জাপানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিজয় উৎসব

অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত
অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত

জাপানে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ছড়িয়ে আছেন দেশটির ৪৭টি প্রিফেকচারজুড়ে। এখানকার বাঙালি সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল মূলত দেশটির রাজধানী টোকিওকে ঘিরে। কিন্তু অন্য প্রিফেকচারে বসবাসরত বাঙালিরাও চান দেশটির বিভিন্ন স্কুল-কলেজে অধ্যয়নরত তাঁদের সন্তানদের নিজ দেশের ধর্ম-কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও ভাষার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে। দূর পরবাসে থেকেও নতুন প্রজন্মকে শিকড়ের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করে দিতে।

সেই লক্ষ্যে গতকাল (২২ ডিসেম্বর) দেশটির তোচিগি প্রিফেকচারের আশিকাগায় গুন্মা, তোচিগি ও সাইতামা অঞ্চলের সংস্কৃতমনা বাঙালি ভাইবোনদের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় দ্বিতীয় বিজয় উৎসব।

অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত
অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত

উল্লেখ্য, আমরা যাঁরা প্রবাসে থাকি যেকোনো আয়োজন করে থাকি নির্দিষ্ট দিবসের পরবর্তী রোববার।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৪৮ বছর পূর্তিতে প্রবাসে থেকে পরিবারসহ বিজয় দিবস উদ্‌যাপন করাটা ছিল ভীষণ উপভোগ্য। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠানের প্রতিটি পর্ব ছিল চিত্তাকর্ষক ও শিক্ষণীয়।

অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত
অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত

মো. জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে প্রথমে কোরআন তিলাওয়াত করে ছোট বন্ধু নাফি। আয়োজকদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সাইফুল ইসলাম ও সাবরিনা জাহান। এরপর বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দিদার কচি, টোকিও বৈশাখী মেলার অন্যতম আয়োজক ও সংগঠক মো. জসিম এবং লেখক ও সাংবাদিক প্রবীর বিকাশ সরকার।

বক্তব্যের পর প্রদর্শিত হয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র। এরপর শহীদদের নিয়ে গান ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’ নিয়ে মঞ্চে আসেন কণ্ঠশিল্পী সাবরিনা জাহান।

অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত
অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত

এ গানের পর পরিবেশিত হয় নারী ও পুরুষদের দেশাত্মবোধক দলীয় সংগীত। পুরুষদের দেশাত্মবোধক দলীয় সংগীত পরিবেশনায় থাকে ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর’ ও নারীদের দেশাত্মবোধক দলীয় সংগীত পরিবেশনায় থাকে ‘সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি’ গান দুটি।

এবারের বিজয় উৎসবে দ্বিতীয়বারের মতো মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা প্রদান করা হয় দুজনকে। গুম্মা তোচিগি ও সাইতামাপ্রবাসী বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে প্রবীর বিকাশ সরকার ‘মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারক’ তুলে দেন দুই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাজ্জাদ হোসেন ও আইলা কবিরকে। পর্বটি পরিচালনায় ছিলেন আয়েশা সিদ্দিকা।

অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত
অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত

মধ্যাহ্নভোজ ও নামাজের বিরতির পর শিশু–কিশোরদের বয়সভিত্তিক চিত্রাঙ্কন, বাংলা বর্ণলেখন ও সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতায় জাপানিজ ভাষায় অভ্যস্ত শিশুরা বাংলা বর্ণমালা, বাংলায় অভিবাদন, বাংলা কবিতা, ছড়া ও গানের পরিবেশনায় ফুটে ওঠে দেশাত্মবোধ। এ পর্ব পরিচালনা করেন রওশন আফরোজ।

এরপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ পর্বের শুরুতেই ছিল সালাহউদ্দিন জাহিদ রচিত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বিশেষ নাটিকা ‘শেষ দৃশ্য নেই’। নিষ্পেষিত অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধা ও কালের বিবর্তনে রাজাকারের মুক্তিযোদ্ধায় রূপান্তরিত হওয়ার পটভূমিতে রচিত এই নাটিকাটিতে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন লুৎফর রহমান, ফাতেমা লুৎফর, মনসুর আহমেদ ও মো. শাহাদাত।

অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত
অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত

বিশেষ নাটিকার পর কবিতা আবৃত্তি করেন জাকির হোসেন, আয়েশা সিদ্দিকা, শতাব্দী মেহজাবিন, জান্নাতুল সরকার ও সাবরিনা জাহান।

কবিতা আবৃত্তি শেষে থাকে হাফিজ কবির খান ও মালিহা পারভিনের পরিচালনায় সব সময়ের মতো মজার ও শিক্ষণীয় প্রশ্নোত্তরে কুইজ পর্ব। এ পর্বের শুরুতে ফাতেমা লুৎফর পরিচালিত ‘বুদ্ধিমত্তা মূল্যায়ন’ পর্বে কুইজে সর্বাধিক ফাইনাল রাউন্ডে অংশগ্রহণকারী তিনজন মৌরি বড়ুয়া, আয়েশা সিদ্দিকা ও রওশন আফরোজকে পুরস্কৃত করা হয়।

উৎসবে মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা প্রদান করা হয়। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত
উৎসবে মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা প্রদান করা হয়। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত

এবারের বিশেষ কুইজে চারটি রাউন্ড অতিক্রম করে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেন যথাক্রমে সাজিদ রহমান, নোমান সাইদ ও সাইফুল ইসলাম।

সবশেষে সংগীত পরিবেশনায় বড়দের সঙ্গে ছিল ছোট বন্ধু জেসিনের জাপানিজ গানের পাশাপাশি আরোহার পরিবেশনা ‘সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী’।

চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত

ভাবিদের তৈরি মজাদার সান্ধ্য নাশতা পরিবেশন শেষে সন্ধ্যা সাতটায় অতিথিদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে সমাপ্তি হয় বিজয় উৎসব।

উৎসবে অংশগ্রহণকারীরা। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত
উৎসবে অংশগ্রহণকারীরা। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত

অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন লেখক।

উল্লেখ্য অনুষ্ঠানে অতিথিদের জন্য চা-কফির একটি স্টল ছিল মো. শাহাদাত দম্পতির পক্ষ থেকে।