মানবতার পরাজয়

তাসলিমা বেগম
তাসলিমা বেগম

কতভাবে আর মানবতার পরাজয় দেখব? তাসলিমা বেগম রেনুর চেহারা বা কান্নাময়ী ছোট্ট মা তুবার চেহারা কিছুতেই চোখের সামনে থেকে সরাতে পারছি না। কত দুর্বল অসহায় একটা মা। নিজের পরির মতো মামণিকে স্কুলে ভর্তি করবে বলে খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন। কিছু মানুষরূপী অমানুষ পিটিয়ে মেরে ফেলে তাঁকে? তাদের কী একটুও বুক কাঁপল না?

আমি চিকিৎসক। এত বছর ডাক্তারি করে ছোট্ট একটা কথা জেনেছি, মানুষ অতি দুর্বল প্রাণী। এত অত্যাচারী হয়ে কোনো লাভ নেই। চলে যেতে হবে আর সবার মতো যেকোনো দিন যেকোনো সময়ে। সে যেই হোক না কেন। তাহলে স্বাধীন একটা গণতান্ত্রিক দেশে জনপ্রতিনিধিদের প্রতি এত অনাস্থা কেন? কেন সাধারণ একটা মা, যিনি একা একটা দেবশিশুকে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার পথ দেখাতে চেয়েছেন, তাঁকে এত নিষ্ঠুরভাবে বিদায় দিতে হবে? তুবাকে তার মার মতো ভালোবাসা দিয়ে কেউ কি বেঁচে থাকতে, বড় হয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারবে? কখনই না।

আগেও দেখেছি বিনা অপরাধে বা সামান্য ছোট কিছু চুরির অপরাধে মানুষকে মেরে ফেলা হয়েছে। ভাই রে, আপনারা সৃষ্টিকর্তা না, তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকে শেষ করার কোনো সাধ্য আপনাদের নেই। সৃষ্টিকর্তার ওপর আস্থা রাখুন আর আইনের শাসনের প্রতি আস্থা রাখুন। কারণ যে অন্যায় তাসলিমা বেগমের প্রতি করা হয়েছে তার প্রতিকার তো হবেই। আরও বাজেভাবে কষ্ট পেয়ে হবে, যেহেতু জঘন্য অপরাধী আপনারা।

কত শত ভুলের শাস্তি সরাসরি পেয়েছি হিসাব নেই। এসেছে ওপর থেকে। অন্যায় করে পায়ের ওপর পা তুলে আয়েশি জীবন কাটাব, এটা সম্ভব না। এরপরের নিশ্বাসটা নিতে আর আগামীকাল বেঁচে থাকতে পারব কিনা, সে নিশ্চয়তা যেহেতু নেই, বন্ধ করুন নিষ্ঠুরতা। তুবার মায়ের আঁচলের তলায় বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিয়ে কোটি মানুষকে কাঁদিয়েছেন আপনারা। আল্লাহর ওপর বিশ্বাসী আমরা সব অন্যায়ের বিচার দেখার জন্য বেঁচে থাকব। সংখ্যায় আমরা অনেক বেশি।