কেন তাপিওকা জাপানে জনপ্রিয়

টোকিওর রাস্তায় দীর্ঘ সারি থাকলে আপনি ধরে নিতে পারেন, সেখানে তাপিওকা স্টোর আছে। আপনি কখনো তাপিওকা খেয়েছেন কি? আমি খেয়েছি। কিন্তু আমি জানি না, কেন মানুষ তাপিওকা এতটা পছন্দ করে। অনেক পানীয়র মধ্যে কেন মানুষ তাপিওকা পান করতে চায়? তাপিওকা পান করার জন্য আপনাকে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। আর প্রায় ৪০০ ইয়েন খরচ করতে হবে। আমি আজ তাপিওকা নিয়ে কিছু লিখব।

তাপিওকা কী? 

তাপিওকা
তাপিওকা

তাপিওকা ক্যাসাভা নামের আলু থেকে তৈরি করা হয়।

ব্রাজিলের আদিবাসী ‘তুপি’ ভাষায় ক্যাসাভা থেকে স্টার্চ তৈরি করাকে বলে তাপিওকা। গোলাকার তাপিওকাকে বলা হয় তাপিওকা পার্ল। শুকনো ক্যাসাভা স্টার্চ থেকে যেটা তৈরি। তাপিওকা চা ১৯৮৩ সালে তাইওয়ানে প্রথম উদ্ভাবন করা হয়। তাইওয়ানে তাপিওকার আঠালো স্বাদকে কিউ কিউ (QQ) স্বাদ বলা হয়। তাইওয়ানের চায়ের দোকান চিওনসিতানে তাপিওকা চায়ের প্রচলন প্রথম হলেও এরপর মাত্র ১০ বছরের মধ্যে সেই চা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং তাইওয়ানের একটি নেতৃস্থানীয় পানীয়র স্থান সেটা দখল করে নেয়।

কখন তাপিওকা জাপানে এসেছিল 

গোলাকার তাপিওকাকে বলা হয় তাপিওকা পার্ল। শুকনো ক্যাসাভা স্টার্চ থেকে এটা তৈরি
গোলাকার তাপিওকাকে বলা হয় তাপিওকা পার্ল। শুকনো ক্যাসাভা স্টার্চ থেকে এটা তৈরি

তাপিওকা ১৯৯০-এর দশকে জাপানে এসেছিল। ১৯৯০-এর দশকে প্রতিবছর নতুন একটি করে মিষ্টি বিদেশ থেকে জাপানে আসে। যেমন তিরামিস কেক বা নারকেল ক্রিম ইত্যাদি। এর মধ্যে ১৯৯২ সালে তাপিওকা চা জাপানে প্রচলিত হয়। এর আগে তাপিওকা নারকেলের পানি মিশিয়ে খাওয়া হতো। তখন ইনস্টাগ্রামের মতো এসএমএস ছিল না। ফলে টেলিভিশন বা ম্যাগাজিনে তেমন প্রচার পায়নি বলে তাপিওকা বিখ্যাত হতে পারেনি। আর ১৯৯৬ সালে স্টারবাকস জাপানে আসার পর থেকে অন্য কফির দোকান বেড়েছে। এ কারণেও তাপিওকা চা তখন জাপানে জায়গা করে নিতে পারেনি।

কেন এখন তাপিওকা জনপ্রিয়

আচ্ছা, বলুন তো তাপিওকা এখন জাপানে কেন এতটা জনপ্রিয়? আমি এর চারটি কারণ ভেবে দেখেছি।

১. ইনস্টাগ্রামের প্রভাব

তাপিওকার সঙ্গে নানা রকম মিষ্টান্ন মিশিয়ে নিয়ে খাওয়া যায়
তাপিওকার সঙ্গে নানা রকম মিষ্টান্ন মিশিয়ে নিয়ে খাওয়া যায়

সবাই এ কারণের কথা বলছেন। ট্রেনে যাঁরা প্রায়ই স্মার্টফোন দেখেন, তাঁরা সাধারণত ইনস্টাগ্রাম চেক করেন। ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীদের সংখ্যা ২০১৮ সালে পৃথিবীতে ছিল ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি এবং জাপানে ২৯ মিলিয়ন বা ২ কোটি ৯০ লাখ। ইনস্টাগ্রাম সহজে ছবি ফ্যাশনেবল করে তুলতে পারে। এর মাধ্যমে ছবি শেয়ারও করা যায়। এ কারণে তরুণেরা প্রধানত এটা উপভোগ করে থাকে। তাপিওকা এখন কেবল সাধারণ দুধ চা তাপিওকা নয়। তাপিওকার সঙ্গে নানা রকম মিষ্টান্ন মিশিয়ে নিয়ে এটা খাওয়া যায়। রঙিন তাপিওকাও আজকাল পাওয়া যায়। এ ছাড়া তাপিওকার প্যাকেজের ছবি খুব কিউট! শুধু ৪০০ ইয়েনে আপনার ইনস্টাগ্রাম তাপিওকা রঙিন করে দিতে পারে।

২. খাবারের ধারণায় পরিবর্তন হচ্ছে 

খাবারের ধারণায় পরিবর্তন হচ্ছে
খাবারের ধারণায় পরিবর্তন হচ্ছে

বলা হয় সকাল, দুপুর ও রাত—দিনে এই তিনবার খাওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু আধুনিক মানুষ যখন মন চায় তখনই তাপিওকা খেয়ে নিতে পারে। এটা শুধু যে মজা তা–ই নয়। একই সঙ্গে খাদ্য ও পানীয় যেখানে পাওয়া যায়, সেই তাপিওকা মানুষ লাঞ্চ হিসেবে খায়। খাওয়ার সময় পান করার নতুন এই অনুভূতি সবাই উপভোগ করেন।


৩. বেছে নেওয়ার পছন্দ অনেক 

তাপিওকার দোকানে গেলে বোঝা যায়, তাপিওকার সঙ্গে নারকেল রস ও চকলেট ইত্যাদি টপিং আমরা বেছে নিতে পারি। এ ছাড়া বরফের পরিমাণ ও মিষ্টিও পছন্দমতো ঠিক করে নেওয়া যায়। অন্য কথায় নিজের প্রিয় তাপিওকা পানীয় আপনি তৈরি করে নিতে পারবেন।

৪. তরুণেরা ফ্রাপেচিনো পান করে না

তাপিওকার মতোই গোল গোল খুব মিষ্টি রসগোল্লা জাপানে জনপ্রিয় হতে পারে
তাপিওকার মতোই গোল গোল খুব মিষ্টি রসগোল্লা জাপানে জনপ্রিয় হতে পারে

স্টারবাকস ফ্রাপেচিনো তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়েছিল। তবে ২০০৭ সালে সবুজ চা ফ্রাপেচিনোর বিক্রি শুরু হলে স্টারবাকসের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। কিন্তু পরে আরও নতুন ফ্রাপেচিনো বিক্রি হয়েছে এবং সম্প্রতি নতুন স্বাদের দেখাও আমরা পেয়েছি। ফ্রাপেচিনোর নতুন মান তৈরি করা এখন তাই কঠিন। স্টারবাকসের ফ্রাপেচিনো বিশেষ করে তরুণীদের জন্য এ কারণে দুর্দশার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছিল যে সেটা হচ্ছে দামি পানীয়। অন্যদিকে মেয়েদের জন্য তাপিওকা কিনতে কোনো বাধা নেই। এ ছাড়া এর সঙ্গে মিশিয়ে নেওয়া বাদামি চিনির স্বাদ জাপানে পরিচিত।

এগুলো নিয়ে আমি ভেবেছি। এ রকম নানা কারণে তাপিওকা জনপ্রিয় হয়েছে। শুধু মজা নয়, সেই সঙ্গে পুষ্টিগত মানও আছে তাপিওকায়।

মিষ্টি কি পরবর্তীকালে জনপ্রিয় হবে?

আমি জাপানে দক্ষিণ এশিয়ার মিষ্টি আমদানি করতে চাই। দক্ষিণ এশিয়ায় অনেক ফল পাওয়া যায়। তাই ট্রপিক্যাল বা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল নিয়ে ব্যবসার সুযোগ জাপানে আছে। তরুণেরা থাইল্যান্ডের খাবারে বেশি আগ্রহী। বাংলাদেশের চায়ের দোকানের মতো অপরিচিত মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারার জায়গা আমি জাপানে তৈরি করে দিতে চাই। দক্ষিণ এশিয়ার ঐতিহ্যগত নকশার দোকানও আমি বানাতে চাই। তাপিওকার মতোই গোল গোল খুব মিষ্টি রসগোল্লা জাপানে জনপ্রিয় হতে পারবে কি?
---

নানা নেগাতা: তৃতীয় বর্ষ, বাংলা বিভাগ, বিদেশবিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয়, টোকিও, জাপান।