জাপানে স্বরলিপি স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য বই

বই হাতে স্কুলের শিক্ষার্থীরা
বই হাতে স্কুলের শিক্ষার্থীরা

প্রবাসে বেড়ে ওঠা শিশু-কিশোরদের বাংলা ভাষা, বাংলার কৃষ্টি ও সংস্কৃতি শেখানো অত্যন্ত কঠিন কাজ। কারণ, স্কুলে অধিকাংশ শিশু-কিশোর সেই দেশের ভাষায় অথবা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ালেখা করে। জাপানও এর ব্যতিক্রম নয়। এখানে বাংলা শেখাতে গেলে শিশু-কিশোরেরা প্রথমেই প্রশ্ন করে, কেন তাকে বাংলা শিখতে হবে। এ দেশে তো বাংলা ভাষা লাগবে না। তার বন্ধুরা তো সবাই জাপানি ভাষায় কথা বলে ও বোঝে। বাসায় অনেক সময় বাংলায় প্রশ্ন করলে, তাদের দিক থেকে উত্তরটা আসে জাপানি ভাষায়। তার মানে, শিশু বাংলা বুঝতে পারছে, কিন্তু বাংলায় উত্তর দিতে চাচ্ছে না।

দূতাবাসের সরবরাহ করা বই
দূতাবাসের সরবরাহ করা বই

এমন প্রতিকূল পরিস্থিতে অনেক অভিভাবক চেষ্টা করেও বিফল হন। এর মধ্যে কিছু অভিভাবক আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তাঁদের সন্তানদের বাংলা ভাষা, বাংলার কৃষ্টি ও সংস্কৃতি শেখানোর জন্য। তাঁরা বাসায় সন্তানদের সঙ্গে বাংলায় কথা বলেন ও বাংলা শেখান। শত ব্যস্ততার মধ্যেও সন্তানকে নিয়ে যাচ্ছেন বাংলা নাচ-গান শেখানোর জন্য। সন্তানকে অংশগ্রহণ করাচ্ছেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। যদিও প্রচণ্ড ব্যয়বহুল ও ব্যস্ততার দেশ জাপানে বাংলা ভাষা ও বাংলার সংস্কৃতি শেখানোর মতো প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নগণ্য।

হাতে গোনা কয়েকটির মধ্যে স্বরলিপি কালচারাল একাডেমি, জাপানের স্কুল বিভাগ প্রবাসী বাংলাদেশি শিশুদের বাংলা ভাষা ও বাংলার সংস্কৃতি শেখানোর জন্য ক্ষুদ্র এক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাজধানী টোকিও শহরের পার্শ্ববর্তী কাওয়াসাকি মিউনিসিপ্যালটির পাবলিক হল ভাড়া করে পাঁচ বছর ধরে ছোট ছোট শিশুদের বাংলা ভাষা, বাংলা গান ও নাচ শিখিয়ে যাচ্ছে।

গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’ হাতে শিক্ষার্থীরা
গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’ হাতে শিক্ষার্থীরা

বর্তমানে নাচের শিক্ষক হিসেবে সংগা ঘোষ, গানের শিক্ষক হিসেবে মিতালি ঘোষ এবং বাংলার শিক্ষক হিসেবে ড. তপন পাল, বনানী পাল ও তনুশ্রী বিশ্বাস নিয়োজিত থেকে স্কুলটি এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। এ ছাড়া এর আগে নাচ শেখানোর জন্য বাবলি ইসলাম কলি ও প্রিয়াঙ্কা রায় মিত্র পিংকী; বাংলা শেখানোর জন্য কাকলি পাল, পলি সরকার, শর্মিলা পাল টুম্পা, মুনশি খ আজাদ ও রেণু আজাদ নিয়োজিত ছিলেন। তাঁরাও আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। সবার প্রচেষ্টায় স্বরলিপি স্কুলের শিক্ষার্থীরা টোকিও বৈশাখী মেলা, দুর্গাপূজা, সরস্বতীপূজা, প্রবাস প্রজন্মসহ টোকিও এলাকার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দক্ষতার সঙ্গে বাংলা ভাষায় কবিতা আবৃত্তি, প্রবন্ধ পাঠ, গান ও নাচ করছে।

স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা
স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা

স্বরলিপি স্কুলের কার্যক্রমে মুগ্ধ হয়ে জাপানের বাংলাদেশ দূতাবাস স্কুলের কার্যক্রমকে উৎসাহিত করার জন্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলা বই বিতরণে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রথম পর্যায়ে গত বছরের ৯ ডিসেম্বরে স্বরলিপি স্কুলের বছর শেষের বনভোজনে জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা উপস্থিত হয়ে স্কুলের শিক্ষার্থীদের হাতে জাপানি ভাষায় অনুবাদ করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনভিত্তিক গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’ তুলে দেন।

স্বরলিপি স্কুলের খুদে নৃত্যশিল্পীরা
স্বরলিপি স্কুলের খুদে নৃত্যশিল্পীরা

এরপর বাংলাদেশে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের শিশুশ্রেণির ছয় সেট, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির দশ সেট, দ্বিতীয় শ্রেণির এক সেট, তৃতীয় শ্রেণির এক সেট ও চতুর্থ শ্রেণির দুই সেট বই এনে স্বরলিপি স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। স্বরলিপি স্কুল কর্তৃপক্ষ গত জানুয়ারি ২৭ তারিখে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সেই বই বিতরণ করেছে।

নতুন বই পেয়ে খুবই খুশি স্কুলের শিক্ষার্থীরা। খুশি স্কুলের শিক্ষকসহ অভিভাবকেরাও। স্কুলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই প্রবাসে এ মহামূল্যবান বই প্রদান করার জন্য রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা ও দূতাবাসের প্রথম সচিব বেলাল হোসেনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।