নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাসের ব্যতিক্রমী আয়োজন

বক্তব্য দিচ্ছেন দিলরুবা নাসরিন
বক্তব্য দিচ্ছেন দিলরুবা নাসরিন

নেদারল্যান্ডসের বাংলাদেশ দূতাবাস ব্যতিক্রমী আয়োজন ও ভিন্ন আঙ্গিকে উদযাপন করেছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৯। এ আয়োজনে যুক্তরাজ্য, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইরান, দক্ষিণ আফ্রিকা, আফগানিস্তান, বেলারুশ, লিথুনিয়া ও রুয়ান্ডার রাষ্ট্রদূতদের সহধর্মিণী এবং উরুগুয়ের রাষ্ট্রদূত ও কয়েকজন বিশিষ্ট ডাচ নারী অধিকারকর্মী অংশগ্রহণ করেন।

দ্য হেগের অ্যারোফিট হেলথ সেন্টারের সহায়তায় ‘মেকিং দেয়ার প্রেজেন্স ফেল্ট’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি ৬ মার্চ বুধবার উদ্‌যাপন করা হয়। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলালের সহধর্মিণী ড. দিলরুবা নাসরিন।

অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে দিলরুবা নাসরিন সারা বিশ্বের নির্যাতিত ও নিপীড়িত নারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, নারীদের দুর্দশার প্রকৃত চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে তা নিরসনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্যেই নিহিত রয়েছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের সার্থকতা। এ প্রসঙ্গে তিনি এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘মঙ্গলের জন্য সমতা আনয়ন’ তুলে ধরে বলেন, ‘জেন্ডার সমতাকরণে আমরা কতটুকু অগ্রসর হয়েছি এবং আরও কত পথ আমাদের পাড়ি দিতে হবে, তার প্রতিফলন ফুটে উঠবে এ দিবস পালনের মাধ্যমে।’

নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে রোল মডেল হিসেবে তুলে ধরে দিলরুবা নাসরিন বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন শীর্ষক একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম কর্তৃক প্রকাশিত গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট, ২০১৮-এর পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি জানান, এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৮তম। এই অবস্থান যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, অস্ট্রিয়া, ক্রোয়েশিয়া, স্লোভাক রিপাবলিক, চেক রিপাবলিক, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশের থেকে উত্তম। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ তার সার্বিক জেন্ডার গ্যাপ ৭২ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। দেশের মূলধারার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণের প্রশংসা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান তুলে ধরে তিনি জানান, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশের এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও উল্লেখ করেন, মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত ১০ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন।

একই সঙ্গে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার পরিপ্রেক্ষিতে আগস্ট ২০১৭ সালের পর থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের দুর্দশার চিত্রও তিনি তুলে ধরেন। কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয়গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায় ৫২ শতাংশ নারী। এই পরিস্থিতি কক্সবাজারকে বর্তমানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ শরণার্থী শিবিরে পরিণত করেছে। দিলরুবা নাসরিন আরও জানান, শিবিরের অনেক নারী মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও স্থানীয় রাখাইন সম্প্রদায় কর্তৃক অবর্ণনীয় যৌন হয়রানির মুখোমুখি হতে হয়েছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিতির একাংশ
অনুষ্ঠানে উপস্থিতির একাংশ

নারী উন্নয়নের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে দিলরুবা নাসরিন জানান, বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় ২ কোটি ২৭ লাখ নারীকে পুরুষের মতো স্বাধীন কর্মের সুযোগ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আইনগত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ২০১৮ সালে ১৮৯টি দেশের ওপর পরিচালিত জরিপের তথ্যানুযায়ী এখনো বিশ্বের ১০৪টি দেশে সুনির্দিষ্ট চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের অধিকার আইনের মাধ্যমে বিরত করা হয়েছে। একইভাবে ৫৯টি দেশে কর্মক্ষেত্রে নারীদের যৌন হয়রানি প্রতিকারকল্পে কোনো ধরনের আইন প্রণয়ন হরা হয়নি এবং ১৮টি দেশে স্বামীরা আইনগতভাবে তাঁদের স্ত্রীকে কাজ করা থেকে বিরত রাখতে পারেন। নারীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয়ে তিনি প্রয়োজনীয় পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানান, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স ও সৌদি আরবে যেখানে নারীরা তাঁদের ভোটাধিকার যথাক্রমে ১৯১৯, ১৯৪৪ ও ২০১১ সালে আদায় করতে সক্ষম হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের নারীরা দেশের জন্মলগ্ন অর্থাৎ ১৯৭১ সাল থেকেই তা প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়েছেন।

অন্য আলোচকেরা অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নারীদের নিজেদেরই এগিয়ে আসতে এবং সমতা নিশ্চিতকরণসহ নারীদের পণ্য হিসেবে বিবেচনা করে গৃহ অভ্যন্তরে অন্তরীণ রাখার বিরুদ্ধে আরও জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। অধিকন্তু, নারীরা যদি অর্থনৈতিক সম্পত্তিতে নিজেদের অধিকার আদায় করতে সক্ষম হন, তাহলে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যকার ক্ষমতার যে সম্পর্ক তা আরও ভারসাম্যপূর্ণ হবে। উন্নত জীবিকার নিশ্চয়তা মহিলাদের দর-কষাকষির সক্ষমতাকে আরও বাড়িয়ে দেবে এবং নারীরা ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা অর্জন করবে।

অনুষ্ঠানস্থলে অ্যারোফিট স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নারীদের সুস্বাস্থ্যবিষয়ক ঘণ্টাব্যাপী একটি সেশনেরও আয়োজন করা হয়। সেশনে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীরা নারী স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রয়োজনীয় কিছু কৌশল ও প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের নির্যাতনের ওপর নির্মিত একটি ভিডিওচিত্রও প্রদর্শন করা হয়। বিজ্ঞপ্তি