জাপানের কানসাইয়ে বাংলাদেশিদের গ্রীষ্মকালীন বনভোজন

গ্রীষ্মকালীন বনভোজনে অংশগ্রহণকারীরা
গ্রীষ্মকালীন বনভোজনে অংশগ্রহণকারীরা

জাপানের কানসাই অঞ্চলে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সামাজিক সংগঠন কানসাই বাংলাদেশ সোসাইটির (কেবিএস) উদ্যোগে হয়ে গেল কেবিএস সামার পিকনিক বা গ্রীষ্মকালীন বনভোজন। দেশটির কানসাই অঞ্চলের ওসাকা, কিয়েটো, কোবে, নারা ও অকায়ামা শহরের প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণে তৈরি হয় এক চমৎকার মিলনমেলা। গত রোববার (২৫ আগস্ট) গ্রীষ্মকালীন এই বনভোজন আয়োজন করা হয়।

দেশটিতে শহরের কর্মব্যস্ত জীবনে সবুজঘেরা পরিবেশ, প্রাকৃতিক জলাধারের টলমল পানিকে ছুঁয়ে দেখা কিংবা সাঁতার কাটা কারোরই সচরাচর হয়ে ওঠে না। দেশটির অন্যতম ঐতিহাসিক শহর কিয়োটোর বাইরে শিগা শহরের কোল ঘেঁষে বয়ে চলছে সর্ববৃহৎ ও বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন মিষ্টি পানির হ্রদ লেক বিওয়া। শহরবাসী মানুষগুলো গ্রীষ্মের সময় একটু দম নেওয়া এবং বাচ্চাদের ছোটাছুটির জন্য ছুটির দিনে হামলে পড়েন এই লেক বিওয়ার পাড়ে।

গ্রীষ্মকালীন বনভোজনের একটি দৃশ্য
গ্রীষ্মকালীন বনভোজনের একটি দৃশ্য

কানসাই বাংলাদেশ সোসাইটি এই লেক বিওয়ার পাড়েই সবুজে ঘেরা পাহাড়বেষ্টিত ওমি মাইকো বিচে আয়োজন করে গ্রীষ্মকালীন বনভোজনের।

শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবকদের পেশাগত দায়িত্ব, ঘর সামাল দেওয়া আর নতুন প্রজন্মের শিক্ষা—প্রবাসের এই ছকবাঁধা জীবনের একঘেয়েমি দূর করা, পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাৎ, কুশল বিনিময় ও আনন্দ ভাগাভাগির এই বার্ষিক আয়োজন ঘিরে এই অঞ্চলের প্রবাসীদের সব সময়ই একটা আলাদা আগ্রহ থাকে।

গ্রীষ্মকালীন বনভোজনের একটি দৃশ্য
গ্রীষ্মকালীন বনভোজনের একটি দৃশ্য

একে তো শহর থেকে দূরে, তার ওপর রোববার পাবলিক ট্রান্সপোর্টে আসা–যাওয়ায় লম্বা সময়ের বিরতি। তারপরও প্রায় দেড় শ প্রবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আয়োজনটি একটি প্রাণবন্ত বাংলাদেশি মিলনমেলায় পরিণত হয়। নির্দিষ্ট সময় গড়াতে না–গড়াতেই সকাল থেকেই বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, কর্মজীবী ও ব্যবসায়ীরা কেউ একা আবার কেউ দল বেঁধে কিংবা পরিবার নিয়ে এসে উপস্থিত হতে থাকেন। ওমি মাইকো বিচের একটি অংশে সৃষ্টি হয় যেন এক টুকরো বাংলাদেশ।

অংশগ্রহণকারীদের স্বাগত জানান কেবিএসের সভাপতি সৈয়দ জাহিদুর রায়হান, সহসভাপতি মাহমুদ জাকের, উপদেষ্টা আমিনুর রহমান, সেরাজুল ইসলাম, ইয়াসিন মিয়া ও আশরাফ মোহাম্মদ।

গ্রীষ্মকালীন বনভোজনের একটি দৃশ্য
গ্রীষ্মকালীন বনভোজনের একটি দৃশ্য

সকালে ইয়াকি সোবা ও সোমেন (একধরনের সুস্বাদু জাপানিজ নুডলস) খাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনব্যাপী এই আনন্দ আয়োজনের। এরপর বাচ্চাদের বস্তাদৌড় ও বড়দের অংশগ্রহণে ‘রিং ছুড়ে ড্রিংকস জেতা’ খেলা সবাইকে অফুরান আনন্দ দেয়।

সোহেল চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে দুপুরের খাবার পর্বে ছিল বারবিকিউ চিকেন, চিংড়ি, সসেজ, সবজি ও ফালাফেল পিতা। যত খুশি তত খাওয়ার আনন্দে মাতোয়ারা ছিল সবাই। আর দিনভর লেকের পানিতে সবার ঝাঁপাঝাঁপি আর খেলাধুলা তো ছিলই। বিকেলে পরিবেশন করা হয় তরমুজ, কফি ও স্ন্যাকস। সন্ধ্যার মনোরম পরিবেশে ফায়ার ওয়ার্কসের মাধ্যমে সমাপ্তি টানা হয় দিনব্যাপী এই আনন্দ আয়োজনের।

গ্রীষ্মকালীন বনভোজনের একটি দৃশ্য
গ্রীষ্মকালীন বনভোজনের একটি দৃশ্য

প্রায় এক মাসের প্রস্তুতিতে নিবেদিতপ্রাণ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবকের নিরলস প্রয়াসের ফসল ছিল কেবিএস সামার পিকনিক-২০১৯ ইভেন্টটি। পুরো অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মেহরুবা মোনা। সাধারণ সম্পাদক খন্দকার রুমির নেতৃত্বে আয়োজনটির সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাদাত সায়েম, অর্থবিষয়ক সম্পাদক রাশেদ মাহমুদ, প্রচার সম্পাদক সালমান মাহমুদ সিদ্দিকী, সদস্য রুহুল আমিন রবিন ও ফখরুল ইসলাম।