এখন আমাদের জেগে ওঠার দিন
বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের খেলা। লন্ডনে। আমার বাসা থেকে স্টেডিয়ামের দূরত্ব ৪৫ মাইল। কোনো ব্যাপারই না। আমরা বাপ-বেটা রওনা দিয়ে দিলাম। স্টেডিয়ামে যখন পৌঁছলাম, প্রথমেই নজর পড়ল সাদা চামড়ার কয়েকজন লোকের দিকে। তাঁরা হাঁক ছাড়ছেন, কেউ টিকিট বিক্রি করবেন? টিকিট? বুঝলাম, আজকের খেলার ডিমান্ড আছে। পথে আইসিসির অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক। মানুষকে সাহায্য করতে দাঁড়িয়ে আছেন। ছেলে বলল, বাংলাদেশের টি–শার্ট কিনবে। দাম ২০ পাউন্ড। বললাম, ঠিক আছে। ছেলে একটা টি–শার্ট পছন্দ করে পেমেন্ট দিতে যাবে, অমনি ক্যাশিয়ার মেয়েটি হেসে বললেন, ‘আরে! তুমি তো মেয়েদের টি–শার্ট নিয়ে এসেছ।’ ছেলে একটা হাসি দেয়।
গ্যালারিতে ঢুকলাম। চারদিকে বাঙালি আর বাঙালি। লাল-সবুজে ভরা স্টেডিয়াম। কার না ভালো লাগে এমন দৃশ্য দেখতে। যখন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বেজে উঠল মাইকে, চোখ ভিজে উঠল, আহা রে দেশ।
বাংলাদেশ যখন টসে হেরে গেল, ভাবলাম, খাইছে, আজ কী ডুবতে বসেছি? কিন্তু না, বাংলাদেশ জেগে উঠেছে। একটি রান পেলেও পুরো স্টেডিয়াম আনন্দে মেতে ওঠে। যখন স্কোর ৩৩০ দাঁড়াল, আশা জাগল জয়ের। কিন্তু তারপরও তো শঙ্কা থাকেই। যখন উইকেট পড়ছিল না, মনে হচ্ছিল এই বুঝি গেলাম। দুই ওভার বাকি থাকতে যখন বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হয়ে গেল, দেখি সাউথ আফ্রিকান সাপোর্টাররা মাথা নিচু করে বিষণ্ন মনে গ্যালারি ছাড়ছেন খেলার শেষ না দেখেই। ভাবলাম, একসময় আমাদেরও এ রকম দিন ছিল। খেলা শেষ হওয়ার আগেই পরাজয় মেনে নিয়ে বেরিয়ে যেতে হতো বিষণ্ন মনে। আজ দিন বদলে গেছে। আমরাও পারি।
জয়ের আনন্দ নিয়ে মাঠ ছাড়তে ছাড়তে ভাবলাম, কে বলেছে, দেশের মানুষের দেশপ্রেম নেই? এসে দেখো, দেশের পতাকাটা ওড়াতে-ওড়াতে, ঘামতে-ঘামতে, চিৎকার করতে-করতে কীভাবে একটা দেশকে জয়ী করতে হয়, দেখো। ভাবলাম, দলকে জেতাতে গিয়ে বাঙালি যেভাবে পাগল হয়ে উঠেছে, একাত্তরে কেমন ছিল তারা? যখন দেশকে শত্রুমুক্ত করতে, দেশের মানুষকে বাঁচাতে নিশ্চয় উন্মাদ হয়ে উঠেছিল তারা। এটা দেখেই বুঝতে পারি। আর কে বলেছে, আমাদের দেশপ্রেম নেই। দেশ দেশ বলে এ দেশের মানুষ ঘেমে উঠছে, জেগে উঠছে, হেসে উঠছে। যে কজন হাতেগোনা খারাপ লোক আছেন, দয়া করে ভালো হয়ে যান। দেশ জিতলে আমরা জিতি। এখন শুধু জয়ের দিন। আনন্দের দিন। বাঙালির জেগে ওঠার দিন। ভালোবাসায় পাগল হওয়ার দিন। জেগে ওঠো ভাই। জেগে ওঠো বোন। দেশ গড়তে হবে এবং এখনই।
পুনশ্চ: বউ আমাদের ওপর খেপেছে। বাপ-বেটা মিলে ১৫০ পাউন্ড (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৬ হাজার টাকা) খরচ করে এসেছি। খেলা বাবদ। চিৎকার করছে। কিন্তু আমাদের কিছু যায়–আসে না। জয়ে থাকলে চেঁচামেচিও খারাপ লাগে না।