বাংলায় ইংরেজি উচ্চারণ শেখার বই

বাংলায় ইংরেজি উচ্চারণ শেখার বই
বাংলায় ইংরেজি উচ্চারণ শেখার বই

বেশ কয়েক দিন আগে দেশের (আমার বাংলাদেশের) এক পত্রিকার খবরে জানা গেল, বাংলাদেশ সরকার স্কুলশিক্ষকদের ইংরেজি শেখানোর দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এক প্রকল্প হাতে নিয়েছে বা শুরু করতে যাচ্ছে।

ভালো উদ্যোগ নিঃসন্দেহে। যাঁরা শেখাবেন তাঁদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।

এসব প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজন যথেষ্ট আর্থিক জোগান। সরকারি উদ্যোগ যদি হয় তবে তাতে আর্থিক ব্যবস্থা থাকবেই বা থাকার কথা। যত দূর বোঝা গেল, বাংলাদেশ সরকার ব্রিটিশ কাউন্সিলের সঙ্গে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন বিষয়ে মোটা অঙ্কের চুক্তিও করেছে। আশা করা যায়, ইংরেজি গ্রামার ও উচ্চারণ, এই দুটি বিষয়ই প্রশিক্ষণের অন্তর্ভুক্ত হবে।

গ্রামার বা ব্যাকরণ ভালোভাবে না শিখলে, না জানলে, ভাষাজ্ঞান অর্জিত হয় না। যেকোনো ভাষার গ্রামার ভালো জানা শুদ্ধভাবে লিখতে পারার পূর্বশর্ত।

প্রশ্ন হলো লিখতে জানলেই হবে, না মুখে শুদ্ধ উচ্চারণে বলতে পারলেই বলা যায় বা যাবে, ভাষাটা একজন করায়ত্ত করেছেন বা ভাষাতে তার দখল আছে। কথ্যভাষার জন্য উচ্চারণ শেখা অতি দরকারি বিষয়।

ভাষা শেখার জন্য যথোপযুক্ত বইপত্র প্রয়োজন এবং যিনি শেখাবেন তারও উপযুক্ত ভাষাজ্ঞান ও মুখে বলার দক্ষতা থাকতে হবে।

এই খবর যখন পত্রিকান্তরে চোখে পড়ল, কাকতালীয়ভাবে তখনই ইংরেজি শেখানো নিয়ে আমার হাতে একটি বই এসে গেল। মনে হচ্ছে বইটির প্রয়োজনীয়তা আছে। তাই সবার সামনে বিষয়টি নিয়ে বলার জন্য এই লেখা। বইটির নাম ‘ইংরেজি উচ্চারণের গাইড বই’। লেখক আমিন রহমান। অনেক খাটাখাটনি করে, যত্ন নিয়ে লেখক ইংরেজি ভালো লিখতে পারেন কিন্তু উচ্চারণ নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত বলে মুখ খুলতে অস্বস্তি বোধ করেন। এসব ক্ষেত্রে বইটি তাকে সাহায্য করবে।

কারও মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, উচ্চারণ শেখার জন্য গাইড বইয়ের দরকার কী? আবার অন্য কারও কারও মতে, বিবিসির ইংরেজি প্রোগ্রাম শুনলেই তো ভালো ইংরেজি উচ্চারণ শেখা যায়। হ্যাঁ, এ রকম পন্থা অনুসরণ করে অনেকেই ইংরেজি ভাষায় সড়গড় হয়ে ওঠেন হয়তো। তবে যদি তাকে বলা হয় কেন ও কীভাবে এ রকম উচ্চারণ করা হলো, তা কিন্তু তিনি বুঝিয়ে বলতে পারবেন না। তার পক্ষে অন্যকে উচ্চারণ শিখতেও সাহায্য করা সম্ভব নয়।

বাংলা ভাষায় ‘ভ’ বর্ণটি বলার সময় আমাদের জিহ্বা মুখগহ্বরের কোনো অংশকে স্পর্শ না করেও যেভাবে মুখের ভেতর সঞ্চালিত হয়, ইংরেজি বর্ণ v-এর উচ্চারণের সময় ওইভাবে জিব সঞ্চালন করলে চলবে না। তাতে ইংরেজি নাকি বাংলা বলা হচ্ছে বোঝা মুশকিল। ইংরেজি V বর্ণ উচ্চারণের জন্য বাঁক-প্রত্যঙ্গের চলাচল বা নড়াচড়া সম্পূর্ণ ভিন্ন। এসব বিষয় সুন্দরভাবে নিজে নিজে শেখার জন্য আমিন রহমানের বইটি সাহায্য করবে। বইটির ইংরেজি নাম ENGLISH PRONOUNCIATION GUIDE BOOK FOR NATIVE BENGALI SPEAKER.

বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ৮৯। এই ছোট্ট বইটি লেখার জন্য বেশ কয়েকটি বই লেখক ধৈর্যসহ ঘেঁটেছেন ও পড়েছেন। উল্লেখ্য, উচ্চারক প্রত্যঙ্গের ছবিসহ ব্যাখ্যা করা হয়েছে উচ্চারণ কীভাবে শুদ্ধ করা যাবে। কোন বর্ণ উচ্চারণে জিব কোথায় থাকবে বা জিব তখন মুখের ভেতর তালু বা দাঁত স্পর্শ করবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কেউ বিবিসি শুনে ইংরেজি উচ্চারণ রপ্ত করছেন হয়তো। তবে যদি সঙ্গে সঙ্গে এই বইটির কথামতো উচ্চারক প্রত্যঙ্গ কীভাবে চালিত হচ্ছে মিলিয়ে করেন তবে বিষয়টা আরও সহজ হবে। বইটির সঙ্গেও উচ্চারণ প্র্যাকটিস বা চর্চার জন্য audio/video clips (DVD 1) রয়েছে।

শেষ মলাটের বাইরে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য রয়েছে। যেমন ‘বইটি কার জন্য?’ ‘এতে কী সম্বন্ধে আলোচনা আছে?’ ‘আর কী পাবেন?’

বইটি কার জন্য তথ্যটি বইয়ের মলাট থেকেই তুলে দেওয়া হলো।

‘স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রী, পেশাদার ব্যক্তি, বিভিন্ন কর্মচারী, ভ্রমণকারী, আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী এবং অন্য যাঁরা বোধগম্য ইংরেজি শিখতে চান ও ইংরেজি ভাষায় দেশি ও বিদেশিদের সঙ্গে কথা বলতে চান, এই self-study গাইড বই তাঁদের জন্য।’

যে বিষয়টি না বললেই নয় তা হলো, উচ্চারণ যথাযথ করতে হলে বাঁকপ্রত্যঙ্গের ব্যবহার বোঝানোর জন্য বইয়ে কিছু ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে। ছবির সাহায্য নেওয়া বিষয়টি একদিকে ধন্যবাদ দাবি করে অবশ্যই। অন্যদিকে মনে হচ্ছে এই প্রয়োজনীয় ছবিগুলো আরও বড় ও স্পষ্ট হলে ভালো হতো।

মনে হলো, এই বইতে ‘প্র্যাকটিক্যাল’ ও ‘প্র্যাকটিস’ শব্দগুলোর বদলে ‘ব্যবহারিক’ ও ‘চর্চা’ শব্দ দুটো দেওয়া যেত।

বইটির প্রকাশকাল ২০১৬। ঢাকাতে প্রকাশিত। প্রকাশক জোবেদা ও আমিন রহমান। ছাপা ও বাঁধাই ভালো। মলাট দৃষ্টিনন্দিত ও আকর্ষক। মুদ্রণ–বিভ্রাট নেই বললেই চলে। মূল্য বাংলাদেশের টাকায় ৬০০, ইউএস ডলারে ২০ ও অস্ট্রেলিয়ান ডলারে ২৫।

উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, বইটির লেখক ভাষাতাত্ত্বিক, ধ্বনি বিশেষজ্ঞ নন। লেখক একজন প্রকৌশলী। তারপরও যত্ন নিয়ে প্রয়োজনীয় ও উচ্চারণ শেখার কারিগরি দিকনির্দেশিকা বিষয়ে একটি বই লিখেছেন। নিজ উদ্যোগে প্রকাশও করেছেন। এই প্রয়াসকে কী বলা যায়? এটা বোধ হয় নিজ জাতি ও নিজ ভাষাভাষীদের সাহায্য করার ইচ্ছা থেকে উৎসারিত।