লন্ডনে আলোকচিত্রে মূর্ত হলো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ

অতিথিরা গভীর আগ্রহ নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী দেখেন। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন
অতিথিরা গভীর আগ্রহ নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী দেখেন। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন

বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবসের ৪৮তম বার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘হৃদয়ে মুক্তিযুদ্ধ: ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি-ব্রিটিশদের অবদান’ শীর্ষক এক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশি-ব্রিটিশদের অনন্যসাধারণ ভূমিকার ওপর যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

গত সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) পূর্ব লন্ডনের ইমপ্রেস ইভেন্ট হলে বিজয় দিবসের আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী ছিল বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবসের ৪৮তম বার্ষিকী উদ্‌যাপনের অন্যতম আকর্ষণ।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে এক মিনিট নীরবতা পালন। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে এক মিনিট নীরবতা পালন। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন

দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম অনুষ্ঠানে আগত বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বিদেশি অতিথিদের কাছে এসব ছবির পটভূমি ও ইতিহাস তুলে ধরেন। আগত অতিথিরা গভীর আগ্রহ নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী দেখেন।

এতে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশি-ব্রিটিশরা লন্ডন, বার্মিংহামসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যেসব আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন এবং আলোচনা, সমাবেশ ও তহবিল সংগ্রহের আয়োজন করেছিলেন সেসব ঐতিহাসিক ঘটনার ৫৭টি আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

এসব আলোকচিত্রের বেশ কয়েকটি বিশিষ্ট ব্রিটিশ আলোকচিত্রী রজার গোয়েনের তোলা। রজার গোয়েন বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে ও পরে বেশ কয়েক বছর ঢাকা, বরিশালসহ বিভিন্ন শহরে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করেছেন। যুক্তরাজ্যে রিকগনাইজ বাংলাদেশ মুভমেন্টের সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন।

আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন
আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন

বাকি আলোকচিত্র নেওয়া হয়েছে বিশিষ্ট বাংলাদেশি-ব্রিটিশ ব্যক্তিত্ব সৈয়দ মোজাম্মেল আলী, বাংলাদেশি-ব্রিটিশ সাংবাদিক তানভীর আহমেদ ও লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনের সংগ্রহ থেকে।

পরে বিজয় দিবসের আলোচনা সভাতেও বক্তারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশি-ব্রিটিশদের ভূমিকার কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বলেন, বাঙালি-ব্রিটিশ সংগঠকেরা যুক্তরাজ্য থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সর্বোচ্চ সমর্থন দিয়েছেন। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায়ে তারা রিকগনাইজ বাংলাদেশ মুভমেন্টসহ বিভিন্ন আন্দোলন করে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন।

হাইকমিশনার বলেন, আজকের আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে তারই প্রতিফলন ঘটেছে। আশা করি, এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশি-ব্রিটিশদের সামনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও এ ক্ষেত্রে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের ভূমিকা তুলে ধরতে সহায়ক হবে।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন

আলোচনা সভায় বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য দেন লর্ড মেয়র অব ওয়েস্ট মিনিস্টার রুথ বুশ, নিউহ্যামের মেয়র রুকশানা ফিয়াজ, ব্যারোনেস পলা উদ্দিন, স্টিফেন টিমস এমপি, লন্ডনের ভারতীয় হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার চরঞ্জিত সিং, বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব জালাল উদ্দিন, নিউহ্যামের ডেপুটি লেফটেন্যান্ট জন বারবার ও লেফটেন্যান্ট মেই সীম লেই ও কর্নেল মার্ক হাম।

আলোচনার পর জাতির পিতার জীবন ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এতে বাংলাদেশি-ব্রিটিশ শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানটি প্রায় আট শ অতিথি ও দর্শক উপভোগ করেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ কমিউনিটির শীর্ষস্থানীয় নেতা, মুক্তিযোদ্ধা, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও অন্য শ্রেণি–পেশার ব্যক্তিরা।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন

অনুষ্ঠানের শুরুতে সবাই মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।

এর আগে সকালে হাইকমিশনে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচির সূচনা করেন হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া করা হয়। বিজ্ঞপ্তি