কাল সারা রাত বৃষ্টি হয়েছিল

সারা দিন নানান দরকারে চারদিকে নানাভাবে ছুটে বেড়ানো এই আমি

আর ঘর ও হেঁশেলের টুকিটাকি প্রাত্যহিক কাজে ক্রমান্বয়ে গম্ভীর হয়ে থাকা রুপা;
আবার আদি মাত্রার সারি সারি হাই এবং হ্যালোর মধ্যে ফিরে এলাম।
কেননা, বৃষ্টি আমাদের ফিরতে বাধ্য করেছিল।
কাল চক্রান্ত করা এক আকাশ কাকভেজা বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফিরেছিলাম।
কাল রুপার টিমটিমে গন্ধভরা আঁচলে মাথা মোছার সেই সব যাবতীয়-অভিজাত সৌভাগ্যটুকু
আবার আমার হয়েছিল।
রুপা তাঁর ব্যস্ত মৌলিক সময় থেকে সময় বের করে
চাল ধোয়া ইমনকল্যাণ হাতের মজুত পদ্মরাগে
আমার মাথা আর গা মুছিয়ে দিয়েছিল।
আর অনতিদূরের আরও অন্যান্য সমবেত কিংবদন্তিদের ডেকে নিয়ে এসে
আমার নিসর্গের মৃগতৃষ্ণাকে তুলনামূলকভাবে তুমুল জাগিয়ে তুলেছিল।
আমি দীর্ঘ প্রবাসী ঢঙে তার অধিক নরম মুখের দিকে
বহুক্ষণ গুঁড়ি গুঁড়ি তাকিয়ে থেকে
তার ঠোঁটের ফার্স্ট ফ্লোরে পড়ে থাকা জমকালো তিলটাকে মুষলধারে দেখছিলাম;
আর ত্রিকালের ঘরানায় বিপর্যস্ত হয়ে ইচ্ছেমতো ঢেউ ভাঙছিলাম।
রুপা আবার বহু পুরোনো হওয়া কথাকে নতুন করে খনন করে বলেছিল
‘এভাবে হ্যাংলার মতো তাকিয়ে তাকিয়ে কী দেখছ?’
আমি তাঁকে মুখস্থ করা আন্তর্জাতিক ছড়ার মতো দুই বাহুতে
প্রবল বেপরোয়াভাবে জড়িয়ে নিয়ে একটি মানত করা গভীর-পাকাপোক্ত আলিঙ্গনের মধ্যে
হৃদয়ের বাতি জ্বালিয়ে প্রতিষ্ঠা করে রেখেছিলাম।
কেননা, কাল রাতের সমস্ত আকাশ, চাঁদ, তারা
আমাদের সঙ্গে বিস্তারিতভাবে মাতাল হয়ে রাত জেগেছিল।
কাল সারা রাত বৃষ্টি হয়েছিল।
আর সেই সুবাদে—
রাতারাতি বহু কিছু ডাকাতি হওয়াকেও এক সাথে পরম-অভিন্ন-সুখে
চুপ করে মেনে নিতে হয়েছিল।
আসন ত্যাগের আগে পর্যন্ত
যথারীতি ফুল ও কাঁটার মধ্যে অচিরেই বুক পেতে দিয়ে
একে অপরকে অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ করতে হয়েছিল।
এবং এ সময় পৃথিবীর সমস্ত অন্তর্গত প্রেমিক-প্রেমিকারা
যেই সব হৃদয়ভরা লাখ-কোটি-নিযুত অপরাধ করে থাকে;
আমাদেরও এক এক করে সব কটা করতে হয়েছিল।
কেননা, কাল সারা রাত বৃষ্টি হয়েছিল।

সুব্রত সামন্ত (বুবাই) : মানামা, বাহরাইন। ইমেইল: <[email protected]>