বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণে হেনড্রিকসের আগ্রহ

বৈঠকের দৃশ্য
বৈঠকের দৃশ্য

নেদারল্যান্ডসের পোলট্রি, মাছ ও চিংড়ি ইত্যাদি খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান হেনড্রিকস জেনেটিকস বাংলাদেশে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্প্রসারণের আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট থিজ হেনড্রিকস দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলালের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে বৈঠককালে এই আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন। গত সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাষ্ট্রদূত বেলাল ও বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর বক্সমির শহরে হেনড্রিকস জেনেটিকসের প্রধান কার্যালয় ও প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।

১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত হেনড্রিকস জেনেটিকস পোলট্রি সেক্টরের বিভিন্ন প্রজাতির জিনতত্ত্ব নিয়ে গবেষণাধর্মী একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানে পোলট্রি, মাংস ও মৎস্য খাতে উচ্চমানসম্পন্ন গবেষণামূলক কার্যক্রম পরিচালিত করে থাকে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি টার্কি, ডিম প্রদানকারী মুরগি (লেয়ার), স্যামন, চিংড়ি ও স্বাদু পানির মাছের প্রজনন বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিশ্বব্যাপী প্রায় তিন হাজার ৫০০ কর্মীর সমন্বয়ে পরিচালিত হেনডিকস জেনেটিকস কোম্পানির নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স ও কানাডাতে নিজস্ব ব্রিডিং সেন্টার রয়েছে।

হেনড্রিকস জেনেটিকস কোম্পানির আমন্ত্রণে রাষ্ট্রদূত ও কাউন্সেলর প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন ও বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির সহযোগিতার সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। আলোচনাকালে রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অবস্থার অগ্রগতি, ভূ-কৌশলগত অবস্থান ও ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রয়ক্ষমতার সক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা এবং এ সকল সূচককে বাংলাদেশে হেনড্রিকস জেনেটিকসের বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অন্যতম নিয়ামক হিসেবে অভিহিত করেন।

বর্তমানে বাংলাদেশে হেনড্রিকস জেনেটিকসের বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ১ দশমিক ২ থেকে ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন ইউরো। কোম্পানিটি বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ প্যারেন্টস স্টক মুরগি সরবরাহ করে। কোম্পানিটির ভাষ্যমতে বাংলাদেশের লেয়ার ব্রিডিং খাতের প্রায় ৫০ শতাংশ বাজার তাদের দখলে রয়েছে। হেনড্রিকস জেনেটিকসই হলো প্রথম কোম্পানি যারা বাংলাদেশের বাজারে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হাইব্রিড টার্কি মুরগি নিয়ে এসেছে। এ ছাড়া, অতি সম্প্রতি কোম্পানিটি বাংলাদেশের বাজারে স্যাসো কালার চিকেন ব্র্যান্ডের মুরগি সরবরাহ করা শুরু করেছে।

বৈঠক শেষে থিজ হেনড্রিকসের সঙ্গে শেখ মুহম্মদ বেলাল ও অন্যরা
বৈঠক শেষে থিজ হেনড্রিকসের সঙ্গে শেখ মুহম্মদ বেলাল ও অন্যরা

কোম্পানিটি তাদের উচ্চমানসম্পন্ন গবেষণামূলক কার্যক্রম ও উদ্ভাবনী কৌশলের মাধ্যমে বাংলাদেশের চিংড়ি শিল্পের গুণগত মানোন্নয়নে একটি প্রকল্প হাতে নেবার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে। কোম্পানিটির মূল লক্ষ্য হলো প্যাথোজেন মুক্ত ও সর্বাধুনিক জিন প্রযুক্তির মাধ্যমে চিংড়ির ব্রুড উৎপাদন করে বাংলাদেশের চিংড়ি খাতের গুণগত পরিবর্তন আনা। সম্প্রসারণমূলক ব্রিডিং কর্মসূচির মাধ্যমে দ্রুত বর্ধনশীল, উচ্চ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ও স্বল্প খাবার গ্রহণকারী চিংড়ি উৎপাদন করাও তাদের অন্যতম লক্ষ্য।

বৈঠককালে রাষ্ট্রদূত থিজ হেনড্রিকসকে জানান, আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ থেকে মৎস্য ও অ্যাকুয়াকালচার খাত সংশ্লিষ্ট একটি বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদল নেদারল্যান্ডস সফর করবেন। প্রতিনিধিদলের এ সফরকালে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি ডাচ পার্টনারদের সহযোগিতায় বাংলাদেশ দূতাবাস একটি সেমিনার আয়োজন করেছে। রাষ্ট্রদূত থিজ হেনড্রিকসকে ওই সেমিনারে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানান। থিজ হেনড্রিকস সেমিনারে যোগদানের আগ্রহ ব্যক্ত করেন। থিজ হেনড্রিকস আরও জানান, বাংলাদেশের চিংড়ি খাতের উন্নয়নকল্পে প্রতিনিধিদলের সফরকালে হেনড্রিকস জেনেটিকস কর্তৃক বাংলাদেশ ফিশ অ্যান্ড স্রিম্প ফাউন্ডেশনের (BFSS) সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন, হেনড্রিকস জেনেটিকসের বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের চিংড়ি, পোলট্রি ও অ্যাকুয়াকালচার খাতে একটি নব যুগের সূচনা হবে। এই উদ্যোগ বাংলাদেশের জনগণের ক্রমবর্ধমান প্রোটিনের চাহিদা পূরণে ব্যাপক অবদান রাখবে। বিজ্ঞপ্তি