ক্যাম্পিং

জঙ্গলে বাড়ি। প্রতীকী ছবি
জঙ্গলে বাড়ি। প্রতীকী ছবি

ছর ধরে দেখছি, বন্ধুরা অনেকে ক্যাম্পিং করতে যাচ্ছেন। তারপর ক্যাম্পিং করে ফিরে আসছেন। দেশি-বিদেশি সবাই।

আমার কথা হলো, বনের মধ্যে তাঁবু খাঁটিয়ে নদীর পাশে মাছ ধরে আদিম জীবনে ফিরে যাব মানে? কয়েক শ বছর আগে যে জীবন থেকে বের হয়ে এসে আধুনিকতার শুরু, আমাকে কেন ফিরে যেতে হবে সেখানে? তা ছাড়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাছ উঠবে না, ছিপ হাতে মশার কামড় খেয়ে চুপ করে বসে থাকব, এত ধৈর্য যদি আমার থাকত...। সুতরাং আমার যাওয়া হয়নি কখনো।

কানাডার কিছু বন্ধু একবার পাঁচ-ছয়টা ফ্যামিলি মিলে চলে গেল বিশাল এক বাড়ি ভাড়া করে ক্যাম্পিংয়ে। বাসাটা ঝরনার পাশে। বারবিকিউ করা যাবে। সবাই মিলে আস্ত খাসি কিনে মেরিনেট করে ফয়েল দিয়ে সাজিয়ে কয়েক শ মাইল ড্রাইভ করে গেল।

পরদিন সকালে খাসি বারবিকিউ করা হবে। অতি খুশিতে খুঁটিনাটি বিষয়গুলো ভুলে গেল। পিঠে আগুন জ্বালিয়ে খাসি ঝোলাবে কীভাবে। যাও ঝোলানো গেল ডাল দিয়ে, খাসিকে ম্যানুয়ালি ঘোরানো লাগল। আগুনের অতি কাছে থাকাতে বাইরে পুড়ে গেল আর ভেতরে রয়ে গেল কাঁচা। ভাগ্যিস, তাদের সঙ্গে পরোটা-মিষ্টি ছিল। প্রায় তিনটায় খাসির আশা ছেড়ে পরোটা-মিষ্টি অতিরিক্ত পরিমাণে খেয়ে (ততক্ষণে ক্ষুধায় জান যায় যায় অবস্থা সবার) ঝরনায় নেমে চুপ করে বসে রইল সবাই। এ কথা বন্ধুর নিজ মুখে শোনা।

যা হোক, বছর কয়েক আগে কিছু বন্ধু পরিবারসহ চলে গেলাম টেনেসি। স্মোকি মাউন্টেনের মাঝে কাঠের কেবিন। সবাই একসঙ্গে থাকব। বিমানবন্দরে নেমে রাত ১১টায় বুনো পাহাড়ি পথে দেড় ঘণ্টা ড্রাইভ করে গেলাম বয়সে অনেক ছোট এক বন্ধুর বাসায়।

তাকে আগে কখনো দেখিনি। রাত দেড়টায় একজন অপরিচিত মানুষের জন্য এতটা আতিথেয়তা করা যায়, এটা আমার জানা ছিল না। রাজকন্যা আবার সবার জন্য গিফটও দিয়েছে। ছোট্ট একটা পুতুল মামণি ছিল, সেও মা-বাবার সঙ্গে এত রাত পর্যন্ত জেগে ছিল। একরাশ ভালোবাসা আর মুগ্ধতা নিয়ে রওনা হলাম লজের পথে।

কুয়াশায় ঘেরা নির্জন পথ। এত গহিনে, সেলফোনের সিগন্যাল কাজ করছে না। তারপরও ঘুরে ঘুরে শেষ রাতে কাঠের কেবিনে পৌঁছালাম। জীবনে প্রথম বাঙ্ক বেডে ঘুমালাম। সকালে নাশতা খেয়ে কেবিনের বাইরে গিয়ে দেখি, ভালুক ফেলে দেওয়া ক্যানে খাবার খুঁজছে।

ঠিক হলো সবাই মিলে রিভার র‌্যাফটিংয়ে যাব। যথারীতি ফোনের সিগন্যাল ঠিকমতো কাজ করছে না। একটা গাড়ির পিছে সব কটি যাবে ঠিক হয়েছে। যেতে যেতে পথ কেমন সরু হয়ে কিছু আইসোলেটেড বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছে দেখে বুঝে নিলাম, পথ হারিয়েছি।

ছয়টা গাড়ি থেমে ম্যাপ দেখে পথ ঠিক করার চেষ্টা করছি, এমন সময় এক সাদা বয়স্ক ব্যক্তি বাড়ির সামনে চিৎকার করতে লাগল। বলল তখনই সরে যেতে। তারপর বন্দুক বের করে দেখাতেই ছোট ছোট বাচ্চাসহ ছয়টা গাড়ি নিয়ে মুহূর্তে রওনা হয়ে গেলাম। রাস্তাটা সরকারি। বুড়োর নিজের তৈরি না। কিন্তু মারা যাওয়ার রিস্ক নেওয়া সম্ভব হলো না।

লিটল রিভারে র‌্যাফটিং মজা ছিল। বাচ্চারা অনেক আনন্দ করেছে। তারপর মেঘের মাঝে কাঠের কেবিনে কুয়াশা ঢাকা পথে পৌঁছে গেলাম। ডিনার করে সবাই ঘুম। কেবিনের জানালায় দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখলাম একা। সবাই ঘুমিয়ে আছে। বুঝে নিলাম ক্যাম্পিংয়ে প্রকৃতির অসহ্য সৌন্দর্য উপভোগ করতেই মানুষ আসে। কিন্তু আমার মন থাকে মানুষের মাঝে। একা একা কোনো কিছুই তেমন ভালো লাগে না।