বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে বঙ্গবন্ধু নেতৃত্ব দেন

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ

শৈশবে নানা রোগভোগের পরও বঙ্গবন্ধু অসীম দৃঢ়তায় পড়ালেখা ও রাজনৈতিক চর্চা চালিয়ে যান। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সুদীর্ঘ মুক্তিসংগ্রামের প্রতিটি বাঁক বদলের সময় প্রায় এককভাবে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল তাঁর নির্দেশ ও নেতৃত্বে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে ইতালির মিলানে আয়োজিত আলোচনা সভায় মিলানে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদ বঙ্গবন্ধুর জন্ম ইতিহাস তুলে ধরে এ মন্তব্য করেন।

আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন ইকবাল আহমেদ
আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন ইকবাল আহমেদ

ইকবাল আহমেদ প্রাসঙ্গিক তথ্যপ্রমাণসহ আরও বলেন, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে চূড়ান্ত বিজয়ের পর পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী বঙ্গবন্ধু তাঁকে যত দ্রুত সম্ভব দেশে পাঠানোর প্রশ্নে অবিচল ছিলেন। বাংলাদেশে আসার পথে প্রথমে লন্ডনে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যাডওয়ার্ড হিথকে বাংলাদেশকে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দানের আহ্বান জানান। অতঃপর দিল্লিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে তাঁর অকুণ্ঠ সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ থেকে যত শিগগির সম্ভব ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। তাঁর দৃঢ়তার মুখে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর পরবর্তী জন্মদিনের আগেই বাংলাদেশ থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন এবং ১৯৭২ সালের ১৬ মার্চ তাঁর জন্মদিনের আগের দিন ভারতীয় সেনা প্রত্যাহার সমাপ্ত হয়। এ বিষয়গুলোর মধ্য দিয়ে তাঁর অসামান্য সাহসিকতা ও রাষ্ট্রনায়কোচিত দৃঢ়তা প্রকাশিত হয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রারম্ভে তাঁর এ অবস্থান বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়। ফলে এ দিনটি রাজনৈতিকভাবেও বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শিশু–কিশোরদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের কেক কাটা হয়
শিশু–কিশোরদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের কেক কাটা হয়

যথাযোগ্য মর্যাদা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় মিলানে জাতির পিতার ৯৯তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস পালিত হয়েছে। মিলানের বাংলাদেশ কনস্যুলেটের উদ্যোগে দিবসটি পালন করা হয়।

কনস্যুলেটের হলরুমে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সকাল থেকেই সপরিবারে প্রবাসী বাংলাদেশিরা উপস্থিত হন। শিশু-কিশোরেরাও অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। কোরআন থেকে তিলাওয়াত ও গীতা থেকে পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। পরে বঙ্গবন্ধুর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এরপর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রেরিত বাণী পাঠ করে শোনানো হয়। জাতির জনকের জীবন ও কর্ম নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। প্রামাণ্যচিত্রে বাংলাদেশের নানা ঐতিহাসিক কালপর্বে তাঁর অসম সাহসিকতা ও দৃঢ় ভূমিকার ওপর আলোকপাত করা হয়। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের ধারাবাহিক ক্রমবিকাশের বিভিন্ন পর্বের স্থিরচিত্র নিয়ে ‘আলোকচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ নামে চিত্র প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামমুখর জীবনের ওপর আলোচনা অংশে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিরাও বক্তব্য দেন। বক্তব্যে তাঁরা সবাই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদানের কথা গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করেন। তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা এবং এ উন্নয়ন কার্যক্রমে তাদের দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেন।

আঁকা ছবি হাতে শিশুরা
আঁকা ছবি হাতে শিশুরা

অনুষ্ঠানের পরবর্তী অংশে ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজন। এ পর্বে শিশু–কিশোরদের পরিবেশিত কবিতা, সংগীত, নৃত্য উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করে। ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে...’ অবিস্মরণীয় গানের মধ্য দিয়ে এ পর্ব শেষ হয়।

পরে কনসাল জেনারেল উপস্থিত শিশু–কিশোরদের নিয়ে কেক কেটে জাতির পিতার জন্মদিবসের আনন্দ সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিতি
অনুষ্ঠানে উপস্থিতি

সবশেষে কনসাল জেনারেল দিবসটি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশু–কিশোরদের মধ্যে সার্টিফিকেট, ক্রেস্ট ও বই বিতরণ করেন। বিজ্ঞপ্তি