টরন্টোয় মাতৃভাষা স্মৃতিস্তম্ভ নিয়ে আলোচনা

মতবিনিময়ে অংশগ্রহণকারীরা
মতবিনিময়ে অংশগ্রহণকারীরা

প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহযোগিতা নিয়েই কানাডার টরন্টোয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করবে অর্গানাইজেশন ফর টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ ডে মনুমেন্ট ইনক (ওটিআইএমএলডিএম ইনক)। টরন্টোয় স্থানীয় বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ তথ্য জানিয়েছেন সংস্থার নেতারা।

গত রোববার (১০ ফেব্রুয়ারি) আয়োজন করা হয় এই মতবিনিময় সভার। ডেনফোর্থের ক্যাফে ডি তাজে আয়োজিত এই সভায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর সম্পাদক ও সাংবাদিকেরা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সংস্থার প্রেসিডেন্ট ম্যাক আজাদ সবাইকে তাঁদের উপস্থিতির জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে সভার মূল উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, এখানে সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়ে একত্র করার উদ্দেশ্য হলো ওটিআইএমএলডিএম ইনকের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণকাজের অগ্রগতি সম্পর্কে অবগত করানো।

সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল রিজওয়ান রহমান তাঁর বক্তব্যে তাঁদের পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করার জন্য সিটির সঙ্গে প্রয়োজনীয় দাপ্তরিক কাজের অধিকাংশ কাজই ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু প্রয়োজন অর্থের সংস্থান। স্মৃতিস্তম্ভের নকশা নিয়ে অল্প কিছুসংখ্যক মানুষের নেতিবাচক মন্তব্য তুলে ধরে তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় স্থাপিত বিভিন্ন শহীদ মিনারের ছবি ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্থাপিত শহীদ মিনারের কিছু ছবি সবাইকে দেখান।

তিনি আরও বলেন, প্রতিটি দেশ ও শহরের বিশেষত বিদেশে থাকে কিছু নিজস্ব নিয়মকানুন। এসব দাপ্তরিক নিয়মকানুন মেনেই প্রবাসীদের বিদেশের মাটিতে নিজের দেশের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করতে হয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সাদৃশ্য থেকেও জরুরি ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য টরন্টোতে স্থায়ী একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা, যেখানে সারা বিশ্ব থেকে বিভিন্ন ভাষার মানুষ আসবেন ও ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন।

সংস্থার অর্থ সংগ্রহ (ফান্ড রাইজিং) কমিটির প্রধান ব্যারিস্টার চয়নিকা দত্ত তাঁর বক্তব্যে ইতিমধ্যে এ জন্য কত অর্থ সংগৃহীত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে অর্থ কীভাবে সংগ্রহ করা হবে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, তাঁদের অ্যাকাউন্টে এখন প্রায় ৩০ হাজার ডলার আছে। তাঁদের দরকার ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার। তাঁরা টরন্টোয় বসবাসরত ৮০ হাজার বাঙালির মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ মানুষের কাছে গেয়েছেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, যদি সুকন্যা নৃত্যাঙ্গনের খুদে শিক্ষার্থীরা তাদের হাত খরচের অর্থ জমিয়ে ৫০ ডলার করে অনুদান দিতে পারে, ডোর টু ডোর নক করা শুরু করলে ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার সংগ্রহ তেমন কঠিন কোনো কাজ হবে না। তিনি বলেন, গুটিকয়েক ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অনুদান না নিয়ে বরং সব বাংলাদেশির থেকে অল্প অল্প করে অর্থ উত্তোলন করে শহীদ মিনার স্থাপন করা হলে এতে সবার অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে।

সংস্থার কাজ ও অর্থ ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে সংস্থার কোষাধ্যক্ষ মীর্জা রহমান ও পরিচালক সৈয়দ গাফফার দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, এ ব্যাপারে তাঁদের স্বচ্ছতা শতভাগ। একাধিক পরিচালকের স্বাক্ষর ছাড়া অ্যাকাউন্ট থেকে কারও পক্ষে অর্থ উত্তোলন সম্ভব নয়। এ সময় চয়নিকা দত্ত বলেন, সংস্থার সব পরিচালকের কাছে অর্থ সংগ্রহের জন্য রসিদ বই দেওয়া আছে ও সব অনুদানের রেকর্ড রাখা হয়। রিজওয়ান রহমান বলেন, সংস্থায় যাঁরা জড়িত, তাঁরা সবাই বাংলা কমিউনিটিতে দীর্ঘ সময় ধরে জড়িত। তাঁদের সবার নিজেদের সম্মানের প্রতি শ্রদ্ধা আছে শতভাগ। এ ছাড়া, সব আয় ও ব্যয়ের হিসাব রাখা আছে। নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে পরবর্তী সময় সবকিছু বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।

সাংবাদিকদের পক্ষে সিবিএনের প্রধান সম্পাদক মাহবুবুল হক ওসমানী ওটিআইএমএলডিএম ইনকের এই উদ্যোগের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এ ছাড়া তিনি সংস্থার কাজে সহযোগিতার জন্য তাদের পত্রিকায় বিনা মূল্যে বিজ্ঞাপন প্রচারের প্রস্তাব দেন। তার প্রস্তাবকে স্বাগত ও একইভাবে সংস্থাকে সহযোগিতা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন ‘প্রবাসী কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক খুরশীদ আলম, ‘ভোরের আলো’ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক আহাদ খন্দকার এবং ‘সাপ্তাহিক বাংলা’ কাগজ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক এম আর জাহাঙ্গীর। নন্দন টেলিভিশনের পক্ষে জেড এফ খানও সংস্থার এই মহৎ কাজের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন ও সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

খুরশীদ শাম্মীর এক প্রশ্নের উত্তরে সংস্থার পক্ষে রিজওয়ান রহমান বলেন, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে শহীদ মিনার স্থাপনার কাজ শেষ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু করতে হবে ওই বছরের মার্চের মধ্যে। এই টার্গেটেই এখন কাজ এগিয়ে নিতে হবে। অনুদান সংগ্রহের জন্য তাঁদের আছে নিজস্ব ওয়েবসাইট। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, টরন্টোপ্রবাসী সবার সহযোগিতায় তাঁরা তাঁদের কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন নির্ধারিত সময়ে।

এ ছাড়া সভায় উপস্থিত ছিলেন সংস্থার পরিচালক ফয়জুল করিম, মালিহা মনসুর, সবিতা সোমানি, অরুণা হায়দার ও হাবিবুল্লাহ দুলাল।