টরন্টোয় সাঁঝবেলায় সুরাঞ্জলি শীর্ষক সংগীতসন্ধ্যা

সংগীত পরিবেশন করছেন তুষার দত্ত
সংগীত পরিবেশন করছেন তুষার দত্ত

যেকোনো সাংস্কৃতিক আয়োজন কিংবা বিনোদনের প্রাণ দর্শক-শ্রোতা। তেমনি এক অনুষ্ঠান হয়ে গেল কানাডার টরন্টোয়। বাংলাদেশ-কানাডা হিন্দু কালচারাল সোসাইটি মিলনায়তনে হলভর্তি দর্শকের উপস্থিতি ছিল সেই সার্থক প্রচেষ্টারই চিত্র। এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শ্রীনাম সংঘ। শাস্ত্রীয় সংগীতের গুণী শিল্পী তুষার দত্ত ছিলেন আসরের মধ্যমণি। টানা দুই ঘণ্টা তিনি আসর মাতিয়ে রেখেছেন নজরুলগীতি, খেয়াল, ভজন, গজল আর আধুনিক গানের সুরে। তবলায় তাঁকে সংগত করেন শিল্পী অশোক দত্ত। গত পয়লা জুন শনিবার সন্ধ্যায় এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

পণ্ডিত তুষার দত্তের জন্ম বাংলাদেশের নাটোর জেলায়। সন্তোষ চৌধুরীর কাছে সংগীতের হাতেখড়ি। পরবর্তী সময়ে দুর্গাপুরের বিমল মিত্রের কাছেও গান শেখেন তিনি। আইটিসি সংগীত রিসার্চ একাডেমির স্কলার থাকাকালে তিনি পণ্ডিত এ কানন ও পণ্ডিত অরুণ ভাদুড়ির কাছে কিরানা গায়কিতে তালিম নিয়েছেন। গুরুবোন বিদুষী শুভ্রা গুহের কাছেও কিছুদিন শিখেছেন।

সংগীত পরিবেশন করছেন সঞ্জীব মুখার্জি
সংগীত পরিবেশন করছেন সঞ্জীব মুখার্জি

এ ছাড়া পণ্ডিত সুনীল বসুর কাছে নিবিড় তালিম নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তুষার দত্ত। ১৯৯৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে জাতীয় প্রতিযোগিতায় খেয়ালে প্রথম স্থান অধিকার করেন। বাংলা গানে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য তরুণ শিল্পী হিসেবে লাভ করেন আনন্দবাজার সংগীত পুরস্কার। মুম্বাইয়ের সুরশৃঙ্গার সংসদ থেকে পণ্ডিত তুষার দত্ত সুরমণি উপাধি লাভ করেছেন। পৃথিবীর বহু দেশে সংগীত পরিবেশন করে তিনি সবার প্রশংসা অর্জন করেছেন।

দর্শক–শোতা
দর্শক–শোতা

সাঁঝবেলায় সুরাঞ্জলি শিরোনামে শ্রীনাম সংঘ আয়োজিত এই সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার শুরুতে গান করেছেন সংঘের শিল্পীরা। শ্যামা সরকার, সুভাষ রায়, উত্তম রায়, অশোক দত্ত, রিমা দত্ত, তমা রায়, ঊর্মি দাস ও রিয়া চক্রবর্তীর গানে তবলায় সংগত করেছেন নকুল দে।

একপর্যায়ে মঞ্চে আসেন বয়োজ্যেষ্ঠ শিল্পী সঞ্জীব মুখার্জি। বয়স ৯০ ছুঁই–ছুঁই চিকিৎসক সঞ্জীব মুখার্জি পরপর দুটি রবীন্দ্রসংগীত গাইলেন। মঞ্চে উঠে তিনি বললেন, ‘সংগীত আমার জীবনে অক্সিজেনের মতো। অক্সিজেন নিয়েই তো মানুষ বাঁচে। তেমনি গান করেই বাঁচতে চাই, উপভোগ করতে চাই জীবন। আর প্রতিদিন সে চেষ্টাই করে চলেছি। তুমুল করতালি দিয়ে দর্শক শিল্পীকে বরণ করে নেন।’

দর্শক–শোতা
দর্শক–শোতা

তারপর শিল্পী তুষার দত্ত কণ্ঠে টানা দুই ঘণ্টা নানা ঘরানার গান শুনে আপ্লুত দর্শক। দর্শক–শ্রোতাদের অভিব্যক্তি, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া সামনে বৃহৎ আয়োজনের প্রেরণা বলে জানালেন আয়োজক শ্রীনাম সংঘের দুই সংগঠক সুভাষ রায় ও উত্তম রায়। সবার আন্তরিক উপস্থিতি ও আয়োজন সহযোগীদের কৃতজ্ঞতা জানান দুজনেই।

অনুষ্ঠান–পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানতে চাই শিল্পী তুষার দত্তের কাছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশে আমার শিকড়। আর এখানে হলভর্তি প্রাণের মানুষদের উপস্থিতি একটি সার্থক আয়োজনের পরম পাওয়া। খুবই আনন্দিত, অভিভূত এমন একটি আয়োজনে গান করতে পেরে।’