নেদারল্যান্ডসের প্রায় এক মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ

সেমিনারে প্যানেল আলোচকেরা
সেমিনারে প্যানেল আলোচকেরা

বাংলাদেশে আলুর ফলন পরবর্তী ক্ষতি সমাধান (পটেটো ইমপ্যাক্ট ক্লাস্টার) প্রকল্পের জন্য নেদারল্যান্ডসের সরকার ও সংশ্লিষ্ট ডাচ ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি (আরভিও) ও সহযোগী ডাচ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানসমূহের কনসোর্টিয়াম যৌথভাবে বাংলাদেশের আলু চাষিদের সঙ্গে আলু উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়নে তাদের অভিজ্ঞতা ও সর্বোত্তম কৌশলসমূহ বিনিময়ের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের জন্য ৯ লাখ ইউরো বরাদ্দ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের বিষয়ে দেশটির (দ্য হেগে) বাংলাদেশ দূতাবাসে আয়োজিত বাংলাদেশের কৃষিখাত: নেদারল্যান্ডস থেকে শিক্ষণীয় শীর্ষক এক সেমিনারে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

সেমিনারে অমনিভেন্ট স্টোরেজ সলিউশনের পরিচালক এরোল ভান গ্রোয়েনেভুড, ভারব্রুগেন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা অ্যালেক্স ভারব্রুগেন, ইউরোজুটের প্রেসিডেন্ট হ্যান্স গ্রিফিয়ন, ডেলটা দেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মারটিন ভারব্রুগেন ও ভারব্রুগেন গ্রুপের ব্যবস্থাপক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। তারা কৃষিতে আরও উন্নয়নের লক্ষ্যে কীভাবে বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডসের সাফল্য ও ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিতে পারে সে সম্পর্কে তাঁদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ তুলে ধরেন।

উপস্থিতির একাংশ
উপস্থিতির একাংশ

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ডাচ পটেটো অ্যাসোসিয়েশনের পলিসি বিশেষজ্ঞ কার্স্ট ভেনিং। তিনি নেদারল্যান্ডসের ওয়াখেনিংগেন বিশ্ববিদ্যালয় দেশটির কৃষিক্ষেত্রে কীভাবে জ্ঞান বিপ্লব ঘটিয়েছে তা তুলে ধরে মন্তব্য করেন, এই খাতের উন্নয়নে জ্ঞান ও উদ্ভাবন একান্ত আবশ্যক। জ্ঞান বিপ্লবের কারণেই নেদারল্যান্ডসের কৃষকেরা অন্য উন্নত দেশের কৃষকদের থেকে জ্ঞান ও উদ্ভাবনীতে শ্রেষ্ঠত্বে এগিয়ে রয়েছেন।

এরোল ভান গ্রোয়েনেভুড বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের প্রচুর সম্ভাবনার প্রতি আলোকপাত করেন। তিনি বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে বিগত দশক ধরে তাঁর ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, উপমহাদেশের অন্য দেশের তুলনায় কৃষিতে বাংলাদেশ খুব দ্রুত উন্নতি করবে। এর মূল কারণ বাংলাদেশি জনগণের উদ্যোগী মনোভাব। এ লক্ষ্যে নতুন নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ ও প্রয়োগে বাংলাদেশকে দ্রুতগতি আনতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সেমিনারে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল, বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ডাচ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি (আরভিও) ও ডাচ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এফএমও) প্রতিনিধি, কৃষি ব্যবসায়ে জড়িত ডাচ প্রতিষ্ঠানসমূহের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং নেদারল্যান্ডসে বসবাসরত বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল ও প্যানেল আলোচকেরা
রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল ও প্যানেল আলোচকেরা

আলোচকেরা ডাচ কৃষিতে বংশানুক্রমিক যে পরিবর্তন ঘটেছে, বিশেষ করে প্রযুক্তি-নির্ভর কৃষি ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদিত পণ্যের বিপণনে যে উন্নতি সাধিত হয়েছে সে অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। প্রকৃতিগতভাবে যেহেতু দুটি দেশই বদ্বীপ ও কৃষির ওপর নির্ভরশীল, সে বিবেচনায় তাঁরা বাংলাদেশকে ডাচদের উন্নয়নের ধারা অনুসরণের পরামর্শ দেন। যথাযথ পদ্ধতিতে উৎপাদিত পণ্যের গুদামজাতকরণ, ফলন পরবর্তী বিশেষ করে বিভিন্ন শস্য, শাকসবজি-ফলমূল ইত্যাদির ফলন পরবর্তী লোকসান কমানো, বিপণন ব্যবস্থায় উদ্ভাবনী প্রয়োগ ও উন্নয়ন, পাট জাতীয় পণ্যের উন্নয়ন ও বহুমুখীকরণ, এসব বিষয়েও আলোচকেরা গুরুত্বের সঙ্গে আলোকপাত করেন।

রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ডাচ কৃষি উদ্যোক্তা, কৃষি অ্যাসোসিয়েশন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের বাংলাদেশি সহকর্মী ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষিতে প্রযুক্তি-নির্ভর চাষাবাদ উন্নয়ন, উৎপাদিত পণ্যের মোড়কীকরণ, খাদ্য-পুষ্টির নিশ্চয়তা বিধান এবং সর্বোপরি দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখবে। তিনি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), বিশেষ করে এসডিজি-১ ও এসডিজি-২ অর্জনের লক্ষ্যে কৃষি উৎপাদনে ধনাত্মক বাহ্যিক ও বহুবিদ প্রয়োগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

সেমিনারের শেষ পর্যায়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য, কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে সারা পৃথিবীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরেই দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে নেদারল্যান্ডস। বিজ্ঞপ্তি