সাত বছর পরে

যা বলা হয়নি কখনো—
আজ তা সহজ করে বলতে চাই দ্বিধাহীন
কবিতা তোমার ছুটি হলো আজ, আর
নির্বাসনের সাত বছর পূর্ণ হলো আমার
হয়তো আমাকে এখন আর মনে করে না কেউ
কিন্তু আমি ভুলতে পারিনি কিছুই
চোখ বন্ধ করলেই টের পাই টিনের চালে বৃষ্টি ঝরা শব্দ
সোঁদা মাটির গন্ধ—দেখি শিউলি শেফালির হাসি
কচু পাতায় শিশির বোনা রাত
সন্ধ্যামালতীর মায়া আর খঞ্জনাদের গান।

একটি বিষকাঁটা বুকের ভেতর বিঁধে রক্ত ঝরায় বারবার
এ কি নির্বাসন, নাকি স্বেচ্ছায় সশ্রম কারাবাস?
জানি, আমার এই প্রশ্নের উত্তর কেউ দেবে না
প্রকৃতি যেখানে নির্বাক—মানুষ সেখানে লোভী!
তবুও বুঝতে পারি রাতের চেয়ে বীভৎস কালো রঙে
উদরে লুকিয়ে থাকা ক্ষুধা, স্বেচ্ছায় সশ্রম কারাবাসে প্রলুব্ধ করেছিল আমায়!

আমায় সবচেয়ে উদাস করে
মায়ের পবিত্র মুখ আর নিরাভরণ বাঙলা
এই ছিল আমার ভালোবাসার জায়গা, আজকাল
টের পাই আর একটি মহান হৃদয় যোগ হয়েছে তার সাথে
যা পরম শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার।

মায়ের আঁচল থেকে পাঁচ, দশ টাকা
খোয়া যেত প্রায় প্রতিদিন
মুখ টিপে হেসে রাগ হতে চাইতেন মা,
বলতেন, প্রতিদিনই আমার আঁচল থেকে টাকা চুরি যাচ্ছে
এ তো ভালো কথা নয়...
কিন্তু কখনো কঠিন মনে হতো না মাকে
সেই সাত বছর আগে দেখা মায়ের হাসি আর রাগ জড়ানো মুখ...
না, তারপর আর দেখা হয়নি
এখন হয়তো আর টাকা খোয়া যায় না মায়ের আঁচল থেকে
হয়তো তেমনি হাসি আর রাগ জড়ানোও জড়িয়ে থাকে না মুখে
বড় দেখতে ইচ্ছে করে, সেই মুখ
যা আমার বুকের ভেতর ভেসে থাকে অনুক্ষণ
জানি, সেই মুখ আর দেখা হবে না কোনো দিন
তবুও ইচ্ছে করে—
বাকি জীবন প্রকৃতির দাসত্ব করেও যদি দেখা যেত
সাত বছর আগের মায়ের সেই মুখ...
তবে তা-ই করতাম।

মনে যদি পড়ে আমায় মেঘের কাছে যেও
আমার চোখের অশ্রুগুলো বৃষ্টি বুঝে নিয়ো।

আড়িয়াল খাঁর সাথে প্রেম ছিল গভীর
চাঁদ আর নক্ষত্র ভরা রাতগুলোতে লেগে থাকত আরও বেশি মায়া
আকাশ থেকে জ্যোৎস্না ঝরে
মিশে যেত নদীর পানিতে
চাঁদের আলো ঝরা পথে ভেসে যেত ছোট-বড় নৌকা
একদিন মাঝনদী থেকে ভেসে এসেছিল একটি সুর,
‘জ্যোছনার সাথে চন্দন দিয়ে মাখাব তোমার গায়...’
নজরুল ছাড়া আর কেউ লিখতে পারবে না
প্রিয়ার জন্য এত সুখের গান
জানি, যা হারায় তা খুঁজে পাওয়া যাবে না কোনো দিন
তবুও জানতে লোভ হয়—
নদীর পাশে বসে কেউ কি ভাবে আমার কথা
আমাকে মনে করে কাঁদে, অপেক্ষায় থাকে আমার দেশে ফেরার...
নদী, চাঁদ অথবা...
কত দিন দেখা হয় না তার সাথে, সাত বছর!
সে কেমন আছে, এখনো কি ভালোবাসে
নাকি ভুলে গেছে।
...

কাজী সাইফুল ইসলাম: সৌদি আরবপ্রবাসী