ইন্দোনেশীয় সেলুন ও পান দোকানি

ইদ্রিসের সেলুন
ইদ্রিসের সেলুন

ইউরোপ থেকে এশিয়ার কোনো দেশে বেড়াতে গেলে সর্বপ্রথম যে কাজটা করি, তা হলো মাথার চুল ছাঁটানো। হয়তো বলবেন, কেন, ইউরোপে কি চুল ছাটানোর সেলুন নেই?

আসলে ব্যাপারটা ঠিক তা নয়। আছে। আধুনিক, মডার্ন ও উন্নতমানের অনেক সেলুন আছে জার্মানিতে। আর যারা চুল কাটেন তারা যেমন তেমন কারিগর নন। রীতিমতো কয়েক বছর চুল কাটার প্রশিক্ষণ নিতে হয়। দলিল আছে সবার। এখানে এদের কারিগর, আর্টিস্ট ইত্যাদি ইত্যাদি বলা হয়ে থাকে।

ইদ্রিসের সেলুন
ইদ্রিসের সেলুন

জার্মানিতে আমার প্রথম চুল ছাঁটানোর অভিজ্ঞতা ছিল খুবই খারাপ। সেলুনের মোটা করে সুন্দরী জার্মান নারী চুল কাটলেন আমার। কিছু সময় মেশিন দিয়ে আর কিছুক্ষণ কাঁচি দিয়ে কাটলেন। তবে চিরুনি ব্যবহার করলেন না। আর সেখানেই আমার যত সন্দেহের সৃষ্টি। চুল কাটলেন না তিনি আমার চুল ধরে টানাটানি করলেন? কিছুই বুঝতে পারলাম না। সর্বশেষ অবস্থা এতই করুণ ছিল যে কয়েক সপ্তাহ আয়নায় নিজের চেহারা পর্যন্ত দেখিনি।

ইন্দোনেশিয়ায় ঘুরতে গিয়ে পরিচয় হলো ইদ্রিসের সঙ্গে। বুকিটিংগি শহরের সেলুন দোকানি ইদ্রিস। মানুষের চুল কাটেন প্রায় এক যুগ ধরে। নিজের দোকানের পাশেই নিজের বউকে করে দিয়েছেন পানের দোকান। জামাই বউ পাশাপাশি দোকানদার। আমি বাংলাদেশের শুনতেই ইদ্রিসের বউ নুরিয়ানী ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি খাওয়ালেন। মূল্য নিতে চাইলেন না। সদা হাস্যোজ্জ্বল ইদ্রিস পরিবার।

নুরিয়ানীর পানের দোকান
নুরিয়ানীর পানের দোকান

চুল ছাঁটতে ছাঁটতে অনেক গল্প হলো আমাদের। ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ ও জার্মানির সামাজিক রাজনৈতিক কোনো বিষয়ই বাদ পড়েনি গল্পে। ইদ্রিস–নুরিয়ানীর দুই সন্তান। বড় ছেলে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে। ডিপ্লোম্যাটিক হতে চায়। ছোট ছেলে গিটারিস্ট। সারা দিন গিটার নিয়ে পড়ে থাকে। মিউজিশিয়ান হতে চায়। ছেলে দুইটাকে মানুষের মতো মানুষ করা ছাড়া ইদ্রিস ও নুরিয়ানীর আর তেমন কোনো বিশেষ চাওয়া নেই এই জীবনে। এক কথায় ইদ্রিস নুরিয়ানী সুখী দম্পতি। দুই সন্তানের একটি সুখী পরিবার।

বকর আলী কফি বিক্রেতা। রাতে মোটরসাইকেলে করে ইন্দোনেশিয়ার রাস্তায় রাস্তায় কফি বিক্রি করেন। দিনের বেলা প্রাইভেট টুরিস্ট গাইড হিসেবে কাজ করেন। বকর ভাই ভালো ইংরেজি বলতে পারেন। নিজের বিজনেস কার্ড হাতে ধরিয়ে বললেন, আগ্নেয়গিরি দেখার ট্যুরে যেতে চাইলে কল দেবেন। বকর ভাইয়ের গরম কফি খেতে খেতে নানান কল্পনা জল্পনা মনে ধরল।

বকর আলী
বকর আলী

এক যুগেরও বেশি সময় পার করে ফেললাম পরবাসে। কতবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি সব ছেড়ে চলে যাব দেশে। আপন দেশে বসবাস করব। আপন দেশে কাজকর্ম করে খাব। আপন দেশে শান্তিতে মরব। কিন্তু প্রতিবারই মনের মধ্যে প্রশ্ন জেগেছে, দেশে গিয়ে কী করব? কী খাব? কাজকর্ম পাব কি? জনসংখ্যা বহুল বাংলাদেশে যেখানে মানুষ দৈনন্দিন বিদেশ পালানোর পথ খুঁজছেন সেখানে জার্মানি ছেড়ে আপন দেশে শান্তি আছে কি?তারপরও ইন্দোনেশিয়ার ইদ্রিস পরিবার ও বকরের কাছে জীবনের কিছু অনুপ্রেরণা পেলাম।
...

নাঈম হাবিব: জার্মানি, ইমেইল: <[email protected]>