মিশন বিশ্বকাপ ক্রিকেট

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০১৭, ওভাল স্টেডিয়াম, ইংল্যান্ড। বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ডের খেলার একটি দৃশ্য। ছবি: রয়টার্স
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০১৭, ওভাল স্টেডিয়াম, ইংল্যান্ড। বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ডের খেলার একটি দৃশ্য। ছবি: রয়টার্স

একসময় ক্রিকেটে একটা জয়ের জন্য আমরা দিনের পর দিন বসে থাকতাম। জয় যখন ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকত তখন একটা সম্মানজনক পরাজয়ে সান্ত্বনা পেতাম। আমাদের খেলতে হতো আইসিসির সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে। কয়েক বছর পর পর শুধু এশিয়া কাপে সুযোগ মিলত ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো বড় দলের সঙ্গে খেলার।

আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশ বারবারই হোঁচট খেত জিম্বাবুয়ে বা কেনিয়ার সঙ্গে। চ্যাম্পিয়ন দলের সুযোগ হতো বিশ্বকাপ খেলার। সেটা নব্বইয়ের দশক। ইন্টারনেট বা কেব্‌ল টিভি তখনো আসেনি। রেডিওতে ধারাভাষ্যই শেষ ভরসা। ছক্কা শুনে যখন সবাই লাফিয়ে উঠছি তখন বেরসিক ধারাভাষ্যকারের ঘোষণা আসত প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় বলটি তালুবন্দী করলেন! অথবা ব্যাটসম্যান সজোরে ব্যাট চালিয়েছেন আর তারপর রেডিওতে পিনপতন নীরবতা। নির্ঘাত চার কিংবা ছক্কা, যখন সিগন্যাল ঠিক করার জন্য অ্যানটেনা ঠিক করছি, তখন শীতল গলায় ব্যাটসম্যান বোল্ড হওয়ার খবর।

ওভাল স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির (২০১৭) খেলা চলাকালে পতাকা হাতে একজন বাংলাদেশি সমর্থক
ওভাল স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির (২০১৭) খেলা চলাকালে পতাকা হাতে একজন বাংলাদেশি সমর্থক

১৯৯৭ আইসিসি ট্রফি থেকে শীর্ষ তিন দেশের সুযোগ ছিল বিশ্বকাপ খেলার। মালয়েশিয়ায় সেমিফাইনালে খেলার শেষ বাধা নেদারল্যান্ডস। নেদারল্যান্ডসকে ১৭১ রানে অলআউট করলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় বৃষ্টি। বৃষ্টি থামলে ৩৩ ওভারে টার্গেট হয় ১৪১। আর তা করতে বাংলাদেশ যখন ১৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে আরেক আশাভঙ্গের দিকে এগোচ্ছে তখনই অধিনায়ক আকরাম খান তাঁর ব্যাট দিয়ে লিখলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠ কবিতা। হার না মানা সেই ৬৮ রানের ইনিংসই যেন আজও টিম টাইগারদের জাত চিনিয়ে দেয়। আজ রেকর্ড বুকে বাংলাদেশি সেঞ্চুরিয়ানদের বিজয় রথ কিন্তু সেই ম্যাচে আকরাম খানের অপরাজিত ৬৮-কে ম্লান করার মতো শতক কি কখনো হবে? তারপর সেমিফাইনালে স্কটল্যান্ডকে সহজে হারিয়ে কেনিয়ার সঙ্গে ফাইনাল আর সঙ্গে বিশ্বকাপ খেলার টিকিট নিশ্চিত করে।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০১৭, ওভাল স্টেডিয়াম, ইংল্যান্ড
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০১৭, ওভাল স্টেডিয়াম, ইংল্যান্ড

কিন্তু বাংলাদেশ তত দিনে জিততে শিখে গিয়েছে। নিজেকে করে নিয়েছে ক্রিকেট বিশ্বমঞ্চের যোগ্য চরিত্র। ফাইনালে কেনিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। সেদিন বাংলাদেশ মেতেছিল রঙের খেলায়, রাস্তায় রাস্তায় বিজয় মিছিল আর জয়ধ্বনি।

বিশ বছর পর আজ বাংলাদেশ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলতে আবারও ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে। যেখানে বাংলাদেশ খেলেছিল প্রথম বিশ্বকাপ ১৯৯৯ সালে। স্কটল্যান্ড ও পাকিস্তানকে হারিয়ে প্রথম বিশ্বকাপ মিশন শেষ করেছিল। ২০১৯ সালের বাংলাদেশ টিম এক অন্য টিম, এক আত্মবিশ্বাসী টিম টাইগার। পঞ্চপাণ্ডবের সঙ্গে নবীনের এক অপূর্ব সমন্বয়। সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন নিয়ে শুরু করতে যাওয়া টিম টাইগার। আর ভেন্যু যখন ইংল্যান্ড ও ওয়েলস, বাংলাদেশ তখন বাড়তি পাওনা হিসেবে পাচ্ছে গ্যালারি ভর্তি লাল–সবুজের সমর্থন, যেন দ্বিতীয় মিরপুর স্টেডিয়াম।

ওভাল স্টেশনে লেখকের মেয়ে ইসরা
ওভাল স্টেশনে লেখকের মেয়ে ইসরা

ক্রিকেটের এই অগ্রযাত্রায় এই বিশ্বকাপ হোক সাফল্যের আরেক মাইলফলক। আবারও রঙের খেলায় মেতে উঠুক শহরের চেনা–অচেনা গলিগুলো, চারদিকে উঠুক বিজয়ের সহস্র স্লোগান। টিম টাইগারদের জন্য একরাশ ভালোবাসা ও শুভকামনা।