স্বাধীনতা অর্থবহ করার আহ্বান

অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, ব্রাজিল
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, ব্রাজিল

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার সেনাবাহিনী বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধকালে তাঁকে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে অন্তরীণ করে রাখে। তাতে স্বাধীনচেতা বাঙালি জাতিকে দমানো যায়নি।

আপামর বাঙালি জীবন বাজি রেখে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রিয় স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু বিজয় আমাদের পরিপূর্ণ হলো না। বাঙালির স্বাধীনতাসংগ্রামের অবিসংবাদী নেতা বঙ্গবন্ধু তখনো পাকিস্তানের কারাগারে।

পাকিস্তান সরকার শেষ পর্যন্ত ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নতিস্বীকার করে। বাঙালির প্রাণপ্রিয় নেতা মুক্তি পেয়ে লন্ডন আর দিল্লি হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পা রাখেন তাঁর প্রিয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে। সারা বাংলাদেশের মানুষ সেদিন বরণ করে নেয় তাদের প্রিয় নেতাকে।

ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় আলোচনা অনুষ্ঠানে এভাবেই ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারির প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জুলফিকার রহমান।

আনন্দ আর উদ্দীপনার মধ্যে ব্রাজিলের বাংলাদেশ দূতাবাসে গত শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) উদ্‌যাপিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।

বক্তব্য দিচ্ছেন রাষ্ট্রদূত মো. জুলফিকার রহমান। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, ব্রাজিল
বক্তব্য দিচ্ছেন রাষ্ট্রদূত মো. জুলফিকার রহমান। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, ব্রাজিল

রাষ্ট্রদূত জুলফিকার আরও বলেন, পাকিস্তান-আন্দোলনের অন্যতম নেতা বঙ্গবন্ধু ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময়েই বুঝতে পেরেছিলেন এই পাকিস্তান তিনি চাননি। পরবর্তী সময়ে এক সাক্ষাৎকারে তাই তিনি বলেছিলেন যে বাংলাদেশের আইডিয়াটা তাঁর মাথায় আসে সেই ১৯৪৭ থেকেই। এ কারণেই তিনি ১৯৪৮ সালের বাংলা ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিলেন, বাঙালির আত্মপরিচয় আর সংস্কৃতি বাঁচানোর সংগ্রামে। এরপর স্বাধিকারের সেই দীর্ঘ আন্দোলনে অবিচলিত নেতৃত্ব দিলেন বঙ্গবন্ধু। অর্জিত হলো বাংলার মহান স্বাধীনতা।

স্বাধীনতা আন্দোলনের ৩০ লাখ শহীদ আর দুই লাখ সম্ভ্রম হারানো নারীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রদূত জুলফিকার উপস্থিত সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ১০ জানুয়ারিতে জাতির জনকের দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যে, যখন তিনি বলেন, ‘এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এ দেশের যুবক যারা আছে তারা চাকরি না পায়। মুক্তিবাহিনী, ছাত্রসমাজ, তোমাদের মোবারকবাদ জানাই তোমরা গেরিলা হয়েছ, তোমরা রক্ত দিয়েছ, রক্ত বৃথা যাবে না, রক্ত বৃথা যায় নাই।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, বঞ্চনাহীন বঙ্গবন্ধুর সেই সোনার বাংলা গড়ার পথে বাংলাদেশ আজ অনেকটা পথ পাড়ি দিয়েছে। তবু সবার জন্য স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার জন্য বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন ছিল, তা আমরা আজও বাস্তবায়ন করতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে অবস্থান করা বাংলাদেশে একটি শোষণ-বঞ্চনাহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তাঁর হাতকে শক্তিশালী করার জন্য এবং বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রায় অংশগ্রহণের জন্য তিনি উদাত্ত আহ্বান জানান।

উপস্থিতির একাংশ। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, ব্রাজিল
উপস্থিতির একাংশ। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, ব্রাজিল

মুজিব শতবর্ষের বছরব্যাপী দূতাবাসের আয়োজনে অংশগ্রহণের জন্যও তিনি বাংলাদেশি ও ব্রাজিলিয়ানদের আমন্ত্রণ জানান।

প্রবাসী বাংলাদেশি, ব্রাজিলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ও দূতাবাসের পরিবার-পরিজনদের উপস্থিতিতে দূতাবাসের এ আয়োজনে অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রদূত মো. জুলফিকার রহমান। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ভিডিও প্রদর্শন, ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর মুজিব শতবর্ষের ক্ষণগণনা অনুষ্ঠানের ভিডিও প্রদর্শন, দিবসটির তাৎপর্যের ওপর মুক্ত আলোচনা ইত্যাদি এ আয়োজনের অনুষঙ্গ ছিল। বিজ্ঞপ্তি