অ্যারিজোনায় একদল বাংলাদেশির অনন্য দৃষ্টান্ত
অফিস ও পারিবারিক সময়ের বাইরে মনের টান, ভালোবাসা ও ভালো কিছু করার তাগিদে অ্যারিজোনাপ্রবাসী একদল বাংলাদেশি ২০১৩ সালে গঠন করেন ‘মুভ ফুড ব্যাংক’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এ দলের সদস্যরা স্বপ্ন দেখা মানুষ। তাঁরা চূড়ায় ওঠার মানুষ নন। এঁরা একটু অন্য রকম। তাঁরা ভাবেন, আমরা যদি না জাগি মা, কেমনে সকাল হবে? এঁরা সকাল আনার প্রত্যয়ী বলেই সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে আরেকটু উন্নততর জীবন দিতে নিজেদের নিয়োগ করেছেন সেবামূলক কাজে। প্রচারবিমুখ এই দলের সদস্যরা প্রতি মাসে এক দিন কাজ করেন রিফিউজি, হোমলেস ও গরিবদের সহায়তায়। কোনো লাভের আশা না করে তাঁরা নীরবে এ কাজ করছেন ছয় বছর ধরে।
মুভ ফুড ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরা হলেন—সবার প্রিয় শ্রদ্ধেয় মাসুদ ভাই, প্রচারবিমুখ প্রিয় মঞ্জুর, মাজহার টিপু, তুহিন ভাই, জুয়েল, আরমান, আশফাক, ইকবাল, মিঠু, শাহরিয়ার, জাফর ও আশরাফ। তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন মঞ্জুর। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে পাস করা একজন প্রকৌশলী।
গতকাল আমার সুযোগ হয়েছিল এ দলের কার্যক্রম দেখার ও জানার। তখন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের বিশাল কাজের পরিধি। প্রতি মাসে তাঁরা প্রায় ৭০-৭৫ পরিবারকে ১২ থেকে ১৪টি আইটেম খাবার প্যাকেট সরবরাহ করেন। ওই খাবার দিয়ে উপকৃত হয় প্রায় ৩০০ জন মানুষ। খাবার ছাড়াও দেওয়া হয় ডায়পার, ওয়াইপস ও বেবি কেয়ার আইটেম। এ ছাড়া স্কুলের শুরুতে দেওয়া হয় ব্যাক প্যাকসহ স্কুলের জন্য যাবতীয় উপকরণ।
আমি নিজে সারাক্ষণ সঙ্গে থেকে তাঁদের কাজের পদ্ধতি ও উপকারভোগীদের পর্যবেক্ষণ করে বেশ অবাক হয়ে গিয়েছি। সুবিধাবঞ্চিত সবাই সারিবদ্ধভাবে নাম নিবন্ধন করে বিশাল বক্সে খাবার ও অন্যান্য জিনিস নিচ্ছেন। আর সংগঠনের ছোট-বড় স্বেচ্ছাসেবকেরা হাসিমুখে সেই সব জিনিসপত্র তাঁদের গাড়িতে নিতে সহায়তা করছেন। তারপর উপকারভোগীরা হাসিমুখে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। এ সময় স্বেচ্ছাসেবকদের মুখে যে অনাবিল সুখ তৃপ্তির হাসি দেখলাম, আমি নিশ্চিত হাজার ডলার দিলেও এমন সুখ কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। স্যালুট তোমাদের সবাইকে এমন মানবিক কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করার জন্য।
আত্মতুষ্টি মানুষের সব কর্মকাণ্ডের এক প্রেরণার উৎস। কোনো কাজ করে যদি মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায় তাহলেই মানুষ ওই কাজের দিকে ধাবিত হয়। মানুষ সামাজিকভাবে এ জগৎ সংসারে আগমন করে কোনো না কোনো দায়ভার নিয়ে। অর্থাৎ বলতেই হয়, এক ধরনের আদর্শ জীবন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। পরের জন্য নিজেকেই বিলিয়ে দিতে হবে আদর্শকে প্রতিষ্ঠার জন্য, তবেই হয়তো বা মানুষকে আনন্দ দান সম্ভব। এর মাঝেই রয়েছে মানসিক প্রশান্তি। আর মহৎ কার্যাবলিই মানুষকে দিতে পারে সুখের সন্ধান।