সুখ বেচনীর ঘাটে

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

বিষুদবার হাটবার। সুখ বেচনীর ঘাটের পাশে জমে সুখের হাট। মাঝিরা নৌকায় করে নিয়ে আসে সুখের জিনিসপত্র। বাহারী সব জিনিসের বাহারী সব নাম। গাঁয়ের মানুষেরা দিন শেষে তাদের বউদের জন্য সুখ কিনে বাড়ি ফেরে।

দূরদূরান্ত থেকে হাটে আসে জামাই ভুলানী চুড়ি। আহারে কী সুন্দর লাল নীল কাচের চুড়ি। সেই চুড়ির আছে গোপন সুখের গল্প। ছেলেমেয়েরা ঘুমিয়ে গেলে পরে স্বামীরা তাদের বউকে রাতের অন্ধকারে কেরোসিনের তেলে জ্বলতে থাকা নিভু নিভু আলোয় চুড়ি পরায়। তারপর বিছানায় ঝনঝন শব্দ তুলে কামুক গায়ে গা মিশিয়ে ঘুমাতে যায়। সকালে দু–একটা ভাঙা চুড়ির টুকরো বউ মনের আনন্দে তোরঙ্গতে যত্ন করে তুলে রাখে।

লেখিকা
লেখিকা

হাটে পাওয়া যায় বউ আদরী শাড়ি। বউদের আদর করে হাট থেকে কিনে আনে তাদের প্রেমিক স্বামীরা। এই সব শাড়ি দামের জন্য আটকায় না। দু আনা, তিন আনায় সুখ মেলে শাড়িতে। শাড়ির জমিনে রঙের সঙ্গে মিশে থাকে এক পরানের নিখাদ প্রেম। যখন এই শাড়ি গায়ে জড়িয়ে বউ=ঝিরা ঘাটে জল আনতে যায়, আর গাল ভরে তাদের স্বামীর বাহাদুরি গল্প করে আসে; এর চেয়ে স্বর্গীয় সুখদৃশ্য জগতে আর দুটো খুঁজে পাওয়া যায় না।

সুখ বেচনীর হাটে আরও পাওয়া যায় প্রেম সোহাগী আলতা। যুবতী মেয়েরা ঘরে বসে লুকিয়ে লুকিয়ে হাতের তালুতে, পায়ের পাতায় আলতা দিয়ে গোপনে প্রেমিক মিলনের আশায় প্রেম করতে যায় নিঝুম নিস্তব্ধ বাঁশবনের আড়ালে। সেই আলতার রং লেগে থাকে প্রেমিকের পরনের কাপড়ে, শরীরের গোপনে, গলায় আর ঘন লোমশ বুকের মাঝখানে। মনচোরা পায়েল আর প্রেম কাঙালি চুলের খোঁপা সবই এখানে কিনতে পাওয়া যায়। দূরদেশ থেকে মাঝিরা নৌকায় করে এসে মনের সুখে এসব সুখ বেঁচে যায়।

ও আমার পরাণপদ্ম, তুমি আমায় সুখ বেচনীর হাটে নিয়ে যাবে গো? শুনেছি ওখানে নাকি কালসিন্দুরী কাজলসুখী কিনতে পাওয়া যায়। ওই কাজল চোখের কোণে পড়লে নাকি আর কাঁদতে হয় না। দুই চোখের আঁধারে তার ভালোবাসাকে ধরে রাখতে পারে; এমনই গুণ নাকি ওর। আমার বউ আদরী শাড়ি, জামাই ভুলানী কাচের চুড়ি, প্রেম সোহাগী আলতা, এই সব কিছুই চাই না। শুধু আমি প্রিয় হারানোর ব্যথায় আর কাঁদতে চাই না। আমায় শুধু একটা কাজলসুখী কিনে দিয়ো। তোমার প্রেমকে আমার কাজলের কালোতে লুকিয়ে রাখব। দিয়ো এনে!

...

সপ্তদ্বীপা নীলাঞ্জনা: লুলিও, সুইডেন।