তরুণদের প্রতি ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার আহ্বান

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কানাডা সংসদ স্বাধীনতা দিবস ও সত্যেন সেন জন্মজয়ন্তী উদযাপন করেছে। অনুষ্ঠানে আলোচনা সভায় অংশ নেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রথম মহাপরিচালক ভাষাবিজ্ঞানী শিক্ষাবিদ জামিল চৌধুরী। তিনি বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি ধ্বংস প্রতিরোধ করে জাতীয় স্বকীয়তা প্রতিষ্ঠার জন্য তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ের চেয়ে বর্তমানে জাতির সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ভাষার চেতনাগত অবস্থান অনেক পশ্চাৎপদ।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে ‘বীরের কণ্ঠে বীরত্বগাথা’ শীর্ষক যুদ্ধের মাঠের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণায় অংশ নেন কানাডায় বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধারা। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধারা একাত্তর ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশ ও জনগণের প্রকৃত মুক্তির জন্য তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা আরও মনে করেন, দেশ স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু তাঁদের আকাঙ্ক্ষা ও জনগণের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন থেকে দেশ এখনো অনেক দূরে। স্মৃতিচারণায় অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধারা হলেন—মো. মাশুক মাহমুদ, ড. আজিজুল হক, গৌরাঙ্গ দেব, সঞ্জিত দাস ও সোহরাব হোসেন।

হলভর্তি তরুণ প্রজন্মের শিশু-কিশোর ও প্রবাসীদের উপস্থিতিতে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে উদীচীর স্বাধীনতা দিবস উদযাপন ও বিপ্লবী সত্যেন সেনের জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালা। গত ২৩ মার্চ শনিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত টরন্টোর ডেনফোর্থের বাঙালি পাড়ার কেন্দ্রস্থল ৩০৭৯ ডেনফোর্থ অ্যাভিনিউয়ের এক্সেস পয়েন্টের হলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অঙ্কন প্রতিযোগিতা ৪ থেকে ৮; ৯ থেকে ১৩ ও ১৪ থেকে ১৮ বছরভিত্তিক তিনটি ভিন্ন গ্রুপে অংশগ্রহণ করে অনেক প্রবাসী শিশু-কিশোর। অঙ্কনের বিষয়বস্তু ছিল মুক্তি (ফ্রিডম)। প্রতিযোগিতায় আঁকা ছবির মূল্যায়নে ছিলেন কানাডায় বসবাসরত শিল্পী তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ ইকবাল ও অভিজিৎ পাল। অঙ্কন প্রতিযোগিতার সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন সংগঠনের নির্বাহী পরিষদের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জয় দাশ।

শিল্পীরা প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া শিশু-কিশোরদের আঁকা ছবির গুণগতমান দেখে উচ্ছ্বসিত হন। তাঁরা উদীচীর এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তাঁরা এই জাতীয় উদ্যোগ অব্যাহত রেখে প্রবাসের মূলধারার সঙ্গে এসব উদ্যোগ সমন্বিত করার আহ্বান জানান।

অঙ্কন প্রতিযোগিতায় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিশু-কিশোরেরা হলো: ‘ক’ গ্রুপে প্রথম এনজেলিনা প্রামাণিক, দ্বিতীয় আব্রাহাম প্রামাণিক ও তৃতীয় জয়িতা চৌধুরী অথই। ‘খ’ গ্রুপে প্রথম কাজী আজওয়াদ সায়ের, দ্বিতীয় রেজওয়ানা তাবাসসুম ফিওনা ও অয়ন বর্ধন এবং তৃতীয় কাজী আরমানী ওয়ার্দা। ‘গ’ গ্রুপে প্রথম অন্বিতা সাহা এমিলি, দ্বিতীয় অর্ণব বর্ধন ও তৃতীয় তৃষা সাহা। এ ছাড়া বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয় রায়ান হককে।

রচনা প্রতিযোগিতার দুটি বিষয়বস্তুভিত্তিক গ্রুপে ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বর্তমান বাস্তবতা’ এবং ‘বিপ্লবী সত্যেন সেনের জীবন ও কর্ম’ বিষয়ের ওপর রচনা মূল্যায়ন করেন জর্জব্রাউন কলেজের শিক্ষক ড. সুজিত কুমার দত্ত, সেন্টিনিয়াল কলেজের শিক্ষক ও উদীচীর উপদেষ্টা টিটো খন্দকার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারহানা আজিম শিউলী। তাঁরা মনে করেন, প্রবাসী প্রজন্মের মধ্যে দেশের ইতিহাস ও সংগ্রামভিত্তিক এই জাতীয় লেখা প্রতিযোগিতার সুদূরপ্রসারী প্রভাব সৃষ্টি এবং আজীবন তাদের দেশ ও জাতির সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখবে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বর্তমান বাস্তবতা বিষয়ে রচনা প্রতিযোগিতায় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিশু-কিশোর হচ্ছে: প্রথম অঙ্কিতা সাহা এনজেলিয়া, দ্বিতীয় আফতাব জহির ও নির্বাচিতা রহমান এবং তৃতীয় রায়ান জামান মৃধা। বিপ্লবী সত্যেন সেনের জীবন ও কর্ম বিষয়ে প্রথম সাম্য সাহা, দ্বিতীয় অন্বিতা সাহা এমিলি ও তৃষা সাহা এবং তৃতীয় অর্ণব বর্ধন।

সংগঠনের সভাপতি সুভাষ দাশ ও সাধারণ সম্পাদক মিনারা বেগম শিল্পী ও শিক্ষকদের উদীচীর কাজে মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। পাশাপাশি অনুষ্ঠানের আর্থিক ও অন্যান্য কাজে সহায়তাকারী ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান-মিডিয়া, প্রেসের লোকজনসহ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া সব শিশু-কিশোর ও তাদের অভিভাবকদেরও ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কানাডা সংসদের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগের জন্য ই–মেইল: <[email protected]>