কেরোসিনের গন্ধ

আমাদের ছোট্ট ঘরটার মাঝে

ঠিকমতো আলো ঢুকত না।
ছোট ছোট জানালা পেছনে ঘন বন
দিনের আলোয় ঘরে বসে
পড়তে পারতাম না।
রাতে ছিল হারিকেনের আলো
কখনো-বা কুপিবাতি
তার সঙ্গে কেরোসিনের গন্ধ।

আমরা পড়তে যেতাম একটু দূরে
কাঁঠালতলায় বাঁশের মাচায়
পাশে ভুট্টার খেত সেখানে দল বেঁধে
টিয়া পাখি আসে।
আমরা বাঁশের ফটফটি বাজিয়ে
টিয়া তাড়াতাম আর পড়তাম।
টিয়াদের বাসা ছিল নদীর ওপারে
বটগাছের অন্ধকার খোদলে
তার পাশে তালগাছের সারি
সেখানে বাবুই পাখির
ঠাসবুনটের বাসা ঝুলে থাকে।
অবাক হয়ে বোঝার চেষ্টা করতাম
ওদের বাসাগুলো কতটা অন্ধকার।
কতটা আলো ঢোকে সেখানে।
একদিন পাশের বাড়ির বুড়ি দিদিমা বললেন,
বাবুই পাখিরা কাদামাটি দিয়ে
বাসার ভেতরে জোনাকি পোকা আটকে রাখে।
সেই থেকে আমি জোনাকি পোকা ধরার জন্য
ছুটে চলেছি। ঘরের পেছনে বন, স্কুলের মাঠ,
নদীর ধার, পাহাড়ের চূড়া।
অন্ধকারে জোনাকি ধরার কাজটি সহজ নয়
তবু পাখিদের মতো একটু আলোর অন্বেষণে
ছুটেছি দেশ থেকে দেশান্তরে
পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে
পাড়ি দিয়েছি সাত সমুদ্র তেরো নদী।
এখন আমার পড়ার ঘরে
দেয়াল জুড়ে জানালা
সেখানে চাঁদ সূর্য ঢুকে পড়ে অনায়াসে
হাজার জোনাকি যেন বাঁধা আছে ঘরে।
শুধু কুপি বাতির কেরোসিনের গন্ধটা নেই।

বেদনার ভাঁজে ভাঁজে ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে
ভালোবাসার সমষ্টিই জীবন।
সেখানে আলো আর অন্ধকার পালাক্রমে আসে।
জীবনে সবকিছু একসঙ্গে পাওয়া যায় না।
–––

স্বপন বিশ্বাস: কবি ও গল্পকার। নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র। ই–মেইল: <[email protected]>