মরিশাসে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
মরিশাসের বাংলাদেশ হাইকমিশন দেশটির শিল্প ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে পালন করেছে অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ উপলক্ষে ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে হাইকমিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও অর্ধনমিতকরণ এবং বিকেলে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
দিবসের শুরুতে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার রেজিনা আহমেদ হাইকমিশন প্রাঙ্গণে সবার উপস্থিতিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও অর্ধনমিতকরণের মাধ্যমে অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের কার্যক্রম সূচনা করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মরিশাস সরকারের শিল্প ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পৃথ্বীরাজ সিং রুপণ। তিনি বাংলা ভাষার আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং বায়ান্নর ভাষাশহীদদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, মরিশাসের সমাজব্যবস্থা বহু ভাষাভাষী ও বহু সংস্কৃতির এক মিলনমেলা। মরিশাস সব সময় সব ভাষাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বিভিন্ন ভাষার গুরুত্ব উপলব্ধি করে মরিশাসে ১১টি স্পিকিং ইউনিয়ন তাদের নিজ নিজ ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চা করে যাচ্ছে। এটা সবার জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
আরও বক্তব্য দেন ভোজপুরি স্পিকিং ইউনিয়নের চেয়ারপারসন ড. সারিতা বধু। তিনি বলেন, ‘ইউনেসকো সব ভাষার গুরুত্ব উপলব্ধি করে আজকের এই দিনকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। বহু ভাষা প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে, এ বিষয়ে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে।’
হাইকমিশনার রেজিনা আহমেদ তাঁর বক্তব্যে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভের পটভূমি তুলে ধরে বলেন, ২০০০ সাল থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু কেন একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, তার ইতিহাস অনেকেরই জানা নেই। তাই বিদেশিদের এ ইতিহাস জানানো প্রয়োজন যে, এর পেছনে রয়েছে বাঙালি জাতির অত্যন্ত গৌরবদীপ্ত একটি করুণ ইতিহাস। একুশ আমাদের গর্ব। সারা বিশ্বে এর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার পেছনে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি ও সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত কার্যকর করার দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ। বাংলাদেশ সরকার সব ভাষা সংরক্ষণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ জন্য বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয় প্রবাসী বাংলাদেশি কর্তৃক ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সংবলিত নাটক মঞ্চায়নের মাধ্যমে। এ ছাড়া ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার, হিন্দি স্পিকিং ইউনিয়ন, তেলেগু স্পিকিং ইউনিয়ন, ভোজপুরী স্পিকিং ইউনিয়ন ও মরিশাসে বসবাসরত প্রবাসী ভারতীয় বাঙালিরাও উৎসাহের সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে দেশটির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত, ভারতের উপহাইকমিশনার, পোর্ট লুইসের মেয়র কার্টারবন, ডেপুটি মেয়র ও আইওএমের স্থানীয় প্রতিনিধিসহ প্রবাসী বাংলাদেশিসহ প্রায় ২০০ অতিথি উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে অংশগ্রহণকারীদের দেশীয় খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। বিজ্ঞপ্তি