জাহিদের ফোন পেয়ে রাকিবে যে মনে মনে একটু মনঃক্ষুণ্ন হলো, তা নয়। বরং তার ভালোই লাগল। এখন সে জাহিদের সঙ্গে কথা বলে সময়টা কাটাতে পারবে। জাহিদের সঙ্গে কথা বলতে তার বেশ ভালোই লাগে। বেশ ইতিবাচক কথা শোনা যায়।

রাকিব ফোন ধরেই জিজ্ঞেস করল, কী খবর জাহিদ?

জাহিদ বলল, খবর আর কী বলব? সেই একই খবর। পুলিশ স্টেশন থেকে এক মহিলা পুলিশ অফিসার ফোন দিয়েছিলেন। আজমল স্যারকে নাকি আগামী মঙ্গলবারে অকল্যান্ড এয়ারপোর্ট থেকে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসে ডিপোর্ট করবে।

: এই মঙ্গলবারে? বল কী?

: সরি সরি, এই যে তিন দিন পর যে মঙ্গলবার, ওটা না। এর পরের মঙ্গলবারে।

: ও আচ্ছা। কয়টার সময়?

: দুপুরে। দুটোর সময় ফ্লাইট। স্যারকে নাকি দশটার দিকেই এয়ারপোর্টে নিয়ে যাবে। ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত ঝামেলা তো, তাই।

: তুমি কি অকল্যান্ডে যাবে?

: অকল্যান্ডে কেন?

: মানে তুমি কি স্যারকে বিদায় জানাতে অকল্যান্ড এয়ারপোর্টে যাবে।

জাহিদ বলল, আমি তো অবশ্যই যাব। স্যার চলে যাচ্ছেন আর আমি যাব না? আবার কবে না কবে দেখা হয়? তুমি যাবে?

রাকিব বলল, আমি? মঙ্গলবারে তো আমার অফিস থাকে।

: একদিনের ছুটি নিলে। এয়ারপোর্টে তোমাকে দেখলে স্যারের ভালো লাগবে।

: আচ্ছা দেখি। হাতে সময় আছে তো। অফিসে আমার সার্ভিস ম্যানেজারকে ছুটির কথা বলব।

: তুমি এয়ারপোর্টে আসলে আমারও ভালো লাগবে। স্যারের বিদায় মুহূর্তে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি কিনা, জানি না!

রাকিব ফোনের এপাশে মাথা ঝাঁকাল। কিছু না বলে চুপ হয়ে গেল।

জাহিদ বলল, খবরটা শোনার পর মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে।

রাকিব বলল, স্বাভাবিক। এটাই স্বাভাবিক। তোমার কাছ থেকে স্যারের এই খবরটা শোনার পর আমারই মন খারাপ হয়ে গেল।

দুজনই কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে গেল। মোবাইল থেকে শুধু শো শো শব্দ আসছে। মনে হচ্ছে সমুদ্রের গর্জনের শব্দ। বাতাসের শব্দও হতে পারে।

জাহিদ জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা, মন খারাপ হওয়ার কথা আপাতত বাদ দাও। স্যারকে বিদায় জানাতে তুমি অকল্যান্ড এয়ারপোর্টে আস, প্লিজ।

রাকিব বলল, আচ্ছা, আমি অবশ্যই চেষ্টা করব। হাতে যেহেতু সময় আছে, মনে হয় ছুটি পেয়ে যাব। সমস্যা হচ্ছে, এখন নিউজিল্যান্ডের ওয়েদার ভালো তো। চারদিকে কনস্ট্রাকশনের কাজ জোরদার শুরু হয়েছে। আমাদেরও কাজের চাপ বেড়ে গেছে।

জাহিদ বলল, হুম।

রাকিব এমনই জিজ্ঞেস করল, তুমি এখন কোথায়? বাসায়?

: না, মন খারাপ দেখে একা একা সমুদ্রের পাড়ে বসে আছি।

: এ জন্যই ফোনের ওপাশ থেকে শো শো শব্দ শুনছি।

জাহিদ ফোনের ওপাশে শব্দ করে হেসে ফেলল। বলল, কবিদের কান। এক শ-দেড় শ কিলোমিটার দূর থেকেও সমুদ্রের গর্জন শোনে। হা হা হা।

রাকিবও এপাশে হেসে ফেলল।

জাহিদ জিজ্ঞেস করল, তুমি কী করছে?

: আমি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছি।

: কফি হাতে?

: না, এমনিই দাঁড়িয়ে আছি।

: আজ না শনিবার?

: হ্যাঁ, আজ শনিবার।

: নদী আসেনি? তোমরা না শনিবারে একত্রে কাটাও?

: নদী আজ তার নাবিদ ভাইয়ের দোকানে কাজ করছে।

: নদী শনিবারেও কাজ শুরু করেছে নাকি?

: শনিবারে কাজ শুরু করেনি। শুধু রোববারেই করে।

: তাহলে আজ যে কাজ করছে?

: নদীর নাবিদ ভাই ও ভাবি তাদের মেয়েকে নিয়ে অকল্যান্ড গেছেন। মেয়েকে রেইনবো এন্ডে নিয়ে যাবেন। পরে অকল্যান্ডে একটা বাঙালি বিয়ে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন।

: ও আচ্ছা। তাহলে তো ওরা তোমার দিনটাই মাটি করে দিল। হা হা হা!

রাকিব এবার জাহিদের হাসির বদলে হাসল না। কেন জানি হাসতে পারল না। (ক্রমশ)

মহিবুল আলম: গোল্ড কোস্ট, কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: <[email protected]>

ধারাবাহিক এ উপন্যাসের আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন: https://www.prothomalo.com/durporobash/article/1571560