প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল সময়ের ক্রিকেট

ছবি: এএফপি
ছবি: এএফপি

বর্তমানের সঙ্গে অতীত ও ভবিষ্যতের পার্থক্যের অন্যতম মাপকাঠি হচ্ছে পরিবর্তন। প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল এই সময়ের সঙ্গে ক্রিকেটও অনেক পরিবর্তনের মধ্যে এগোচ্ছে। ফরম্যাট, নিয়ম, সর্বোপরি খেলার ধরনের পরিবর্তন, সবকিছুর সঙ্গে ক্রিকেটারদের সামঞ্জস্য রাখতে হয়। তার জন্যই ক্রিকেটাররা নিয়ে এসেছেন অনেক উদ্ভাবনী কিছু ধরন। যেমন ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে ধোনির হেলিকপ্টার-শট, দিলশানের দিল-স্কুপ, সৌম্যর পেরিস্কোপ-শট। বোলিংয়ের ক্ষেত্রে মোস্তাফিজের কাটার-মাস্টারের কাটার ইত্যাদি।

আবার এর সঙ্গে রয়েছে তথ্যের পরিপূর্ণ ব্যবহার। বর্তমানে অনেক টিমেই দু–তিনজন ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার থাকেন। যেকোনো মুহূর্তে তাঁরা খেলা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতে পারেন। যেমন আমাদের সাকিব, তামিম, মোস্তাফিজ, ইংল্যান্ডের জেসন রয়, মরগ্যান, বাটলার, স্টোকস, ভারতের কোহলি, রোহিত শর্মা, বুমরা।

এখন বিপক্ষ দল যদি পরিকল্পনা করে ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ারকে আটকান, চিন্তামুক্ত খেলে জয়ী হয়ে বাড়ি যান’—আসলেই কি ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড়কে না খেলতে দিলে জয়ী হওয়া যায়? কিছু ক্ষেত্রে হয়তোবা সত্যি, কিন্তু অনেকাংশে ক্রিকেটে এই মতবাদ সঠিক হয় না। কেননা ব্যাটিংয়ে অসাধারণ একটা ইনিংস, বোলিংয়ে আগুন ঝরানো একটা স্পেল প্রতিনিয়তই প্রমাণ করে গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট।

বর্তমানে ক্রিকেটাররা তথ্যের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে তাঁদের পারফরম্যান্স অসাধারণ পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেন। দেখুন ওডিআইতে ৩০০ বলের মধ্যে ১১টি বল প্রয়োজন সবাইকে আউট করার জন্য। বোলারকে একসঙ্গে অনেক কিছু করার দরকার নেই। সঠিক কাজটুকু ভালোভাবে করলেই উইকেট পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যেমন ডেথ ওভারে ইয়র্কর কার্যকরী। আবার যে বোলার যাতে দক্ষ এবং যা করতে উদ্‌গ্রীব সময় অনুযায়ী সেটাই করা উচিত। এখন মিডিয়াম পেসাররা যদি বেশি শর্ট-পিচ দেওয়ার চেষ্টা করেন, সেটা ভালো না–ও হতে পারে। ফল হবে হিতে বিপরীত। বরং বোলিং বৈচিত্র্য (স্লোয়ার, কাটার, সুইং) নিয়ে আসতে হবে।

টিমের ডেটা অ্যানালিস্টরা এ ক্ষেত্রে কোচ, অধিনায়ক, টিম ম্যানেজমেন্টকে বিপক্ষ টিমের ক্রিকেটারদের ব্যাটিং ম্যাট্রিক্স যেমন হার্ড-হিটিং যোগ্যতা, খেলা শেষ করে আসার ক্ষমতা, জরুরি রান করার যোগ্যতা, ধারাবাহিকতা ইত্যাদি এবং বোলিং ম্যাট্রিক্স যেমন উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা, উপযুক্ত সময়ের বোলিং ও ইকোনমি ইত্যাদি পর্যালোচনা করে দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। তথ্যের এই ভালো বিশ্লেষণের জন্যই বর্তমান সময়ে অনেক ক্ষেত্রেই শক্তিশালী দুটি দলের খেলা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরিপূর্ণ। এবারের wc–এও আমরা এ রকম কয়েকটা ম্যাচ দেখেছি। আবার দুর্বল দলগুলো সীমিত শক্তির দিকে বেশি নজর দেয়।

তবে ফুটবলে এই সীমিত শক্তির ব্যবহার বেশি। আমরা যদি ইউরোপিয়ান বা ইংলিশ লীগ দেখি তাহলে দেখব, দুর্বল দলগুলো সহজে গোল করার জন্য সীমিত শক্তির ব্যবহার করে। যেমন কর্নার কিক, ফ্রি-কিক, কাউন্টার অ্যাটাক, বিপক্ষ রক্ষণের দুর্বল প্লেয়ারের মুভমেন্ট ইত্যাদি। এর জন্য তারা ফুটবল অ্যানালাইসিস কোম্পানির হেল্প নিয়ে থাকে। আমার জানামতে, আর্সেনাল এ রকম একটি প্রতিষ্ঠান ‘StatDNA’–এর মালিকও বটে। ইউরোপের অনেক দল প্রতিনিয়ত এই ফুটবল অ্যানালিস্টের হেল্প নিয়ে থাকে।

এবারের ইংল্যান্ডের খেলা দেখে আমি মুগ্ধ। আমাদের ক্রিকেট টিম টেকনোলজি আরও ভালো ব্যবহার করুক এবং সেই সঙ্গে আরও সৃষ্টিশীল খেলা উপহার দিক এই প্রত্যাশা...।