একজন ফালতু বাবা

ছেলে-মেয়েসহ লেখক
ছেলে-মেয়েসহ লেখক

কিছুদিন হলো আমার মেয়ে তাহিয়া সিডনির নর্থ শোর কোচিংয়ে কোচিং শুরু করেছে। এখানে মূলত মডেল টেস্ট নেওয়া হয়। তাকে সেখান থেকে বাসায় নেওয়ার জন্য স্যাকভিল রোডের পাবলিক স্কুলের খোলা জায়গায় আমি আর আমার ছেলে ছোট্ট রায়ান অপেক্ষা করি। তাহিয়া কোচিং শেষ করে আসার আগে সেখানে আমরা বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলায় মেতে থাকি।

একদিন সেখানে এক পরিচিত ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলো। কুশল বিনিময়ের পর তিনি বললেন, কোচিংয়ের অফিসে যেতে হবে, কিছু কাজ আছে। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি টিউশন ফি দেবেন? তিনি উত্তর দেওয়ার আগেই মনে পড়ে গেল, তাহিয়ার চলতি টার্মের পুরো টিউশন ফি আমারও দেওয়া হয়নি। তাই আমি বললাম, আমারও যাওয়া দরকার। কারণ তাহিয়ার কিছু পেমেন্ট বাকি আছে।

আমার কথা শুনে তিনি কেমন যেন একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললেন, ‘আপনি তো দেখছি কিছুই জানেন না। আমার সঙ্গে আসেন আপনাকে দেখাচ্ছি।’

আমি তাকে অনুসরণ করে অফিসকক্ষে গিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। অভিভাবকেরা সবাই সামনে রাখা একটা কাগজ দেখে একটা সাদা কাগজে কী যেন লিখছেন দ্রুতগতিতে।

আমার অবাক দৃষ্টি লক্ষ করে তিনি বললেন, ওই কাগজগুলো কোচিংয়ের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র। অভিভাবকেরা সেগুলো লিখে নিচ্ছেন। তাদের ছেলেমেয়েরা যে প্রশ্নগুলোর ভুল উত্তর দিয়েছে, তাঁরা সেগুলো লিখে নিয়ে যাচ্ছেন, বাসায় গিয়ে সেগুলো আবার পড়াবেন বলে। বলেই তিনিও কোচিংয়ের একজন স্টাফের কাছ থেকে তার মেয়ের প্রশ্নপত্র চেয়ে নিয়ে লেখা শুরু করে দিলেন। তার দেখাদেখি আমিও আমার মেয়ের প্রশ্নপত্র চেয়ে নিয়ে লেখা শুরু করে দিলাম।

দুজনের লেখাই একসময় শেষ হলো। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার মেয়ের কী অবস্থা?’ আমি বললাম, বেশি ভালো নয়। তবে ওই বয়সে আমি যতটা খারাপ ফলাফল করতাম, তার চেয়ে ভালো। তাই আমি খুশি।

আমার উত্তর শুনে তিনি হাসলেন। সাধারণত ছোট বাচ্চাদের অপরিপক্ব কথা শুনে আমরা যেমন হাসি। এরপর তিনি বললেন, ‘আমার মেয়ে প্রি ইউনি কোচিংয়ে যায় নিয়মিত। কিন্তু শুধু পরীক্ষাগুলো দেওয়ার জন্য প্রি ইউনির পাশাপাশি এখানেও আসে।’

আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলাম, বলেন কী? এখানেও তাহলে কোচিং ব্যবসার রমরমা অবস্থা দেখি। তিনি আমার কথা শুনে সেই একই হাসি দিলেন। আমি তাঁকে যত দূর চিনি, তিনি নিজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে এসেছেন। তার সহধর্মিণী পেশায় চিকিৎসক। আমি তখন মনে মনে ভাবছিলাম, আমারই বোধ হয় শিক্ষাটা পরিপূর্ণ হয়নি।

তাহিয়া পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে আমার ওপর কিছুটা রেগে গেল। আমাকে বলল, ‘তুমি কেন আমাকে কোচিংয়ে ভর্তি করালে?’ আমি বললাম, আমি তো তোমাকে ভর্তি করাতে চাইনি। কিন্তু পরিচিত সবার ছেলেমেয়েই কোচিংয়ে যায়। তাই তোমাকেও দিতে হলো।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, আমাদের অস্ট্রেলিয়া জীবনের তিন বছর ইতিমধ্যেই পার হয়েছে। আমরা তাহিয়াকে কোনো কোচিং বা প্রাইভেট টিউশনিতে দিইনি। কারণ বাংলাদেশ ছেড়ে অস্ট্রেলিয়া আসার অনেক কারণের একটা ছিল বাচ্চাদের একটা সুস্থ স্বাভাবিক শৈশব উপহার দেওয়া। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া আসার পর আমার সেই ভুল ভেঙে গেছে। এখানকার প্রায় সব বিদেশি বাচ্চাই একাধিক কোচিং ও টিউশনে যায়। বিশেষ করে এশিয়ান বংশোদ্ভূত বাচ্চাগুলো। আমি অন্য দেশের বাচ্চাদের খুব একটা চিনি না। কিন্তু বাংলাদেশি যাঁদের চিনি, তাঁদের সবার বাচ্চাই কোচিংয়ে যায়।

অস্ট্রেলিয়া আসার পর আমার খুব কাছের এক বড় ভাই বলেছিলেন, ‘তুমি বাচ্চাদের লেখাপড়া নিয়ে এত উতলা হয়ো না। এখানে স্কুলেই সব শিখিয়ে দেয়। বাসায় কিছুই করাতে হয় না।’ শুনে আমি বেশ খুশি হয়েছিলাম। কারণ এমনই একটা পরিবেশ আমি চেয়েছিলাম। কিছুদিন পর জানতে পারলাম, সেই বড় ভাই তাঁরা বাসা নিয়েছেন এমন জায়গায়, যেখানে একটা ভালো পাবলিক স্কুল আছে। আর তাঁর বাচ্চা অস্ট্রেলিয়া আসার কিছুদিন পর থেকেই কোচিংয়ে যায়।

এ কথা শুনে খুবই হতাশ হয়েছিলাম। তার পরও আমি আমার মেয়েকে কোচিংয়ে না দেওয়ার ব্যাপারে অনড় ছিলাম। কিন্তু একদিন আমার সহধর্মিণী আমাদের মেয়ের সহপাঠী একজনের মায়ের সঙ্গে আলাপ করে এসে আমাকে বলল, তাহিয়াকে কোচিংয়ে দিতে হবে। আমি যথারীতি রাজি হলাম না। এর উত্তরে সহধর্মিণী বলল, তাহিয়া বড় হয়ে যখন বলবে, তোমরা আমাকে কোচিংয়ে দিলে আমার ক্যারিয়ারটা আরও ভালো হতো। তখন কী উত্তর দেব? এরপর বাধ্য হয়েই একটা টার্মের মাঝামাঝি মেয়েকে কোচিংয়ে ভর্তি করেছিলাম।

যা হোক, সেদিন তাহিয়াকে বললাম সমস্যাটা কী সেটা বলো। উত্তরে তাহিয়া বলল, আজ গত পরীক্ষাগুলোর ফলাফল দিয়েছে। যথারীতি ওর ফলাফল ভালো হয়নি।

আমি তাহিয়াকে বললাম, কোচিংয়ের ফলাফল দিয়ে জীবনে কিছুই যায়-আসে না। আমি জীবনে কখনোই কোচিং করিনি। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার আগে একটা কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছিলাম মডেল টেস্ট দেওয়ার জন্য। প্রথম দুটো টেস্ট দিয়ে ৪০০-র মধ্যে প্রথমটাতে ১৩৮ আর দ্বিতীয়টাতে পেয়েছিলাম ১৪৩। এরপর আমি আবার কুষ্টিয়ায় ফিরে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি যতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম, সব কটিতে চান্স পেয়েছিলাম।

আমার উত্তর শুনে তাহিয়ার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। কিন্তু পরমুহূর্তেই আবার কালো হয়ে গেল। আমি বললাম, আবার কী হলো? তাহিয়া বলল, ‘কিন্তু মা তো মন খারাপ করবে।’ আমি বললাম, ‘মাকে আমরা এই ফলাফলপত্র দেখাব না।’ বলে আমি ফলাফলপত্রটা নিয়ে ভাঁজ করে গাড়ির সিডি রাখার বাক্সের মধ্যে রেখে দিলাম।

কিন্তু পরে তাহিয়ার মা কীভাবে যেন সেটা খুঁজে পেয়েছিল। তাহিয়া বলল, ওর মা ফলাফলটা খুঁজে পেয়েছিল। আমি বললাম, ঠিক আছে এরপর আর খুঁজে পাবে না। পরেরবার আমরা বুদ্ধি করে ফলাফল বাসার সামনে রাখা রেড বিনে ফেলে দিয়েছিলাম। রেড বিনে গৃহস্থালির সব নোংরা ফেলা হয়, তাই সেখান থেকে বিকট গন্ধ বের হয় সব সময়। এই গন্ধ উপেক্ষা করে কেউ এর মধ্যে থেকে ফলাফলটা উদ্ধার করতে যাবে না। তাহিয়াকে বললাম, মা এবার ফলাফল চাইলে বলবে, বাবাকে দিয়েছি। বাবা-মেয়ের বোঝাপড়াটা আমাদের এমনই।

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থাটা এতটাই ভয়ংকর যে, দিন শেষে সবকিছুর মূল্যায়ন হয় কে কত টাকা আয় করছে। যিনি আয় করেছেন তিনি কীভাবে টাকা আয় করেছেন, সেটা কারও বিবেচনার বিষয় নয়। কেউ কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা অবৈধভাবে আয় করেন। কিন্তু যিনি সৎভাবে আয় ও জীবন যাপন করতে গিয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে ফেলছেন, আমরা তাঁকে দিচ্ছি নানা উপাধি।

এর বাইরে চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ আরও কিছু পেশাধারীর আয় সবার নজরে আসে। তাই সবারই মনের কোণে একটাই লক্ষ্য, তাঁদের ছেলেমেয়ে বড় হয়ে তা-ই হবে। কিন্তু মেডিকেল কলেজ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা সীমিত, তাই তাঁদের ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হয়। তারাও বেশ ভালো করছে। দিন শেষে অভিভাবকেরা তাঁদের ভুল বুঝতে পারেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, পরের প্রজন্মও ঠিক একইভাবে তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। হয়তোবা নিজেদের ওপর অত্যাচারের শোধ নেওয়ার জন্যই।

প্রবাসী প্রজন্মের মধ্যে এই হীনম্মন্যতা আরও বেশি কাজ করে। সোনার হরিণের আশায় বিদেশে এসে বেশির ভাগ মানুষই তাঁদের ভাষায় অড জব করেন। যদিও বিদেশিরা অড বলে জবগুলোকে ভাগ করেন না। প্রবাসী প্রজন্ম যখন তাদের কর্মক্ষেত্রের সহকর্মীদের গল্প নিজস্ব পরিচিত মহলে করেন তখন তারা সহকর্মীদের ‘তুই’ বলে সম্বোধন করেন। এটা থেকেই প্রমাণ হয় যে তাঁরা সেই কাজে বা সেই পদে সন্তুষ্ট নন। আর কোনো কিছু হলেই বলে বসেন, ‘... রেসিস্ট, তাই আমাদের বাদামি রঙের মানুষদের ওপরে উঠতে দেয় না।’

আমি জানি না এই কথাগুলোর সত্যতা কতখানি। আমি ছোট একটা চাকরি করি। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমন কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি। বরং উল্টো তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন রকমের সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছি। আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে প্রবাসী প্রজন্ম বিভিন্নভাবে স্কিলড হলেও তাঁদের কমিউনিকেশন লেভেলের অবস্থা খুবই খারাপ। তাঁরা অনেক কিছুই পারেন কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে পারেন না। আবার কোনো অফিসে কাজ করা অবস্থায় নিজের চারপাশে এত বেশি দেয়াল তুলে রাখেন যে, সেই দেয়াল ভেদ করে তিনি তার সহকর্মী বা বসদের কাছে পৌঁছাতে পারেন না ঠিকমতো।

বাচ্চাদের কোচিংয়ে দেওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে আমি আমার অজি বসের সঙ্গে আলাপ করেও একই মতামত পেয়েছিলাম। তিনি বললেন, ‘শোনো, তোমরা বাচ্চাগুলোকে অনেকটা ইনকিউবেটরে রেখে বড় করো। তাই তারা ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার যা-ই হোক না কেন, বাইরের বাস্তব দুনিয়া সম্বন্ধে তাদের ধারণা থাকে মোটামুটি শূন্যের কোঠায়। তাই তারা প্রফেশনাল লাইফে তেমন একটা শাইন করতে পারে না।’

প্রবাসীরা নিজেরা যেহেতু ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে পারেননি, তাই উঠেপড়ে লাগেন তাঁদের বাচ্চাদের দিয়ে সেই ক্ষতটা ঢাকতে। তাই বাচ্চাগুলোকে বিভিন্ন কোচিং ও টিউশনে দিয়ে তাদের জীবনটা দিনে দিনে দুর্বিষহ করে তোলেন। আমি বাচ্চাদের সঙ্গে অনেক মিশি। তাই তাদের এই উপলব্ধিগুলো টের পেয়েছি। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, এখানে স্কুল পর্যায়ে যে কম্পিটিটিভ পরীক্ষাগুলো আছে, সেগুলোর সার্কুলারে পরিষ্কার বলা আছে, এই পরীক্ষার জন্য বাচ্চাদের পড়ার জন্য আলাদাভাবে চাপ দেওয়া যাবে না। কারণ এই পরীক্ষাগুলো অ্যাকাডেমিকালি গিফটেড স্টুডেন্টদের জন্য। কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়ে গেছে যে, সবাই তাঁদের বাচ্চাদের কোচিং বা টিউশনে দিয়ে গিফটেড প্রমাণ করার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করছে।

প্রাথমিক স্কুল পর্যায়ে অ্যাকাডেমিকালি গিফটেড বাচ্চাদের আলাদা করার জন্য একটা পরীক্ষা হয়, নাম তার ওসি টেস্ট। আমি যেহেতু বাচ্চাদের লেখাপড়া নিয়ে ভাবিত নই, তাই এগুলো আমার জানা ছিল না। অবশেষে সহধর্মিণীর পীড়াপীড়িতে এক বন্ধুর কাছ থেকে লিংক নিয়ে তাহিয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করলাম। এরপর সহধর্মিণী বলল, কোচিংয়ে গেলে একই সঙ্গে সব বিষয় পড়া হয়ে যেত। তাহলে আর ওসি টেস্টের জন্য এখন আলাদাভাবে ভাবতে হতো না। আমি এই কথার উত্তর দিইনি। কারণ কোচিংয়ের পরীক্ষায় খারাপ করার পর আমি আর তাহিয়াকে ওখানে পাঠাইনি।

এরপর শুরু হলো শিক্ষক খোঁজা। বাংলাদেশিদের মধ্যে অনেকেই টিউশন করাটাকে এখানে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সোজা কথায়, সিডনিতেও টিউশনের ব্যবসার রমরমা অবস্থা। কোনো পুঁজি ছাড়াই সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা ও টিউশন করে এখানে বিশাল সম্পদের মালিক হয়েছেন অনেকেই। অবস্থা এতটাই খারাপ পর্যায়ে গেছে যে টিউশনে স্থান পেতে হলে আগে থেকেই বাচ্চার নাম লিখিয়ে রাখতে হয়।

কে কত ভালো পড়ে, সেটা নিয়ে আছে বিভিন্ন ধরনের গুজব। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, অনেক অভিভাবক তাঁদের বাচ্চা কোথায় পড়ে, সেটা পর্যন্ত বলতে চান না। ইন্টারনেটের বদৌলতে ইতিমধ্যেই শ্যাডো এডুকেশন বিষয়ে কিছু পড়াশোনা করেছি। সেখানে দেখলাম বিশ্বের পরিস্থিতি আসলেই অনেক খারাপ। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালে রিপাবলিক অব কোরিয়াতে এলিমেন্টারি স্টুডেন্টদের শতকরা ৮৯ দশমিক ৪ শতাংশ প্রাইভেট টিউটোরিংয়ের আওতায় ছিল।

যা হোক, মূল বিষয়বস্তু থেকে অনেক দূরে সরে এসেছি। আমি যেহেতু একজন ফালতু বাবা, তাই আমি আমার ছেলেমেয়েদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের দিকটাতেই ফোকাস করছি। ছেলে বা মেয়ে হওয়ার আগে তারা যেন একজন মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে পারে, আমার নজর সেদিকেই। দেশে থাকতে আমি যে দোকান থেকে চুল কাটাতাম, আমার মেয়েকেও একই নাপিতের কাছ থেকে চুল কাটাতাম। পরে বুঝতে পারলাম আমি আসলে কতটা আনাড়ি।

অস্ট্রেলিয়া আসার পর এখানকার বাচ্চারা ওকে বয় বয় বলে বুলিং করত শুরুতে। অবশ্য চুল বড় হয়ে যাওয়ার পর আর সেই সমস্যাটা নেই। এখন শুরু হয়েছে লেখাপড়া নিয়ে যুদ্ধ। আমি বরাবরের মতোই ওয়াকওভার দিয়ে দেওয়ার পক্ষে। আমার স্বপ্ন হচ্ছে ওরা শারীরিকভাবে বড় হওয়ার পাশাপাশি মানবিক অনুভূতিপ্রবণ মানুষ হিসেবে বড় হোক। তারপর নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী কর্ম বেছে নিক। প্রবাসী প্রথম প্রজন্ম যেমন সব সময়ই কর্ম হারিয়ে ফেলার আশঙ্কায় ভোগে ও নিজের জীবনটাকে অতিষ্ঠ করে তোলে। ওদের জীবন যেন তেমন না হয়। যা-ই করুক, সেটা যেন আন্তরিকতা আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে করে। তাহলে সেই কাজে সাফল্য অবধারিত। এগুলো এই যুগের তুলনায় আসলেই অনেক ফালতু ভাবনা। তবে আমি এমন ভাবতেই ভালোবাসি। কারণ আমি একজন ফালতু বাবা। দুনিয়ার সব শিশু একটা আনন্দময় শৈশব-কৈশোর পার করে কর্মজীবনে প্রবেশ করুক। শুধু তাহলেই ভবিষ্যতের পৃথিবী মানুষের বসবাসের উপযোগী থাকবে।