পর্যটকদের স্বর্গ মেওয়কা

সপরিবার লেখক। ছবি: লেখক
সপরিবার লেখক। ছবি: লেখক

বেড়ানোটা আমার শখ। বেড়াতে চাই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। কিন্তু সব সময় চাইলেই যাওয়া যায় না। টাকা-পয়সার ব্যাপার আছে। ছুটির ব্যাপার আছে। ছেলের স্কুল। সব সময় ব্যাটে–বলে হয় না।

লন্ডনে অনেক পর্যটন কোম্পানি আছে, যারা হলিডে প্যাকেজ অফার করে। বিভিন্ন পর্যটন শহরে। আমি ঘুরে ঘুরে এসব অফার দেখি। সুন্দর সুন্দর সমুদ্রসৈকতের ছবি। সুইমিং পুলের ছবি। সুন্দর সুন্দর হোটেলের ছবি। এগুলো তারা তাদের অফিস ঘরের কাচে লাগিয়ে রাখে।

এসব দেখে দেখে বিভিন্ন জায়গা নিয়ে আমার কৌতূহল। সবচেয়ে বেশি কৌতূহল যে জায়গাটার প্রতি, তার নাম মেওয়কা। স্পেনের একটি দ্বীপ। এটাকে বলা হয় ট্যুরিস্ট হ্যাভেন। নীল পানি আর সাদা বালুকাময় সৈকতের জন্য খ্যাত।

আমি অনেক দিন যাবৎ সেখানে যেতে চাইছি। কিন্তু আমার ছেলে পছন্দ করে অন্য জায়গা। তার পছন্দই আমাদের কাছে চূড়ান্ত বলে গণ্য হয়। এবার কী বুঝে ছেলে বলে উঠল, বাবা, এবার মেওয়কাতে চলো। আমি খুশি।

ভালো একটা অফারও পেয়ে গেলাম। চার তারকা রিসোর্টে। টিকিট কাটা হয়ে গেল। ভ্রমণের তারিখ আসন্ন। দুদিন আগে হঠাৎ বউ বেঁকে বসল। সে যেতে চায় না।

জিজ্ঞেস করলাম, ব্যাপার কী?

বউ বলল, সে একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছে। বিমান দুর্ঘটনা। সে যাবে না। আমাদেরও যেতে দেবে না। সে বাঁচতে চায়। অনেক দিন।

বললাম, ইতিমধ্যেই সব টাকা–পয়সা পরিশোধ করা হয়েছে। না গেলে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না।

মেওয়কা দ্বীপে ছেলের সঙ্গে লেখক। ছবি: লেখক
মেওয়কা দ্বীপে ছেলের সঙ্গে লেখক। ছবি: লেখক

বউ পড়ল সমস্যায়। একদিকে জানের ভয়, অন্যদিকে টাকার মায়া।

ছেলে বলল, মা, তুমি এত ভয় পাও কেন। সব স্বপ্ন কি সত্যি হয়?

অবশেষে বউ রাজি হলো। দোয়া-দরুদ পড়তে পড়তে প্লেনে উঠল। তার দোয়া-দরুদ পড়া দেখে আমার মনেও কিছুটা ভয় এল। দোয়া-দরুদ আমিও পড়লাম। বলা তো যায় না, স্বপ্ন যদি সত্যি হয়ে যায়। সে দোয়া-দরুদ পড়ল প্রকাশ্যে। আর আমি পড়লাম মনে মনে।

আর ছেলে? এসবে তার মন নেই। সে প্লেনের জানালা দিয়ে মেঘ দেখে আর ভাবে, ফ্রান্সের ওপরে আছি নাকি স্পেনের? বউ ভয়ে জানালার দিকে তাকায় না। পড়লেই মৃত্যু। নিচে উত্তাল সাগর।

বিকেল পাঁচটায় এসে মেওয়কায় নামলাম। বাহ্‌, কী চমৎকার রোদ! মনটা ভালো হয়ে গেল। লন্ডনে বৃষ্টি রেখে এসেছি। ঠান্ডা। এখানে চমৎকার আবহাওয়া। বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সি পাচ্ছি না। ফোন দিলাম ট্যাক্সি কোম্পানিকে, আমার ট্যাক্সি কোথায়? ট্যাক্সি বুক করেছিলাম। কথার মাঝখানেই ট্যাক্সি নিয়ে চালক হাজির।

ট্যাক্সিতে উঠলাম। স্প্যানিশ ট্যাক্সিচালক গান ছেড়ে দিল। মাইকেল জ্যাকসনের গান। গান শুনতে শুনতে পথ মাড়াচ্ছি।

বিমানবন্দর থেকে হোটেলের দূরত্ব প্রায় ৩৫ মাইল। চারদিকে সুদৃশ্য পাহাড়। সবজির খামার।

বউ কিছুক্ষণ পরপর লাফ দিয়ে উঠছে, কী সুন্দর কৃষকের বাড়িঘর।

বললাম, আমাদের কৃষক আর এই কৃষকের পার্থক্য হলো এই কৃষকের গাড়ি আছে। আমাদের কৃষকের নেই।

হঠাৎ বউ লাফিয়ে উঠে বলল, ওই দেখো কত খেজুরগাছ। খেজুরগাছ।

আমি অবাক হয়ে বললাম, কী বলো, ইউরোপে খেজুরগাছ!

বউ আমার সঙ্গে তর্ক জুড়ে দিল।

বললাম, তুমি কি ভাবছ, তুমি এখন মক্কায়?

বউ বলল, না, খেজুরগাছই তো।

না, এটাও দুঃস্বপ্ন। বিমান দুর্ঘটনার মতোই। ঝগড়া ছেড়ে হঠাৎ বউ লাফিয়ে উঠে বলল, আহ্‌, কী সুন্দর। ড্রাইভার, গাড়ি থামাও। নীল সমুদ্র।

বউকে বললাম, থামাতে হবে না। এখানেই আমাদের রিসোর্ট। আমরা এখানেই থাকব।

বউ বলল, কী বলছ তুমি! এখানেই থাকব? এই নীল সমুদ্রের তীরে। এই হোটেলটায়। আহ্‌, কী সুন্দর সুইমিং পুল।

বললাম, এটা স্বপ্ন না। এটাই বাস্তব।

তাঁর যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না। সে খুশিতে আত্মহারা। চলো চলো, হোটেলে ঢুকি। বউ লাফিয়ে লাফিয়ে হোটেলে ঢুকতে লাগল। ছেলেও। তাদের আনন্দ দেখে আমারও অনেক আনন্দ। আসলেই লাইফ ইজ বিউটিফুল।

দুই.

স্পেনে এসেছি। একটা দ্বীপে। মেওয়কায়। যে রিসোর্টে উঠলাম, তার নাম ক্লাব ডিল সল। এলাকার নাম প্যালংকা। বিশাল রিসোর্ট। অনেকগুলো সুইমিং পুল, রেস্তোরাঁ, বার, জিম, স্পা, মিনি শপ। সবই আছে। রিসোর্টের একপাশে সমুদ্র।

আমরা যে অ্যাপার্টমেন্টে উঠেছি, তার ব্যালকনি থেকে সমুদ্র দেখা যায়। সেনডি বিচ ১৫ মিনিট হাঁটার পথ।

ছেলেকে বললাম, সকালে নাশতা সেরে বিচে চলে যাব। কিন্তু ছেলে খুব আলসে। ঘুম থেকে উঠতে চায় না।

মেওয়কা দ্বীপে ছেলের সঙ্গে লেখক। ছবি: লেখক
মেওয়কা দ্বীপে ছেলের সঙ্গে লেখক। ছবি: লেখক

নাশতা করতে করতে বেলা ১১টা বেজে গেল। ছেলে বলল, সুইমিং পুলে যাব। পুলে যাওয়ার আগে সাঁতার কাটার জন্য ইনফ্লেটেবল কেনা চাই, সঙ্গে গগজ। কিনলাম। দাম ৩০ ইউরো। ড্রিংক ও খাওয়াদাওয়া, টাওয়েল নিয়ে পুলে হাজির হলাম। এখন সাঁতারের পালা। ছেলে সাঁতার জানে না। বাচ্চাদের পুলে পড়ে থাকল প্রায় চার ঘণ্টা।

আর বউ তো পুরাই ব্রোজেন দাস। সাঁতার দেয় আর ময়মনসিংহ ভাষায় হাঁকডাক। এত এত সাদা মানুষের ভিড়ে ময়মনসিংহের ভাষায় কথা বলাতে তার কোনো জড়তা নেই। আইছুন, খাইছুন—সবই চলছে।

পুলের একপাশে অনেকগুলো বিছানা পাতা। আগের দিনের রাজা-বাদশারা যে স্টাইলে বসে নর্তকীর নাচ দেখতেন, সে রকম স্টাইল। বালিশ কোলে নিয়ে। ওখানে কিছুক্ষণ শুয়ে রাজা-রাজা ভাব নিলাম। বউ এসে পুলের পাশে শুয়ে থাকা বিকিনিধারী নারীদের উদ্দেশে বলল, খবিস ছেমরিরা, কেমন ন্যাংটা হইয়া...।

বললাম, ওদের সঙ্গে বইও আছে, সেটা দেখো। রুমে ফিরে বউকে বললাম, চলো রেস্তোরাঁয় খেতে যাই। বউ বলল, কোনো দরকার নেই। একবেলা খেলে সাত হাজার টাকা। তাও খাওয়া কী, সালাদ, পাস্তা, এসব। বরং খিচুড়ি বসাইয়া দিই।

বউ খিচুড়ি বসাল, সঙ্গে ডিম বাজি। খাওয়াদাওয়া শেষে বিশ্রামের পালা। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বিছানা ছাড়লাম। তারপর কফি খেয়ে হাঁটতে হাঁটতে রওনা দিলাম সেনডি বিচের দিকে।

সমুদ্রের পাড় ধরে হাঁটছি। বাতাস ধুয়ে নিচ্ছে শরীর। আহ্‌, কী আরাম! রোদও খুব মায়া মায়া। দূরে পাহাড় দাঁড়ানো। কিছু লোক বড়শি দিয়ে মাছ ধরছ সমুদ্রে। এসব দেখতে দেখতেই সেনডি বিচে পৌঁছলাম। বালুর বিচে হাঁটতে খুব আরাম। নরম-নরম। পাথরের বিচে পায়ে ব্যথা লাগে।

আরাম পেয়ে ছেলে বিচ ধরে দৌড়াতে লাগল। জলের সঙ্গে মেতে উঠল খেলায়। সঙ্গে তার মা। একটি কুকুর অসম্ভব আনন্দের সঙ্গে সমুদ্রে সাঁতার কাটছে। সে তীরে ভিড়তে চায় না। তার মনিব একবার তাকে ফিরিয়ে আনে সমুদ্র থেকে। আনার পর আবার সে ঝাঁপ দেয়। সাঁতরায় আর আনন্দে অদ্ভুত এক শব্দ করে। মনিব আনে, সে আবার ছোটে।

আমি অভিভূত হয়ে কুকুরের সমুদ্রবিলাস উদ্‌যাপন করি। আহা, কুকুর, তুমিও সমুদ্র বোঝো। সব মানুষ কি এসব বোঝে? সমুদ্রের বিশালতা? তার স্নিগ্ধতা? হঠাৎ বউয়ের চিৎকারে ঘোর ভাঙে। বউ চিৎকার করে বলছে, রেস্তোরাঁয় চলো, খিদে লাগছে।

রেস্তোরাঁয় গেলাম। সমুদ্র দেখতে দেখতে সন্ধ্যাকালের নাশতা খেলাম। খেয়ে আবার হাঁটতে লাগলাম সমুদ্রের পাড় ঘেঁষে। রিসোর্টের উদ্দেশে। তখন অন্ধকার নেমে এসেছে মেওয়কার রাস্তায়। বাতাস খেতে খেতে, সমুদ্র দেখতে দেখতে আমরা পথ মাড়াই। আর চেয়ে দেখি, কী সুন্দর চাঁদ জেগে আছে আকাশে!

মেওয়কা দ্বীপে ছেলের সঙ্গে লেখক। ছবি: লেখক
মেওয়কা দ্বীপে ছেলের সঙ্গে লেখক। ছবি: লেখক

ছেলে বলল, বাবা, কেমন লাগছে তোমার? সমুদ্রতীরে হাঁটতে? আমি বললাম, বাবা, আমার তো মনে হয় আমি সুনামগঞ্জেই আছি। সুনামগঞ্জ! হ্যাঁ, সুনামগঞ্জ। আমাদের বাসার সামনে এক বিস্তৃত হাওর আছে, যার বিস্তৃতি দেখতে দেখতে, বাতাস খেতে খেতে আমরা বড় হয়েছি। এটাকে তো সুনামগঞ্জই মনে হচ্ছে।

ছেলে বলল, ওহ বাবা, তোমার সবকিছুতেই সুনামগঞ্জ!

বললাম, ওখানে যে শিকড়, বাবা। আমাদের শিকড়। বাংলাদেশ! ওহ।

তিন.

স্পেনে এসেছি চার দিনের জন্য। দুদিন শেষ। এর আগে আমি কখনোই রিসোর্টে থাকিনি। একবার একটা রিসোর্টে অ্যাপার্টমেন্ট নিয়েছিলাম। প্যারিসে। কিন্তু জায়গাটা মূল কেন্দ্র থেকে দূরে হওয়ায় সেখানে আর যাওয়া হয়নি। হোটেল আর অ্যাপার্টমেন্টে কিছুটা পার্থক্য তো আছেই। অ্যাপার্টমেন্টের সুবিধা হচ্ছে রান্নার সুবিধা থাকে। রুমের সঙ্গে বসার কক্ষ, ডাইনিং, বারান্দা, ফ্রিজ, মাইক্রোওভেন, টোস্টার, সবই থাকে।

লন্ডন ছাড়ার আগে বউকে বলেছিলাম, মাংস ভুনা আর মাছ ভাজি করে নাও। ওখানে শুধু ভাত রান্না করলেই চলবে। কিন্তু বউ আমার সঙ্গে তর্ক লাগিয়ে দিল। তার বক্তব্য, এসব রান্না করা খাবার বিমানবন্দরে আটকে দেবে। অনেক তর্কের পর, সে রাজি হলো। শুধু বিরিয়ানি নেবে, একবেলার জন্য। বিমানবন্দরে আমাদের বিরিয়ানি আটকাল না।

স্পেনে এসে বউ রান্না করে আর নিজে নিজেই আফসোস করে, কেন যে রান্না করে আনলাম না।

আসলে রিসোর্টে তো রেস্তোরাঁ আছেই। বাইরেও। কিন্তু এসব বিদেশি খাবার আমি বড়জোর একবেলা খেতে পারি। তারপর আর মুখে ঢুকতে চায় না। ভাত আমার চাই-ই চাই।

আপনি যেখানেই বেড়াতে যাবেন, নতুন কিছু দেখবেন, কিছু শিখবেন, কিছু সমস্যায় পড়বেন। এগুলো অতিক্রম করতে হয়। যেমন তালা-চাবির কথা। সারা জীবন তালা মেরে এলাম বাইরে থেকে। এখানে এসে দেখলাম, ভেতরে চাবি আটকিয়ে কীভাবে লকারে মূল্যবান জিনিসপত্র রাখতে হয়। দেখলাম খেজুরগাছ শুধু মরুভূমিতে নয়, স্পেনেও বিদ্যমান।

আরও দেখলাম, একটি দ্বীপের মানুষ কতটা নির্ভরশীল পর্যটনশিল্পের ওপর। দেখলাম, কৃষক মানেই গরিব নয়। কৃষকেরও নতুন মডেলের গাড়ি আছে। দেখলাম, ইউরোপ মানেই সাদা মানুষের দেশ নয়। আবহাওয়াভেদে সাদার ওপরও প্রলেপ পড়ে।

আর সমস্যা? একদিন ছেলে গোসল করতে ঢুকল। হঠাৎ দেখি বাথরুম থেকে পানি এসে সমস্ত অ্যাপার্টমেন্টে বন্যা। রিসেপশনে ফোন দিলাম। লোকজন তৎক্ষণাৎ ছুটে এলে। আধ ঘণ্টার মধ্যেই রুম আবার ঝকঝক।

সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়লাম শেষ দিন। বেলা তখন ১১টা। আমরা সুইমিংয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। হঠাৎ রুমের ফোন বেজে উঠল। রিসেপশন থেকে ফোন করেছে। ব্যাপার কী? এখনই আমাদের রুম ছেড়ে দিতে হবে। চেক আউট টাইম ১১টা।

মেওয়কা দ্বীপে ছেলের সঙ্গে লেখক। ছবি: লেখক
মেওয়কা দ্বীপে ছেলের সঙ্গে লেখক। ছবি: লেখক

হায় আল্লাহ, এখন? আমাদের ফ্লাইট রাত ১০টায়। এতক্ষণ আমরা কোথায় থাকব? বউ-ছেলে অস্থির হয়ে উঠল।

রিসেপশনকে বললাম, আপাতত আমাদের একটা রুম দাও, আমি পে করব।

রিসেপশন বলল, কোনো রুম নেই, আর রুমেরই দরকার কী। ব্যাগ-ট্যাগ নিয়ে আসো। আমরা জিনিসপত্র লকারে রেখে দেব। তোমরা ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়াও, সুইমিং করো, রেস্তোরাঁয় খাও, গান শোনো, গোসল করো, সব সুবিধাই তো আছে।

ব্যাগ গুছিয়ে রিসেপশনে গেলাম। গিয়ে দেখি ব্যাগ রাখার বিশাল আয়োজন। আমাদের মতো সাদা–শ্যামলা–কালোনির্বিশেষে অনেক মানুষ ওখানে ব্যাগ রেখে, যার যার মতো ঘুরতে যাচ্ছে। আমরাও গেলাম। ফিরে এসে রেস্তোরাঁয় খেলাম। দেখলাম রিসোর্টে বাচ্চাদের জন্য বেলুনে বাতাস দিয়ে সেই বেলুন পানিতে ছেড়ে দেওয়ার আয়োজন হয়েছে। এক বাচ্চা সাত ইউরো।

ছেলে ১০ ইউরো নিয়ে ছুটল সেখানে। আর আমি আর আমার বউ সুইমিং পুলের পাশের রেস্তোরাঁয় বসে মানুষের আনন্দ দেখি। মানুষ কীভাবে কথা বলে, খায়, হাঁটে, তাদের পোশাক, তাদের বিনোদন।

ইউরোপের মানুষ ভিন্ন। তারা আমাদের মতো চিৎকার করে কথা বলে না। পানিতে পা ডুবিয়েও বই পড়ে। মানুষগুলোর পোশাক খাটো হতে পারে কিন্তু জ্ঞান, সভ্যতায় তারা কোনোভাবেই খাটো নয়। খাটো নয় মানবিকতাতেও। আর সেবা? একজনকে বললাম, জিম কোন দিকে? আমি হলে উত্তর করতাম, ডাইনে গিয়ে মোচড় দিলেই পেয়ে যাবে।

কিন্তু লোকটি করল কী। আমাকে জিমের সামনে এনে বলল, এটা হলো জিমে ঢোকার পথ। স্পা ফ্রি, তোয়ালেও। আর কোনো সাহায্য লাগবে তোমার?

পার্থক্য এই। চার দিন থাকার পর যখন লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দেব, ট্যাক্সি অপেক্ষারত। ট্যাক্সিচালক আমাদের ব্যাগ ঢোকাচ্ছে গাড়িতে। তখন উল্টো ঘুরে রিসোর্টটা আবার দেখলাম রিসেপশনে দাঁড়ানো হাসি হাসি মুখগুলো। খুব মায়া পড়ে গেছে, এই কদিনেই। খুব। বেদনা টের পাই।

হয়তো এই জীবনে আর কখনোই সেখানে যাওয়া হবে না। দেখা হবে না মেওয়কার বিস্তৃত সৌন্দর্য, নীল জল, পাহাড়, বালুর সৈকত। লন্ডনে আবার ফিরছি। ঘরে। কাজে। জীবনের ছকে আঁকা দৈনন্দিন জীবনে।

জীবন খুব ছোট। ছোট আমাদের আয়ের হিসাবও। তারপরও একটু একটু করে জমিয়ে, মানুষকে কিছুটা সাহায্য করে, যেটুকু থাকে, তা নিয়েই স্বপ্ন দেখি, আবারও কোথাও যাওয়ার। স্ত্রী-সন্তানেরও তো অধিকার আছে, আপনার আয়ে, আপনার স্বপ্নে, আপনার আকাঙ্ক্ষায়। জীবন হচ্ছে মিলিয়ে চলা। প্রতিনিয়তই।