স্বাপ্নিক জ্যাকারান্ডা ফুল

জ্যাকারান্ডা ফুল। ছবি: লেখক
জ্যাকারান্ডা ফুল। ছবি: লেখক

অক্টোবর-নভেম্বর মাসে অস্ট্রেলিয়ায় চারপাশে তাকালে প্রায় সব জায়গায় কমবেশি দেখা যায় বেগুনি–নীল রঙের পাতাবিহীন একটি ফুলগাছ। যার নাম জ্যাকারান্ডা। সাধারণত রাস্তার দুই পাশে সারি সারি করে বা বাড়ির সামনে-পেছনে লাগানো হয় আলংকারিক বা সৌন্দর্য বাড়ানো বৃক্ষ হিসেবে।

স্যার জেমস মার্টিনের উদ্যোগে জ্যাকারান্ডা ফুলগাছের বীজ আঠারো শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো থেকে অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম এসেছে বলে ধারণা করা হয়। দেড় শ বছরের কিছু বেশি সময় আগে এ গাছ অস্ট্রেলিয়ায় এসেছে। অথচ বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াবাসী জ্যাকারান্ডা ছাড়া তাদের বসন্তের পরিবেশ চিন্তাই করতে পারেন না।

জ্যাকারান্ডা ফুল। ছবি: লেখক
জ্যাকারান্ডা ফুল। ছবি: লেখক

জ্যাকারান্ডার পাতা দেখতে অনেকটা বাংলাদেশি কৃষ্ণচূড়ার পাতার মতো। ফুলের রং জারুল ফুলের মতো—বেগুনি রঙের এবং কিছু কিছু ফুল নীল রঙের হয়ে থাকে। ফুলের রং ও ছোট ছোট পাতার জন্য আমি এ ফুলের নাম দিয়েছি অস্ট্রেলিয়ার ‘অজি’ ও কৃষ্ণচূড়ার ‘চূড়া’ মিলে ‘অজিচূড়া’। গাছটির উচ্চতাও অনেকটা কৃষ্ণচূড়ার মতো বেশ বড় ও ঝোপালো হয়।

জ্যাকারান্ডা ফুল। ছবি: লেখক
জ্যাকারান্ডা ফুল। ছবি: লেখক

সিডনি শহরের কাছে এবং জ্যাকারান্ডা ফুলের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত উত্তর সিডনির কিরিবিলিতে অবস্থিত ম্যাক ডুগল স্ট্রিট। যেখানে এই সময়ে হাজার হাজার পর্যটক আসেন ফুলের সঙ্গে ছবি তোলার জন্য এবং ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য।

একদিন বিকেলে আমাদের দুই মেয়ে রওজা ও রাহা এবং আমার স্ত্রী বাংলাদেশ থেকে আসা মাকে সঙ্গে নিয়ে জ্যাকারান্ডার সৌন্দর্য উপভোগ করতে যাই। ওখানে দেখা জ্যাকারান্ডা ফুলের সৌন্দর্য লিখে জানানো প্রায় অসম্ভব। দুই পাশে সারি সারি গাছ বড় হয়ে রাস্তার দুই পাশ থেকে মাথার ওপরে ঠিক যেন বেগুনি–নীল রঙের ছাদের মতো। ফুলের মাতাল করা মিষ্টি গন্ধে যে কাউকেই আকর্ষণ করবে। দেখে মনে হবে স্বপ্নের কোনো জায়গায় হয়তো চলে এসেছি।

পর্যটক ও আলোকচিত্রীরা প্রায়ই এখানে ব্যস্ত গাড়ি চলাচলের রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে বসে নানা ভঙ্গিমায় ছবি তোলার চেষ্টা করেন। পর্যটকের ছবি তোলার এ দৃশ্য স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে অনেক বড় চিন্তার বিষয়। সবাই চেষ্টা করেন যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে!

জ্যাকারান্ডার নিজস্ব সৌন্দর্যের জন্য বিভিন্ন দেশের সাহিত্যে এর কথা উল্লেখ আছে। বিভিন্ন দেশে এই ফুল নিয়ে অনেক গল্প কবিতা ও উপন্যাস রচিত হয়েছে। এমনকি কুসংস্কারেও বিভিন্ন জাতিতে রয়েছে জ্যাকারান্ডা ফুলের কথা।

জ্যাকারান্ডা ফুল। ছবি: লেখক
জ্যাকারান্ডা ফুল। ছবি: লেখক

একটু ঝোড়ো বাতাস বা বৃষ্টি হলে এ ফুল ঝরে পড়ে সবুজ ঘাস ও রাস্তার ওপর। দূর থেকে দেখে মনে হয় যেন কেউ বেগুনি রঙের কার্পেট বিছিয়ে রেখেছে। তবে বৃষ্টির সময় খুব সাবধানে গাড়ি চালাতে হয় বা পথ চলতে হয়। কারণ, ফুল আর পানি মিলে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে থাকে।

অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের গ্রাফটনে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে রাস্তাগুলো জ্যাকারান্ডা ফুলে ফুলে বেগুনি হয়ে থাকে। এ উপলক্ষে প্রতিবছর অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ ও নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহব্যাপী চলে জ্যাকারান্ডা উৎসব। গ্রাফটনকে অস্ট্রেলিয়ার জ্যাকারান্ডার রাজধানী বলা হয়।