মুজিবনগর সরকার স্বাধীনতা ত্বরান্বিত করে

রোমে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের আলোচনা
রোমে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের আলোচনা

মুজিবনগর সরকার গঠন বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্ব জনমতকে সংগঠিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মুজিবনগর সরকারের আনুগত্য স্বীকার করে তৎকালীন পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে কর্মরত অনেক বাঙালি কূটনৈতিক বিশ্ব জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

ইতালির রোমে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা সম্পর্কে এ কথা বলেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদার। তিনি তাঁর বক্তব্যের শুরুতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং শ্রদ্ধা জানান স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে জাতীয় চার নেতার অবদানকে। তিনি সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধে সব শহীদ ও সম্ভ্রমহারা মা-বোনদের।

আবদুস সোবহান সিকদার আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি রাজনৈতিক স্বাধীনতা লাভ করেছে। কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের জন্য তিনি যে স্বপ্ন দেখতেন, তা অতি অল্প সময়ে বাস্তবায়ন করতে পারেননি। জাতির পিতার এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দূরদর্শিতা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশ এখন একটি মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। এ ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।

ইতালির রোমে যথাযোগ্য মর্যাদায় ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালন ও উৎসাহ–উদ্দীপনায় বাংলা নতুন বছরকে বরণ করা হয়েছে। পৃথক কর্মসূচির মাধ্যমে মুজিবনগর দিবস পালন ও বাংলা নতুন বছরকে বরণ করা হয়।

রোমের বাংলাদেশ দূতাবাস ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে দূতাবাসে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। গত বুধবার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে দূতাবাসের হলরুমে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় রোমের বাংলাদেশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারাসহ নানা স্তরের প্রবাসী বাংলাদেশি ও দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশ নেন।

রোমে পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপনের একটি দৃশ্য
রোমে পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপনের একটি দৃশ্য

পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াতের মাধ্যমে আলোচনা পর্ব শুরু হয়। এরপর দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত বাণীসমূহ পাঠ করেন যথাক্রমে দূতাবাসের প্রথম সচিব শেখ ছালেহ আহাম্মদ ও প্রথম সচিব রাজীব ত্রিপুরা। আলোচনা সভায় বক্তারা মুক্তিযুদ্ধে ও স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।


উৎসবমুখর পরিবেশে রোমে পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন 

ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা ও বৈচিত্র্যপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে রোমের বাংলাদেশ দূতাবাস বাংলা নববর্ষ ১৪২৬ উদ্‌যাপন করেছে। সবার অংশগ্রহণে ‘এসো হে বৈশাখ, এসো হে’ গানটির গাওয়ার মধ্য দিয়ে পয়লা বৈশাখের জমকালো অনুষ্ঠানটি সূচনা করা হয়।

দূতাবাসের কর্মকাণ্ডকে প্রবাসীদের আরও কাছে নিয়ে আসার অংশ হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ের ধারাবাহিকতায় রোমের বাংলাদেশি অধ্যুষিত তুস্কুলানা পার্কে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদার তাঁর স্বাগত বক্তব্যে উপস্থিত সবাইকে বাংলা নতুন বছরের শুভেচ্ছা এবং অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য প্রবাসী বাংলাদেশি ও ইতালির নাগরিকদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বাংলা নববর্ষের উৎসব বাঙালি সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে সব বাঙালির প্রাণের উৎসব। ফসল ঘরে তোলার সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে প্রবর্তিত এ উৎসব এখন সর্বজনীন রূপ নিয়েছে। প্রবাসে জন্মগ্রহণকারী নতুন প্রজন্মের কাছে বাঙালি জাতির বিভিন্ন সংস্কৃতি তুলে ধরার জন্য রাষ্ট্রদূত সব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাদেরকে আহ্বান জানান।

রোমে পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপনের একটি দৃশ্য
রোমে পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপনের একটি দৃশ্য

অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি শিশু-কিশোরসহ বয়সভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান শুরুর আগে আমন্ত্রিত অতিথিদের পান্তা-ইলিশ, চিড়া, নিমকি, পিঠাসহ বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবার পরিবেশনের মাধ্যমে আপ্যায়িত করা হয়।

বাংলাদেশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারাসহ প্রবাসী বাংলাদেশিরা এতে অংশ নেন। প্রবাসী বাংলাদেশি ছাড়া ইতালির অনেক নাগরিক পুরো অনুষ্ঠান অত্যন্ত আগ্রহ ও উৎসাহের সঙ্গে উপভোগ করেন।