বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে উপযুক্ত মজুরি নিশ্চিতের আহ্বান

পিএলডব্লিউএফের আয়োজনে ব্যবসায়ী, ব্যাংক, এনজিও ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিনিধিদের সম্মেলন। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস
পিএলডব্লিউএফের আয়োজনে ব্যবসায়ী, ব্যাংক, এনজিও ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিনিধিদের সম্মেলন। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস

বাংলাদেশে পোশাকশিল্পে উপযুক্ত মজুরি নিশ্চিত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে। কিন্তু উপযুক্ত মজুরি প্রস্তুতকৃত পোশাকের যথার্থ মূল্যের ওপর বিরাট অংশে নির্ভরশীল।

নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে প্ল্যাটফর্ম লিভিং ওয়েজ ফিনান্সিয়ালসের (পিএলডব্লিউএফ) আয়োজনে ব্যবসায়ী, ব্যাংক, এনজিও ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিনিধিদের এক সম্মেলনে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল এ মন্তব্য করেন।

দেশটিসহ সর্ব ইউরোপিয়ান পোশাকশিল্পের বিখ্যাত ব্র্যান্ড, যেমন: H&M, G-Star Raw, C&A, ACT, Clean Cloth Campaign, GAP, Espiritt, Rabo Bank, ROBECO ইত্যাদি ব্র্যান্ড, ইউনিয়ন, ব্যাংক ও বিভিন্ন এনজিওর শতাধিক প্রতিনিধিকে নিয়ে গতকাল বুধবার (৯ অক্টোবর) এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের উন্নয়নের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ২০০৬ সালে ন্যূনতম মজুরি ছিল মাত্র ১ হাজার ৬৬২ টাকা, ২০১৮ সালে তা ৮ হাজার টাকায় নির্ধারণ করা হয়। পোশাকশিল্পে লিভিং ওয়েজ দিতে বাংলাদেশের কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়, যদি ব্র্যান্ডস ও বিভিন্ন আমদানিকারক পোশাকের যথার্থ মূল্য নির্ধারণ করে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, বিগত চার বছরে প্রস্তুতকৃত পোশাকের ইউনিটপ্রতি মূল্য ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ কমলেও পোশাক প্রস্তুত খরচ বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। তাই তিনি গুরুত্বের সঙ্গে সব ব্র্যান্ডস, ব্যাংক ও এনজিওদের সাপ্লাই চেইনের শেষ প্রান্তে মনোযোগী হয়ে বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত পোশাকের যথাযথ মূল্য নিশ্চিতকরণের আবেদন করেন।

সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন শেখ মুহম্মদ বেলাল। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস
সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন শেখ মুহম্মদ বেলাল। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস

শেখ মুহম্মদ বেলাল রানা প্লাজা ধস–উত্তর বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে উন্নয়নের বর্ণনা দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক প্লাটিনাম রেটেড তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে। ২৫টি বাংলাদেশি তৈরি পোশাকশিল্প যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের সর্বোচ্চ সনদ অর্জন করেছে। পৃথিবীর প্রথম সারির ১০টির মধ্যে ছয়টি লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিজাইন (এলইইডি) সত্যায়িত পোশাক কারখানার অবস্থান বাংলাদেশে।

শেখ মুহম্মদ বেলাল বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে এলইইডি সত্যায়িত পরিবেশবান্ধব কারখানার সংখ্যা ৯১, যা সারা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। এ ছাড়া আরও ৫০০ তৈরি পোশাকশিল্প শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের সনদ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত বেলাল উপস্থিত সুধীজনের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি আইএলওসহ বিভিন্ন দেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে চলমান উন্নয়ন কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করে মন্তব্য করেন, বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের যুগান্তকারী উন্নয়ন থেকে অন্য পোশাক প্রস্তুতকারী দেশগুলো অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে সারা বিশ্বের কর্মজীবী মানুষের জীবনযাত্রায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে।

সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন একজন প্রতিনিধি। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস
সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন একজন প্রতিনিধি। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস

উল্লেখ্য, পিএলডব্লিউএফ বিনিয়োগে জড়িত ১২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের একটি সংগঠন, যারা বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনে অপরিশোধিত লিভিং ওয়েজ পরিশোধে উৎসাহ প্রদান ও তদারকি করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান মূলধন ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ইউরোর ওপরে। এর সদস্যরা হলো a. s. r. ABN AMRO, Achmea Investment Management, Amundi, ASN Bank, ING, Kempen Capital Management, MN, NN Investment Partners, PGGM, Robeco and Triodos Investment Management. বিজ্ঞপ্তি