বাংলাদেশ দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি দেশ

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথিরা
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথিরা

যথাযোগ্য মর্যাদা, ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উৎসাহের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্‌যাপিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশন ২৬ মার্চ স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় হোটেল সেরিনায় এক সংবর্ধনার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারিক আহসান ও তাঁর সহধর্মিণী দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে আগত অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান।

অনুষ্ঠানে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সচিব (এশিয়া ও প্যাসিফিক) ইমতিয়াজ আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। আইনপ্রণেতা, বেসামরিক ও সামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, প্রবাসী বাংলাদেশি এবং পাকিস্তানে প্রশিক্ষণরত বাংলাদেশি সামরিক কর্মকর্তারা সপরিবারে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ খাত–বিষয়ক বিশেষ সহকারী সাহজাদ সায়ীদ কাসিম, সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান মুশাহিদ হুসাহন সায়ীদ, বাংলাদেশ–বিষয়ক জাতীয় পরিষদ মৈত্রী গ্রুপের আহ্বায়ক এম এন এ চৌধুরী মাহমুদ বশীর ভির্ক, সিনেটর আফ্রাসিয়াব খাটক, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নওয়াবজাদা মালিক আমাদ খান, ইসলামাবাদের সাবেক মেয়র শেখ আনসার আজিজ ও সমরাস্ত্র কারখানার চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাদিক আলী।

অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার বর্ষপূর্তির কেক কাটা হয়
অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার বর্ষপূর্তির কেক কাটা হয়

অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। এরপর বাংলাদেশের হাইকমিশনার ও প্রধান অতিথি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। হাইকমিশনার তারিক আহসান তাঁর বক্তব্যে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি মন্তব্য করেন, দেশের প্রতিষ্ঠালগ্নের মূলনীতি অনুসরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ সামাজিক উন্নয়ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিতভাবে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ শতাংশ। বর্তমানে ৭ শতাংশের বেশি হওয়ায় উন্নয়নশীল দেশের অন্তর্ভুক্ত হয়েও বাংলাদেশ এখন বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি দেশে পরিণত হয়েছে।

তারিক আহসান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার রূপকল্প ২০৪১-এর আওতায় বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। আজ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শান্তি, উদারনৈতিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গির একটি কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিশ্ব শান্তি, নিরাপদ অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন, জঙ্গি ও সন্ত্রাস বিরোধিতা, প্রতিবন্ধীদের অধিকার সংরক্ষণ, ক্ষুদ্র-নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর ভাষার অধিকার রক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সোচ্চার ও নেতৃত্বদানকারী একটি দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিবেচিত হচ্ছে।

প্রধান অতিথি ইমতিয়াজ আহমেদ তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের সরকার ও ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণকে অভিনন্দন জানান এবং জনগণের উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। তিনি নিপীড়িত-বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দানের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন।

বক্তব্য দিচ্ছেন তারিক আহসান
বক্তব্য দিচ্ছেন তারিক আহসান

এরপর দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশের হাইকমিশনার প্রধান অতিথি, কূটনৈতিক কোরের ডিন, সার্কভুক্ত দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার এবং বিশিষ্ট অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে স্বাধীনতার বর্ষপূর্তির কেক কাটেন।

অনুষ্ঠান চলাকালে এক নৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দেশাত্মবোধক ও লোকসংগীতের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশি শাড়ি পরিহিত নারীদের পরিবেশিত নৃত্য অতিথিদের বিমোহিত করে।

সংবর্ধনাস্থল নানা বর্ণের ফুল ও লাল-সবুজ আলো দিয়ে আকর্ষণীয়ভাবে সজ্জিত করা ভয়। এ ছাড়া, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক নিদর্শন–সংবলিত বিশাল ব্যানার স্থাপন করা হয়। জাতির পিতা এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবিও টাঙানো হয়। দেশের আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান ও উন্নয়নের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত ভিডিওচিত্র এবং স্লাইড চারটি ডিজিটাল পর্দায় প্রায় সারাক্ষণ প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠান চলাকালে দেশাত্মবোধক যন্ত্রসংগীত বাজানো হয়।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের বাংলাদেশি খাবারসহ নান রকম সুস্বাদু খাবার দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়।

এর আগে, ৪৯তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষে সকালে চ্যান্সারি প্রাঙ্গণে মিশনের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন হাইকমিশনার তারিক আহসান। এ সময় সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। পরে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়।

শেষে বঙ্গবন্ধু ও দেশের স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। বিজ্ঞপ্তি

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা