নতুন প্রজন্মের বিজয় দিবস

ক্যালিফোর্নিয়ার সাক্রামেন্টোতে আড়ম্বরের সঙ্গে উদ্‌যাপিত হয় মহান বিজয় দিবস
ক্যালিফোর্নিয়ার সাক্রামেন্টোতে আড়ম্বরের সঙ্গে উদ্‌যাপিত হয় মহান বিজয় দিবস

আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। মা-বাবা বা গুরুজনদের মুখে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনেছি। শুনে শুনে একটা চিত্র মনের মাঝে এঁকেছি। একটা অনুভূতি তৈরি হয়েছে। আমাদের পরের যে প্রজন্ম, তাদের কথা ভাবুন। তারা হয়তো মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনছে আমার মতোই কারও মুখে। যিনি নিজেই সেটা স্বচক্ষে দেখেননি। তাদের মনে সেই চিত্র, সেই অনুভূতি তৈরি হওয়া কিন্তু আরও অনেক কঠিন। আর সেই প্রজন্মের বাচ্চাগুলো যারা থাকে বিদেশে, যাদের কারও কারও জন্মও হয়েছে বিদেশে, তাদের জন্য বিষয়টা আরও কঠিন। একটা বিরাট সম্ভাবনা থাকে তাদের মনে এই শেকড় উপড়ে যাওয়ার। শেকড়টা যাতে উপড়ে না যায়, দেশের জন্য বিনি সুতার টানটা যেন থাকে, সেই চেষ্টা করার দায়িত্ব আমাদের, তাদের মা বাবাদের। আর তাইতো আমরা প্রবাসী বাংলাদেশি মা–বাবারা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করি দেশের ইতিহাসগুলোকে তাদের কাছে তুলে ধরতে। সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটাতে। এই প্রচেষ্টার এক বড় অংশ হিসেবে আমরা উদ্‌যাপন করি স্বাধীনতা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি ও বিজয় দিবসের মতো মহান দিনগুলোকে।

ক্যালিফোর্নিয়ার সাক্রামেন্টোতে আড়ম্বরের সঙ্গে উদ্‌যাপিত হয় মহান বিজয় দিবস
ক্যালিফোর্নিয়ার সাক্রামেন্টোতে আড়ম্বরের সঙ্গে উদ্‌যাপিত হয় মহান বিজয় দিবস

এ বছর ক্যালিফোর্নিয়ার রাজধানী সাক্রামেন্টোতে অত্যন্ত আড়ম্বরের সঙ্গে উদ্‌যাপিত হয় মহান বিজয় দিবস। সাবা (SABAA—সাক্রামেন্টো এরিয়া বাংলাদেশি–আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন) আয়োজন করে দিনব্যাপী বিজয় উৎসব। বৃহত্তর সাক্রামেন্টো এলাকার সকল বাংলাদেশিদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে পালিত হয় মহান বিজয় দিবস। মেলা ও বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সমন্বয়ে দিনটি ছিল বর্ণিল। এই অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল প্রবাসী নতুন প্রজন্মকে দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত করা। তাদের অংশগ্রহণে প্রদর্শিত হয় ডকুমেন্টারি ‘নতুন প্রজন্মের বিজয় দিবস’। নতুন প্রজন্মের বিভিন্ন বয়সের শিশু–কিশোরেরা বিজয় দিবস নিয়ে তাদের বিভিন্ন ধরনের চিন্তাভাবনা যেমন—‘বিজয় দিবস কী? এই শব্দটি শুনলে তাদের মনে কী অনুভূতির সৃষ্টি হয়? তারা কীভাবে দিনটি উদ্‌যাপন করে?’ এই ডকুমেন্টারিতে তুলে ধরেছে। দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও তারা দেশের জন্য গভীর ভালোবাসা প্রকাশ করেছে। স্থানীয় বাংলা স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশিত দেশের গানের সঙ্গে নাচ ও কবিতা ছিল হৃদয়গ্রাহী। ছোট ছোট শিশুরা উপস্থিত দর্শকদের মন কেড়ে নিয়েছে। এ ছাড়া, স্থানীয় শিল্পীদের মন মাতানো সব গান, নাচ দর্শকদের মোহিত করেছে। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের গান শোনার সৌভাগ্যও আমাদের হয়েছে। মঞ্চস্থ হয় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি নাটিকা ‘রাত পোহাতে কত দেরি?’

ক্যালিফোর্নিয়ার সাক্রামেন্টোতে আড়ম্বরের সঙ্গে উদ্‌যাপিত হয় মহান বিজয় দিবস
ক্যালিফোর্নিয়ার সাক্রামেন্টোতে আড়ম্বরের সঙ্গে উদ্‌যাপিত হয় মহান বিজয় দিবস

বিজয় উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল বিজয় মেলা। এখানে বিভিন্ন দেশীয় খাবার যেমন খিচুড়ি, বিরিয়ানি, হরেক রকম মিষ্টি, হালিম, চটপটি, ছোলা, ভর্তা, আচার, নানা ধরনের পিঠা, পেঁয়াজি, ঝালমুড়ি ও গজাসহ আরও অনেক ধরনের খাওয়ার স্টল বসে। এ ছাড়া, ছিল বই, শাড়ি ও জামার স্টল। বিভিন্ন ধরনের খেলার স্টল। উপস্থিত সকলে দেশি খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপভোগ করেছেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

নারীরা লাল–সবুজ শাড়িতে, পুরুষেরা পাঞ্জাবিতে, এমনকি ছোট ছোট শিশুরাও লাল–সবুজে সেজে এসেছে। কারও হাতে ছোট জাতীয় পতাকা, কারও মাথায় বিজয়ের চিহ্ন।

সেদিন লাল–সবুজের পটভূমিতে আমাদের প্রাণের মেলায় মেতেছিলাম আমরা কিছু গর্বিত বাংলাদেশি। শুভ ৪৭তম জন্মদিন বাংলাদেশ, আমাদের প্রিয় জন্মভূমি।