মিশিগানে প্রবাসীদের নিরাপত্তায় মতবিনিময়

মিশিগানে প্রবাসীদের নিরাপত্তায় মতবিনিময়
মিশিগানে প্রবাসীদের নিরাপত্তায় মতবিনিময়

স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় আমরা কতটা নিরাপদ? প্রশ্ন অনেকটা সোজাসাপ্টা হলেও উত্তরটা বেশ জটিল। উন্নত জীবন ও নিরাপদ কর্মসংস্থানের আশায় পরিবার–পরিজন ছেড়ে প্রবাসীদের দূরদেশে বসবাস। কিন্তু এই প্রবাস জীবনেও ইদানীং দেখা যাচ্ছে নানা সমস্যা। যেমন কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রায়ই আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। হাইজ্যাক, ডাকাতি ও হেট ক্রাইমসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী আক্রমণের শিকার হয়ে জীবন হারানো বাংলাদেশির সংখ্যাও কম নয়।

মিশিগান অঙ্গরাজ্যেও দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন চারজন বাংলাদেশি ট্যাক্সিক্যাবের চালক। সর্বশেষ গত ২২ মে কর্মরত থাকা অবস্থায় ক্যাবচালক জয়নুল ইসলাম প্রাণ হারান। তখন ছিল রমজান মাস। তিনি ইফতার করে ট্যাক্সিক্যাব নিয়ে কাজে বেরিয়ে কর্মরত অবস্থায় হামলার শিকার হন। সাত সন্তানের বাবা জয়নুল বড় এক পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি এবং কমিউনিটিতে বেশ পরিচিত মুখ ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। ডেট্রয়েট নগরীর স্থানীয় গণমাধ্যম ফলাও করে এ সংবাদ প্রচার করে।

মিশিগানে প্রবাসীদের নিরাপত্তায় মতবিনিময়
মিশিগানে প্রবাসীদের নিরাপত্তায় মতবিনিময়

এ ঘটনার পর বাংলাদেশ কমিউনিটির বেশ কয়েকটি সংগঠন স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে প্রবাসীদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশি আমেরিকান ডেমোক্রেটিক ককাস (বিএডিসি) রোববার (২৩ জুন) বিকেলে মিশিগানের বাংলা টাউনখ্যাত হ্যামট্রামিক শহরের আলাউদ্দিন রেস্টুরেন্টে এক সভার আয়োজন করে।

সভায় ক্যাবচালক জয়নুল ইসলাম স্মরণে আলোচনা ও ট্যাক্সিক্যাবের চালকদের সেফটি ও সিকিউরিটি নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময়ে হ্যামট্রামিক শহরের পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজ্য সরকার ও সিটি কাউন্সিলের নির্বাচিত প্রতিনিধি, বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতা ও স্থানীয় ক্যাবচালকেরা অংশগ্রহণ করেন।

মিশিগানে প্রবাসীদের নিরাপত্তায় মতবিনিময়
মিশিগানে প্রবাসীদের নিরাপত্তায় মতবিনিময়

প্রধান অতিথি ছিলেন মিশিগান ওয়েইন কাউন্টির শেরিফ বেনি নেপোলিয়ন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ডেট্রয়েট সিটির ডেপুটি পুলিশ চিফ টড বেটিসন, স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ আইজ্যাক রবিনসন, হ্যামট্রামিক সিটির সার্জেন্ট রবার্ট জর্জ।

বক্তব্য দেন ডেট্রয়েট সিটি কাউন্সিলম্যান স্কট বেনসন, হ্যামট্রামিক সিটি কাউন্সিলম্যান এনাম মিয়া, সাবেক কাউন্সিলম্যান মোহাম্মদ হাসান। কমিউনিটির নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন হাজি নিজাম উদ্দিন, মাওলানা আবদুল লতিফ আজম, হাফিজ ফখরুল ইসলাম, মঞ্জুর খান, ট্যাক্সিক্যাবের চালকদের প্রতিনিধি আবদুল বাসেত, বাংলাদেশি ইয়ুথের পক্ষে তাজিম চৌধুরী ও শাহ আলী প্রমুখ।

উপস্থিতির একাংশ
উপস্থিতির একাংশ

বক্তারা পুলিশ প্রশাসনের তড়িৎগতিতে সাহায্য–সহযোগিতায় এগিয়ে আসা এবং অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসনের সহযোগিতা দাবি করেন।

মতবিনিময় চলার একপর্যায়ে ডেট্রয়েট সিটি পুলিশ ইনভেস্টিগেটিভ কর্মকর্তা ব্রায়েন ফন্টেইন ক্যাবচালকদের সেফটি ও সিকিউরিটির ওপর ৪০ মিনিটের এক বিশদ ট্রেনিং পরিচালনা করেন।

এ ছাড়া আয়োজক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নাজমুল হাসান শাহীন সভার উদ্দেশ্য ও পরবর্তী কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন বর্তমান সভাপতি জুবারুল চৌধুরী খোকন। পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী রাহাত খান। কমিউনিটির নেতাদের পরিচয় করিয়ে দেন সহসভাপতি মুহিত মাহমুদ।

উপস্থিতির একাংশ
উপস্থিতির একাংশ

আয়োজনের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন আয়োজক সংগঠনের সহসভাপতি সোলাইমান বাহার, ১১ ডিস্ট্রিক্ট কমিটির চেয়ারম্যান সাদেক রহমান, ১৩ ডিস্ট্রিক্ট কমিটির চেয়ারম্যান আজিজ চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক কাউসার দেওয়ান, নির্বাহী কমিটির সেক্রেটারি আপেল খান ও জিয়া উদ্দিন, ১৪ ডিস্ট্রিক্ট কমিটির কো-চেয়ারম্যান নাঈম চৌধুরীসহ হাফিজ রহমান, মোহাম্মদ সোলায়মান ও সাবুল চৌধুরী।

আলোচনা শেষে নাজমুল হাসান শাহীন ঘোষণা করেন বিএডিসি প্রবাসীদের সেফটি ও সিকিউরিটির ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে তিন মাস পরপর সংলাপের আয়োজন করবে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে রাস্তায় পর্যাপ্ত লাইটের ব্যবস্থাকরণ, মসজিদ ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে নিরাপত্তা বৃদ্ধিকরণ ও ট্যাক্সিক্যাব গাড়িতে ক্যামেরা প্রতিস্থাপনের জন্য কাজ করবে। এ ছাড়া ওয়েইন কাউন্টি শেরিফ বেনি নেপোলিয়ের অফিসের সঙ্গে কমিউনিটি পুলিশিং প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করবে।

সভায় বিএডিসির ট্রাস্ট্রি সিরাজুল ইসলাম ও আনোয়ার হোসেন, উপদেষ্টা সৈয়দ ইকবাল হোসেন চৌধুরী ও ইউসুফ কামাল, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সেলিম আহাম্মদ ও ফয়সল চৌধুরীসহ মো. মনির, এনাম আহামেদ, আবদুল হালিম, মো. আলম, খাজা শাহাবুদ্দিন প্রমুখ। এ ছাড়া মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, মোহাম্মদ উদ্দিন, খন্দকার শাফি আহাম্মদ, মহিন আলী, মোহাম্মদ আখতার হোসেন, আমজাদ, আইয়ুব খান, আবদুস শহীদ, মুসলিম আলী ও শহীদ মিয়াসহ ৫০ জন ট্যাক্সিক্যাবের চালক উপস্থিত ছিলেন।