জাপানের গুম্মায় মীনাবাজার ও ঈদ আনন্দমেলা

ছোট বন্ধুদের নিয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশন
ছোট বন্ধুদের নিয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশন

ঈদের আনন্দকে পূর্ণতা দিতে জাপানের গুম্মা, তোচিগি ও সাইতামাপ্রবাসী বাংলাদেশিরা আয়োজন করেছিলেন ঈদ আনন্দমেলা ও মীনাবাজার। ঈদের চার দিন পর গত শুক্রবার (১৬ আগস্ট) এ আনন্দমেলা ও মীনাবাজার অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য, জাপানের রাজধানী টোকিওর বাইরে এই প্রথমবার গুম্মা প্রিফেকচারে আয়োজিত হলো মীনাবাজার।

গুম্মার ঐজুমি বুনকামুরা কালচারাল সেন্টারে আয়োজিত এই ইনডোর মীনাবাজারে স্টল ছিল মোট ১৭টি। স্বদেশি বিভিন্ন মুখরোচক খাবারের মধ্যে ছিল চটপটি-ফুচকা, শিঙারা, মিষ্টি, রসমালাই, লাড্ডু, চমচম, ছানা মিষ্টি, চিকেন ফ্রাই স্টিক, নানরুটি-কারি-ডাল, সাদা ভাত-মাছ-ভর্তা-গরুর ভুনা, প্যাটিস, মুরালি, ঝালমুড়ি, বিরিয়ানি, চা, ঠান্ডা পানীয়সহ আরও অনেক কিছু।

খাবারের স্টলের নামগুলোও ছিল নজরকাড়া। শাহাদাৎ দম্পতি পরিচালিত ‘ইয়ান তুন খাই যান’, শাহেদ আলম দম্পতি পরিচালিত ‘দেশি স্বাদ’, সুবিনয় দাস দম্পতি পরিচালিত ‘ভিলেজ ফুড’, আলম-শীলা দম্পতি পরিচালিত ‘শীলার সৃষ্টি রসে ভরা মিষ্টি’সহ ছিল প্রবাস হালাল ফুডের স্টল।

মীনাবাজারে স্টল
মীনাবাজারে স্টল

এ ছাড়া ছিল মেয়েদের সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি, জুয়েলারি, কসমেটিকস, জুতা; ছেলেদের পাঞ্জাবি-পাজামা; ছোট বাচ্চাদের ড্রেস, খেলনার স্টল। আরও ছিল ট্যুরস ও এয়ার টিকিটিং স্টল, রেমিট্যান্স কর্নার এবং সিডি ও বইয়ের স্টল। ইনডোরে এতগুলো আইটেমসমৃদ্ধ স্টল পরিদর্শন করা ছিল অতিথিদের জন্য দারুণ উপভোগ্য।

দিনটিতে কিছু অফিস খোলা ছিল। এ কারণে এবং শুক্রবার জুমার নামাজ থাকায় শুরুটা কিছুটা বিলম্বিত হয়। আশিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন হাফিজ কবির খান।

প্রথমেই পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করে ছোট বন্ধু নাফি। এরপর সব ছোট বন্ধুদের নিয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন রওশন আফরোজ। এ সময় সবার হাতে ছিল বাংলাদেশের পতাকা। দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীতকে সম্মান প্রদর্শন করেন উপস্থিত সবাই।

মীনাবাজারে স্টল
মীনাবাজারে স্টল

জাতীয় সংগীত পরিবেশন শেষে বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ আগস্টে ঘাতকের নির্মম বুলেটে প্রাণদানকারী বঙ্গবন্ধু পরিবারের সবার উদ্দেশে শোক প্রকাশ করে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

কমিউনিটির পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মাসুদ আখতার ও ফারহানা আফরুজ। মীনাবাজারের স্টলদাতাদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন ফাতেমা লুৎফর। বিশেষ অতিথিদের মধ্য থেকে বক্তব্য দেন আসলাম খন্দকার, শাহিন চৌধুরী, মো. গিয়াস, শাহ হোসেন, মোখলেসুর রহমান ও মো. জসিম।

বক্তব্যের পালা শেষ হলে গুণীজন সংবর্ধনা পর্ব পরিচালনা করেন আয়েশা সিদ্দিকা।

ঈদ আনন্দমেলার একটি দৃশ্য
ঈদ আনন্দমেলার একটি দৃশ্য

গুম্মায় আয়োজিত প্রথম মীনাবাজারে কমিউনিটির পক্ষ থেকে জাপানে বাংলা সংগীতে অবদানের জন্য ও সম্প্রতি কলকাতা থেকে রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম নীরব আশা প্রকাশ উপলক্ষে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীতে স্নাতক ডিগ্রিধারী শাম্মী আখতার বাবলীকে বিশেষ সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।

এ ছাড়া জাপানে প্রথম বাংলা কাগজের পত্রিকা মানচিত্রের সম্পাদনা, কথাসাহিত্য ও রবীন্দ্র গবেষণায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রবীর বিকাশ সরকারকে বিশেষ সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। তাঁর রচিত ২৩টি গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে শিশু-কিশোর ছড়া গ্রন্থ, কাব্যগ্রন্থ, প্রবন্ধ ও উপন্যাস। প্রবীর বিকাশ সরকার হঠাৎ দেশে যাওয়ার কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তার অবর্তমানে সম্মাননা গ্রহণ করেন মোখলেসুর রহমান।

ঈদ আনন্দমেলার একটি দৃশ্য
ঈদ আনন্দমেলার একটি দৃশ্য

এরপর স্থানীয় প্রতিভার মূল্যায়ন পর্ব পরিচালনা করেন মিন্টু বড়ুয়া। স্থানীয় দুজন গুণী কণ্ঠশিল্পী রাবিতা নওশি ও সাবরিনা জাহান এবং গুণী আবৃত্তিকার আয়েশা সিদ্দিকাকে বিশেষ মূল্যায়ন ও শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেন কণ্ঠশিল্পী শাম্মী আখতার বাবলী।

তৃতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ পর্ব উৎসর্গিত হয় প্রয়াত বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দীকে।

সংগীত পরিবেশন করেন মিন্টু বড়ুয়া, রওশন আফরোজ, মৃদুল বর্মণ, জাকির হোসেন, সামিনা পপি, ইউনিক জ্যোতি, হাফিজ কবির খান, সাবরিনা জাহান ও রাবিতা নওশি। আবৃত্তি করেন আয়েশা সিদ্দিকা। বিশেষ কৌতুক পরিবেশন করে সবাইকে আনন্দ দেন আবু সুফিয়ান।

ঈদ আনন্দমেলার একটি দৃশ্য
ঈদ আনন্দমেলার একটি দৃশ্য

শিশুদের জাপানিজ গান পরিবেশনায় ছিল সুহান, রাইনা, আরিয়ান, জেসিন, অরিস্যা, হরফ, আরোহা ও আয়ান প্রমুখ।

পরবর্তী পর্বে উপস্থিত সবাইকে নিয়ে করা হয় আকর্ষণীয় কুইজ। কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করে কুইজে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেন আয়েশা সিদ্দিকা, মোখলেসুর রহমান ও মৌরি বড়ুয়া।

সব শেষে মঞ্চে আসে জাপানের প্রথম বাংলা ব্যান্ডদল ঝিঁঝিপোকা। এটি ছিল বাংলাদেশের কিংবদন্তি শিল্পী ও রকস্টার আইয়ুব বাচ্চুর জন্মদিন। তাই ঝিঁঝিপোকা ব্যান্ডের সদস্যরা সবাইকে নিয়ে কেক কেটে পালন করেন আইয়ুব বাচ্চুর মরণোত্তর প্রথম জন্মদিন। আর কেক কাটার সঙ্গে সঙ্গে ঝিঁঝিপোকা পরিবেশন করে ট্রিবিউট সং ‘চলো বদলে যাই’।

ঈদ আনন্দমেলার একটি দৃশ্য
ঈদ আনন্দমেলার একটি দৃশ্য

ঝিঁঝিপোকার মূল কনসার্টের আগে ব্যান্ডের মিউজিকে সংগীত পরিবেশন করেন তোমোকো খন্দকার, রোমেল দিদার ও শাম্মী আখতার বাবলী। এরপর ঝিঁঝিপোকা ব্যান্ডের অনবদ্য পরিবেশনা দর্শকদের মাতিয়ে রাখে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। ২০টির মতো মনমাতানো গানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ঝিঁঝিপোকা ব্যান্ডের গুম্মায় প্রথম স্টেজ শো।

আর এর সঙ্গে শেষ হয় গুম্মা, তোচিগি ও সাইতামা প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত প্রথম মীনাবাজার ও ঈদ আনন্দমেলা, যেটাকে সংক্ষেপে ESC-ও বলা যায়। E (Entertainment), S (Shopping), C (Charity)।

ঈদ আনন্দমেলার একটি দৃশ্য
ঈদ আনন্দমেলার একটি দৃশ্য

‘মানুষ মানুষের জন্য’ স্লোগানটি বুকে ধারণ করে মীনাবাজারের মাধ্যমে সংগৃহীত হয় বাংলাদেশের বন্যাদুর্গত ও দুস্থ ডেঙ্গুজ্বর আক্রান্তদের জন্য বিশেষ তহবিল।

উল্লেখ্য, এ বছর জাপানে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হয় ১১ আগস্ট। এ সময় জাপানে ছিল সামার ভ্যাকেশন। লম্বা ছুটিতে স্মরণকালের মধ্যে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশিসহ অন্য মুসলিমরা মহা ধুমধামে উদযাপন করেন ঈদের দিনটি।