পাগলা স্বামী

মাসুক হেলাল
মাসুক হেলাল

হাতে একটা কাগজ নিয়ে বউয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু তিনি আইপ্যাডে এতটাই নিমগ্ন যে একবার চোখ তুলেও তাকালেন না। সম্ভবত ফেসবুকে ডুব দিয়েছেন।

বউকে বললাম, তুমি কি ব্যস্ত?

: তোমার কি ধারণা?

স্ক্রিন থেকে চোখ না সরিয়ে উল্টো প্রশ্ন করল।

: আমার ধারণা তুমি আজাইরা কাজে ব্যস্ত।

: তোমার তো তাই মনে হবে। কারণ, এই দুনিয়ায় তুমিই একমাত্র ব্যক্তি যে শুধু যৌক্তিক কাজে ব্যস্ত থাক। আর দুনিয়ার বাকি সবাই আজাইরা কাজে ব্যস্ত।

আইপ্যাড থেকে চোখ না সরিয়েই সে আমার সঙ্গে কথা বলছে। সম্ভবত আমাকে অবজ্ঞা করছে। কিন্তু বুঝতে পারছি না, এই কারণে আমার এখন অপমানিত বোধ হওয়া উচিত কিনা? অবশ্য এই মুহূর্তে মানসম্মান নিয়ে মাথা ঘামাতে ইচ্ছে করছে না।

: তুমি কি কষ্ট করে একবার আমার দিকে একটু চোখ তুলে তাকাবে?

গলায় একটু আবেগ ঢেলে স্ত্রীকে বললাম।

: অবশ্যই তাকাব। কেন তাকাব না, তুমি আমার একটি মাত্র স্বামী। নাও চোখ-মন সব তুলেই তাকালাম। বলো কী বলবে।

: এখানে একটা নতুন লেখা লিখেছি। একটু দেখ তো কেমন হয়েছে।

: সরি আমি এখন খুবই ব্যস্ত। তোমার রচিত সাহিত্য পড়ার মতো সময় আমার নেই।

: আহারে কলিযুগের স্ত্রী! ফেসবুকের জন্য সময় আছে অথচ স্বামীর জন্য সময় নাই। আচ্ছা তোমার কাছে কে বড়? ফেসবুক না স্বামী।

: বাজে বকবে না। আর সব সময় ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল করবে না। ফেসবুকের জায়গায় ফেসবুক বড়, আর স্বামীর জায়গায় স্বামী বড়।

: বুঝলাম, কিন্তু দুইটাকে এক জায়গায় করলে কে বড়?

: আচ্ছা তুমি সব সময় এত প্যাঁচাও কেন?

: আমি তো প্যাঁচাচ্ছি না, আমি শুধু তোমার কাছে আমার অবস্থানটা কোথায় তা জানতে চাচ্ছি।

: ভাইরে মাফ চাই। আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি মোটেও ব্যস্ত না। আমার হাতে অফুরন্ত সময়। দাও তোমার লেখা পড়ি। তা কী লিখেছ?

: ওটাই তো সমস্যা, কী যে লিখলাম বুঝতেছি না।

: মানে কী!

: মানে কিছু না। একটা রোমান্টিক লেখা লিখেছি। কিন্তু এখন এটা কবিতা না ছড়া, কী যে হলো বুঝতেছি না।

: আচ্ছা যা পার না তা করতে যাও কেন? তোমারে তো কেউ মাথার দিব্যি দেয়নি যে তোমার লিখতেই হবে।

: সত্যি বলতে কী, একজন দিয়েছে।

: কে সে? নিশ্চয় কোনো মেয়ে, তাই না? তাই তো বলি হঠাৎ করে বদমাশ ব্যাটা সাহিত্যচর্চা শুরু করল কেন?

: আরে না, কোনো মেয়ে না। তাহলে তোমাকে ঘটনাটা খুলেই বলি। গত সপ্তাহে স্বপ্নে এক বাবাকে দেখলাম। তিনি সরাসরি আমার সামনে এসে কোমরে দুই হাত রেখে দাঁড়ালেন। খেয়াল করে দেখলাম তার গায়ে কোনো কাপড় নেই। তিনি পুরোপুরি লেংটা। উনি ওনার পরনের লুঙ্গিটি ভাঁজ করে কাঁধের ওপর যত্ন করে রেখে দিয়েছেন।

আমি বললাম, বাবা আপনি কি লেংটা! লেংটাবাবা বললেন, কেন তুই কি তাও বোঝস না? বললাম, তা বুঝছি, তা বাবা আপনি লেংটা কেন? বাবা বললেন, বৎস খুবই গরম পড়েছে, তাই লুঙ্গিটা খুলে ফেলেছি। গরম লাগলে আমি গায়ে কাপড় রাখি না। আমি বললাম, বাবা, লুঙ্গিতে তো গরম লাগার কথা না। লুঙ্গি তো একটি খোলামেলা ও আরামদায়ক পোশাক। আপনি প্লিজ লুঙ্গিটা পরেন।

উনি বললেন, বেটা তুই তো আমার সবই দেখে ফেলেছিস, এখন আর লুঙ্গি পরে কী হবে? আর তা ছাড়া লেংটা থাকার কী যে মজা তা তুই বুঝবি না। এক কাজ কর তুইও লুঙ্গি খুলে ফেল। দেখবি কী শান্তি। আমি বললাম, নাউজুবিল্লা। বাবা আপনি এগুলো কী বলেন! প্লিজ আমাকে এসব কুবুদ্ধি দেবেন না। এমনিতেই আমার স্ত্রীর ধারণা আমার মাথায় সমস্যা আছে।

বাবা বললেন, তোর কি ধারণা, তোর মাথায় কোনো সমস্যা নাই? বললাম, আমি আসলে শিওর না। থাকলেও থাকতে পারে। বাবা প্লিজ আপনি কাপড় পরেন। আমি লজ্জায় আপনার দিকে তাকাতে পারছি না। বলেই আমি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেললাম। বাবা বললেন, বেটা লজ্জা পাচ্ছিস কেন? লজ্জা করিস না, চোখ খোল। তোরও যা আছে আমারও তা আছে।

আমি বললাম, বাবা আপনার আর আমার কী আছে তা নিয়ে আলোচনা করার কোনো দরকার নাই। তার চেয়ে বলেন আপনি আমার কাছে কেন এসেছেন? বাবা বললেন, শোন তোর কাছে আমি একটা বিশেষ কারণে এসেছি। আমি চাই তুই এখন থেকে লেখালেখি করবি, সাহিত্যচর্চা করবি। আমি বললাম, না বাবা, সাহিত্যচর্চা আমাকে দিয়ে হবে না। আমি হলাম বলদ শ্রেণির মানুষ। বাবা বললেন, কথা সত্য। আমারও তাই মনে হয়। তবু তোকে লিখতে হবে।

আমি বললাম, না বাবা, আমি লিখব না। বাবা বললেন, তুই যদি না লিখিস আমি রোজ রাতে লেংটা হয়ে এসে তোর সামনে এভাবে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকব। শুধু তাই না প্রয়োজনে তোর সামনে লেংটা হয়ে আমি ইয়োগা করব। এখন তুই চিন্তা কর, তুই কী করবি। চিন্তা করে দেখলাম, বাবার লেংটা দেহ দেখার চেয়ে লেখালেখি করাই উত্তম। ব্যস শুরু করে দিলাম। এই হচ্ছে কাহিনি।’

দেখলাম আমার স্ত্রী হা করে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সম্ভবত সে কী বলবে খুঁজে পাচ্ছে না।

কিছুক্ষণ পর বলল, যতক্ষণ জেগে থাক উল্টোপাল্টা কাজ কর। এখন তো দেখছি ঘুমের মধ্যেও তোমার সমস্যা। মানুষ স্বপ্নে পীর-দরবেশ দেখে। আর তুমি দেখ লেংটাবাবা।

: আমি কী করব, আমার স্বপ্নে তো পীর-দরবেশ আসে না।

: আসবে কী করে। পাগলের কাছে তো ভালো মানুষের আসার কথা না।

: আচ্ছা তুমি কি আমাকে অপমান করছ?

: তোমার কি ধারণা?

: ঠিক বুঝতে পারছি না।

: ওটা বোঝার মতো ঘিলু তো থাকতে হবে। আচ্ছা আমাকে একটা প্রশ্নের উত্তর দাও তো। লেংটাবাবা বলল, আর তুমি লেখা শুরু করলে, তুমি লেখক হয়ে গেলে। এখানে যোগ্যতা কোনো বিষয় না। ইচ্ছে হলেই লেখক, কবি, সাহিত্যিক হওয়া যায়?

: অবশ্যই যায়। আমি তো হয়েছি। আর তুমি ফেসবুকে দেখছ না, সবাই কেমন জানি সাহিত্যিক হয়ে যাচ্ছে।

: অন্যদের নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। আমার মাথাব্যথা তোমাকে নিয়ে। তাহলে তুমি বলতে চাচ্ছ তুমি এখন লেখক হয়ে গেছ? তা তুমি কি এখন রবীন্দ্রনাথ লেবেলে আছ, নাকি তাকেও ছাড়িয়ে গেছ।

বুঝলাম, এই মহিলা আমারে অপমান করছে। তবে গায়ে মাখলাম না। অপমান তো আর তেল বা লোশন না, যে গায়ে মাখতেই হবে। আর তা ছাড়া এভাবে অপমানিত না হলে, আঘাত না পেলে তো আর আবেগ আসবে না। সাহিত্যচর্চার জন্য আবেগ খুবই জরুরি জিনিস।

: রবীন্দ্রনাথ লেবেল যেতে তো কিছুটা সময় লাগবে। মাত্র তো শুরু করলাম।

গলার স্বরটা একটু গম্ভীর করে বললাম।

: তাই নাকি? তাহলে তো তুমি অনেক বড় এক প্রতিভা। আমার তো মনে হচ্ছে এখনই তোমার অটোগ্রাফ নিয়ে রাখা উচিত। বলা তো যায় না পরে হয়তো অটোগ্রাফের জন্য আবার লাইন ধরতে হবে।

মনে মনে ভাবলাম তুমি যত ইচ্ছে টিটকারি কর। আমি গায়ে মাখছি না।

: তা তো নিয়ে রাখতেই পার। অবশ্য তুমি আমার ওয়াইফ হিসেবে মনে হয় না তোমাকে লাইন ধরতে হবে। তা এখন একটু পড়ে দেখ না লেখাটা কেমন হলো।

: শোনো তুমি তোমার লেংটাবাবার আদেশ পালন কর, বড় সাহিত্যিক হও, তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তুমি তোমার সাহিত্যচর্চা নিয়ে প্লিজ আমাকে বিরক্ত করবে না।

: আমি তো তোমারে বিরক্ত করছি না। আসলে আমি তোমাকে নিয়ে একটা রোমান্টিক লেখা লিখেছি, তাই তোমাকে দেখাতে এলাম।

: কী বললা! সত্যি তুমি আমাকে নিয়ে রোমান্টিক কবিতা লিখেছ!

: তোমাকে ছাড়া আর কাকে নিয়ে লিখব? তুমিই তো আমার সব।

: সো সুইট। এক কাজ কর, কবিতাটি তুমি আমাকে আবৃত্তি করে শোনাও।

দেখলাম বউ অনেক আগ্রহ নিয়ে আমার রোমান্টিক কবিতা শোনার জন্য তাকিয়ে আছে। আমি গলার স্বর কাঁপিয়ে টেনে টেনে সুর করে পড়তে লাগলাম—

তুমি আমার বধূ
তুমি আমার কদু।
আমার বুকে তোমার ছবি
তুমি আমার ফুলকপি।
তোমার...।

এ পর্যন্ত পড়েই থেমে গেলাম। খেয়াল করলাম বউ ভুরু কুঁচকে মুখটাকে সরু করে আমার দিকে কীভাবে যেন তাকিয়ে আছে।

: তুমি এভাবে তাকিয়ে আছ কেন?

: বদমাশ ব্যাটা এই তোর রোমান্টিক কবিতা! এগুলো কী লিখছস? আমি কদু! আমারে তোর ফুলকপি মনে হয়?

: রাগ করছ কেন? আসলে ছন্দ মেলাতে পারছিলাম না। তাই বধূর সঙ্গে কদু দিয়ে দিছি। আর তা ছাড়া এগুলো তো উপমা।

: এগুলো উপমা?

: কেন ভালো হয়নি?

: বদমাশ ব্যাটা, দুনিয়ার কোনো মানুষ কি তার স্ত্রীকে কদু আর ফুলকপি বলে! শোনো আজ থেকে তোমার সব লেখালেখি বন্ধ। তোমার এসব ফালতু লেখা মানুষের চোখে পড়লে আমার মানসম্মান থাকবে না। আমি নিশ্চিত তোমার এসব লেখা যেই পড়বে সেই তোমারে মারার জন্য লাঠি নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় খুঁজবে।

: মনটায় চায় ঘুষি মেরে নাক ফাটায়ে দিই।

: কি বললা, তুমি আমারে ঘুষি মারবে! তুমি আমার নাক ফাটাবে? তোমার এত বড় সাহস।

: আরে তোমারে না? তোমারে মারার সাহস কী আমার আছে? যে ব্যাটারা বলে সফল পুরুষের পেছনে নারীর হাত থাকে, আমি তাদের নাকের কথা বলছি। ভেবেছিলাম তুমি আমার স্ত্রী হিসেবে আমাকে উৎসাহ দেবে। অথচ...।

: আমার মাথা এত খারাপ হয়নি যে তোমার মতো ফালতু লেখককে আমি উৎসাহ দেব। আমি তো তোমার লেখা পড়বই না।

: তুমি আমার লেখা পড়বে না? নিজের বউই যদি না পড়ে তা অন্য পাঠকেরা কি আর পড়বে? পড়বে না। তবে কেউ পড়ুক বা না পড়ুক আমি লিখব। আমি ভাবব, আমি এই যুগের লেখক না, আমি হচ্ছি আদিম যুগের লেখক।

: মানে কী?

: মানে খুবই সহজ। আদিম যুগের লেখক হওয়ার জন্য কোনো যোগ্যতার দরকার নাই। কোনো নিয়মকানুনের দরকার নাই। কারণ, সেই যুগের পাঠকেরা তোমাদের মতো এত শিক্ষিত ছিল না।

: সরি আমি তোমাকে হার্ট করতে চাইনি। কিন্তু যা সত্য তা তো বলতেই হবে। আসলে তোমাকে দিয়ে সাহিত্য হবে না। এটা তোমার লাইন না।

: না হলেও আমি লিখব। প্রতিভা নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। কেউ যদি আমার লেখা পড়ে তাকে ধন্যবাদ। যে পড়বে না তাকেও ধন্যবাদ। তোমার উৎসাহ আমার লাগবে না। তোমার অপমানজনক কথায় আমার মাথা এমনিতেই গরম হয়ে গেছে। রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে।

বলেই টি–শার্টটা খুলে ফেললাম।

: এই তুমি কী করছ?

: কাপড় খুলছি। বাবা বলেছে গরম লাগলে সব কাপড় খুলে ফেলতে। আমার এখন খুবই গরম লাগছে।

: তার মানে তুমি কি এখন লুঙ্গিও খুলবা?

: অবশ্যই খুলব। বাবা বলেছে গরম লাগলে গায়ে কোনো কাপড় রাখা চলবে না।

: মাই গড, এই ব্যাটার মাথা তো পুরাই গেছে। খবরদার বলছি, তুমি লুঙ্গিতে হাত দিবা না। হাত দিলে একেবারে খুন করে ফেলব।

: মানে কী, আমার লুঙ্গি আমি খুলব তোমার সমস্যা কী?

: তুই বাইর হ আমার বাসা থেকে। ব্যাটা মেন্টাল। আমার বাসায় তোর মতো পাগলের জায়গা হবে না।

: তুমি রেগে যাচ্ছ কেন? আর আমি বাসা থেকে বের হয়ে কোথায় যাব?

: তোর লেংটাবাবার কাছে যাবি। তোর মতো পাগলের সংসার আমি করব না।

: আমি তো বাবার ঠিকানা জানি না। তিনি তো শুধু স্বপ্নে আসেন। আমি এখন তাহাকে কোথায় খুঁজিব।

সুর করে টেনে টেনে বললাম।

: খবরদার আমার সঙ্গে কবিতার সুরে কথা বলবে না। বাবার ঠিকানা লাগবে না। তুমি রাস্তায় গিয়ে কাপড় খুলে দাঁড়িয়ে থাক, বাবা নিজেই চলে আসবে।

: কথাটা অবশ্য খারাপ বলনি। তোমার কথায় যুক্তি আছে। তাহলে বাইরেই যাই। রাস্তায় গিয়ে...।

: খবরদার বাসা থেকে বের হলে তোরে আমি বঁটি দিয়ে এক কোপ দেব।

: তোমার সমস্যা কী? বাসায়ও থাকতে দিবা না আবার বাইরে যেতেও দিবা না। তাহলে করবটা কী?

: তোরে আমি পাবনায় নিয়ে যাব। তোর জায়গা ওইখানে।

: এখনই নিয়ে যাবা?

: তুই কি আমার সঙ্গে ফাজলামি করস? দাঁড়া তোর মজা দেখাচ্ছি।

বলেই আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে বাথরুমের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে ঢুকিয়ে দিল। তারপর বাইরে থেকে লক করে দিল।

: তুমি কি আমাকে বাথরুমে আটকায় দিলা?

: কেন তুই কি তাও বোঝস না।

: তা বুঝছি। তবে শিওর হওয়ার জন্য প্রশ্ন করলাম। আচ্ছা আমাকে এখানে কতক্ষণ আটকায় রাখবা?

: পাবনা না নেওয়া পর্যন্ত তুই এখানেই থাকবি। এখানেই খাওয়া-দাওয়া করবি। এখানেই ঘুমাবি।

: সেটা কোনো সমস্যা না। বাথরুমে থাকার মধ্যে একটা শান্তি আছে। এক কাজ কর আমাকে একটা কলম আর একটা খাতা দাও। বাথরুমে বেকার বসে না থেকে কবিতা লিখি। মাথায় কিছু ছন্দ এসেছে। তোমাকে নিয়ে খুবই রোমান্টিক একটা কবিতা হবে।

: তোর কবিতার গুষ্টি কিলাই। আমারে নিয়ে আর কোনো কবিতা লিখলে তোরে আমি খুন করে ফেলব।

: তাহলে কাকে নিয়ে লিখব?

: কাউরে নিয়ে লিখবি না। আজ থেকে তোর কবিতা লেখা বন্ধ। কারণ, তোর কবিতা পড়লে সুস্থ মানুষও পাগল হয়ে যাবে।

: তাহলে আমি এই দীর্ঘ সময় বাথরুমে বসে বসে কী করব?

: কী করবি মানে? তুই না বললি তোর গরম লাগছে। এখন তুই তোর লেংটাবাবার মতো লুঙ্গি খুলে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাক। আর না হলে ইয়োগা কর। ব্যাটা বদমাশ।

: এটা অবশ্য একটা ভালো পরামর্শ। এক কাজ করো ভলিউম বাড়িয়ে দিয়ে একটা রবীন্দ্রসংগীত ছাড়। রবীন্দ্রসংগীতের তালে তালে বাথরুমে ইয়োগা করব।

: এই বদমাশ ব্যাটা বলে কী! ইয়া আল্লাহ দুনিয়ায় এত মানুষ থাকতে তুমি কেন এই বদ ব্যাটারে আমার কপালে জুটাইলা। আমি কী পাপ...।

আমি জানি আগামী কয়েক ঘণ্টা এভাবেই তার বকবক চলতে থাকবে। খামাখা তার বকবক শুনে সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। তার চেয়ে বরং ইয়োগা শুরু করি। গানের তালে তালে ইয়োগা করতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু এই মহিলা আমাকে সেই সুযোগ দেবে না। এর থেকে বরং নিজেই গান গেয়ে গেয়ে ইয়োগা করি। যেহেতু গরম লাগছে সেহেতু কাপড় পরে থাকারও কোনো মানে হয় না। লেংটাবাবার শিষ্য হিসেবে তাকে ফলো করাটাও আমার নৈতিক দায়িত্ব।

সব প্রস্তুতি শেষ করে ইয়োগা শুরু করলাম। সেই সঙ্গে বাথরুমে গলা ফাটিয়ে গান ধরলাম।

‘দিলবার দিলবার ও দিলবার দিলবার
দিলবার দিলবার ও ও ও দিলবার দিলবার...।’

ঠিক সেই মুহূর্তে বাথরুমের বাইরে থেকে বউয়ের চিৎকার।

: ওই শয়তান ব্যাটা তুই থামবি। না হলে দিলবার তোর...(প্রকাশযোগ্য নয়)।

না এই মহিলার সঙ্গে আর থাকা যাবে না। কারণ, এই মহিলা আমার প্রতিভার বিকাশ হতে দেবে না।

বি. দ্রষ্টব্য: মাঝে মাঝে ইচ্ছে করেই পাগলামি করি। উল্টোপাল্টা কথা বলি। কেন জানি মানুষকে বিভ্রান্ত করতে আমার ভালো লাগে। তবে আমি মজা করার জন্যই মানুষকে বিভ্রান্ত করি। কারও ক্ষতি করার জন্য নয়। আর এই বিভ্রান্তটা বেশি করি আমার স্ত্রীকে। তবে আমি যে ইচ্ছে করে মজা করার জন্য এগুলো করি সে এটা বুঝতে পারে না। তার ধারণা আসলেই আমার মাথায় সমস্যা আছে।

বিশেষ দ্রষ্টব্যের বিশেষ দ্রষ্টব্য: আমরা সবাই এখন লেখক হতে চাই। লেখক হতে চাওয়াটা অন্যায় নয়। তবে এর জন্য কিছুটা লেখাপড়া, কিছুটা প্রস্তুতির দরকার আছে। যেটা আমরা অনেকেই করি না। অন্যের কথা কী বলব আমি নিজেই তো করি না।