আমার খোয়াব না ভাঙুক

অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী
অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী

কইলজার মধ্যে অমন ধুকপুকানি! নিশি রাইতে ওই কালিন্দীতে কার কান্দন; ছলাৎ ছলাৎ বাজে! খালি মোচড় দেয়, না চাইলেও দেয়। ভুইল্যা যাইবার চাইলে আরও দেয়!

আমি গীত বান্ধি...

‘ওরে ব্যথার বন্যা বইয়া যাইত, আমার ব্যথা মাইনসে যদি জানত...।’

পুবপাড়ায় কলিম গায়েন, খোয়াবে আহে! ‘অহনো ঘুমাস নাই মেহেরজান, ও, ও মেহেরজান...!’ চেরাগের বাত্তি জ্বলে আর নেভে। বুকের মইধ্যে চিতার আগুন কিরাম কিরাম করে! আমি ঘর লেপি, ফুল, টিয়া ময়না পাখি আঁকি, কুয়া থেইক্যা পানি তুলি। লেম্বুপাতার শরবত বানাই। দুই চোখ ভইরা তরে দেহি...কী সোন্দর মুখ! মন চায় জনম জনম দেহি। আন্ধা হইয়া থাকি! আমি আন্ধা হইয়া থাকি...।’

আর না দেহি অন্য পোড়া মুখ। আমার খোয়াব না ভাঙুক, আমার আন্ধার না কাটুক!

গায়েন তোর বুকে জায়গা অইব, আমি ঘুমামু। এক জনমের ঘুম। আমার ঘুম না ভাঙুক! ...আমার আন্ধার না কাটুক।

ওটাই ঘর। ওটাই সুখের ঠিকানা।

তয় ক্যান মন কান্দে, ক্যান!

ফকফকা চান্নিতেও ঘরের খিলে আন্ধার নামে। হোন্দা-মেন্দির বুরপারানির দিনে ময়না পাখি কইলজায় ছটফট করে। ময়না কান্দে, জনমের কান্দন! বাউরি বাতাসে নিম ফুলের ঘেরান। তয় ক্যান মন কান্দে, ক্যান!

পুবের ভিটায় মাইঝ রাতে ভূতের আছর নামে, ছমছম করে গতর। বেফানা মন! লগে আমার কেউ নাই, কুন্তা নাই। এমন তো কথা ছিল না রে ময়না। এমন তো কথা ছিল না!

উজাই খেতে নয়া পানির ঢল। জিয়লের ঝোল আর কলাপাতায় ভাত! নিশি রাইতে নোলক খোয়াব! খালি তরে দেহি...তরে দেহি! সোনামুখী নাইয়র, পিতলের আয়নায় চান্দের আলো, বড়ই সোন্দর!

শাদির রাইতে সোহাগী নাকফুল চেরাগের বাত্তিতে কেমন চিকচিক করছিল, মনে আছে ময়না! হাটবারে গঞ্জের গামছা, ছিটকাপড়ের ব্লাউজ আর এক পুটুলি মুরালির দিন ক্যামতে যায় ক্যামতে যায়...।

‘আমার লাইগ্যা তর পরান পোড়ে না ময়না! পোড়ে না!’

ক্যামতে বদল অয় মন, ক্যামতে...

‘তুমি কোন বা দেশে রইলারে দয়াল চান
তোমায় না দেখলে বাঁচে না আমার প্রাণ...।’

মুক্তা মাহমুদা: নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র