আপ্যায়ন

ছবি: প্রথম আলো
ছবি: প্রথম আলো

শুনছ? কদর ভাই দেশে আসবেন সামনের সপ্তাহে।

জায়েদা শোয়ার ঘরের দিকে ঘুরে বললেন, কানাডার ফোনটা রেখে।

: একা, নাকি সবাই?

সায়মান জিজ্ঞাসা করলেন।

: আয়েশা সঙ্গে আসবে ভাইয়ের সঙ্গে। ওর হাজব্যান্ড আসবে না।

: খুবই আনন্দের ব্যাপার। তবে হাজব্যান্ড না, স্বামী। ইংরেজি শব্দ এ মাসে চলবে না। তোমার বড় ভাই, একটু কদর করো।

কদর ভাইয়ের নামটা নিয়ে সায়মান একটু মজা করলেন। কদর সায়মানের বন্ধু। আবার বন্ধুর একমাত্র বোন জায়েদাকে তিনি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। নিজেরা নিঃসন্তান। কিন্তু তাঁর একটা বোনের দুই মেয়ে আর আয়েশা তাঁদের অতি আদরের।

: আয়েশার বয়স কত হলো?

জায়েদা বললেন, পঁচিশ হবে, আবার চাকরি করে কী নাকি বিলুপ্ত ভাষার একটা প্রতিষ্ঠানে।

: ওরা আসার আগেই যা কিছু বাজার, আমাকে বলো। কাদের দাওয়াত দেবে, সব পরিকল্পনা আগের থেকে করো।

বলে সায়মান কাজে বেরিয়ে গেলেন।

এক সপ্তাহ পরে কদর ভাই আর আয়েশা সময়মতো পৌঁছালেন।

কদর ভাই তাঁর গুলশানের বাড়ি ভাড়া দিয়েছেন। ছোট বোনের বাড়িতে আতিথেয়তার কোনো ঘাটতি নেই।

আয়েশা খুব খুশি। ফুফু-ফুফা অনেক আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে দাওয়াত করেছেন। ফুফার বোনের দুই মেয়ে প্রতিদিন দেখা করতে আসে।

একুশে ফেব্রুয়ারির তোড়জোড় চলছে। কে শাড়ি পরবে, খালি পায়ে হাঁটতে হলে স্যান্ডেল কোন ব্যাগে ঢোকাবে, ফুল কোথা থেকে কিনবে...। আয়েশা সেই সঙ্গে যোগ দিয়েছে। আয়েশা এই মাসে কখনো আগে দেশে আসেনি।

: ফুফি, অনেক ছাত্র এদিন জীবন দিয়েছে, তাদের উদ্দেশে এ শহীদ মিনার, কিন্তু মিলাদ কোথায় হয়?

কদর বললেন, নিশ্চয়ই যে যার বাড়িতে মিলাদ দেয়।

জায়েদা বললেন, তুমি অনেক জানো দেখছি। অনেকে জীবন দিয়েছে এই ভাষার কারণে। তোমার ফুফা এই মাসে বাংলা বাক্যে অন্য ভাষার মিশ্রণ হলে, আমাকে মনে করিয়ে দেয়; ভাষাশহীদদের সম্মানে।
পরদিন খুব ভোরে জায়েদা ঘুম থেকে উঠলেন।

মাইকে গান—আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কী ভুলিতে পারি।
রাস্তার দুই পাশে কৃষ্ণচূড়া ফুটেছে। কেমন পবিত্র হাওয়া। বিকেলে আসর বাদ বাড়িতে মিলাদ মাহফিল আছে।

কদর ভাই আর সায়মান নাশতার টেবিলে এসে বসলেন। জায়েদা রান্নাঘরে চা আনতে উঠলেন। বললেন, আয়েশাকে ডেকে আনি, এখনো ঘুমাচ্ছে নিশ্চয়ই।

কদর ভাই বললেন, ডেকো না, থাক, ও তো প্রেগন্যান্ট।

সায়মান বলে উঠলেন, পোয়াতি বলো।

জায়েদা খুব জোরে হাসতে থাকল। এটা কী একটা শব্দ! বলতে হবে গর্ভবতী।

আয়েশা উঠে এসেছে। ফুফা তাকে নিয়ে মজা করেছ কেন। আমি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করি, আঞ্চলিক ভাষা সংগ্রহ আর সংরক্ষণের জন্য রীতিমতো পয়সা পাই। নাশতার টেবিলে বসে বলল, জানো, কত ভাষা পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত? আর বাংলা ভাষা বিলুপ্ত হলে আমি একটুও অবাক হব না।

জায়েদা হতবাক, বলে কী এ মেয়ে!

: বাঙালি যেমন অতিথি আপ্যায়ন করে, ভাষার মিশ্রণ দেখে মনে হয়, বিদেশি শব্দের আপ্যায়ন হচ্ছে।

আয়েশা বলতে থাকল।

সায়মান সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, একদম ঠিক বলেছিস।

বাইরে গাড়ির শব্দ শুনে জায়েদা দরজা খুলতে উঠলেন।

কদর ব্যস্ত হয়ে বললেন, তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে, তোর বোনেরা তোকে নিতে আসবে। ভুলে গিয়েছিস! আজ একুশে ...।

এ্যানা রাজ্জাক আলী: জার্মানিপ্রবাসী।