বাকল

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

যদি গাছের বাকল আরেকটু কম খসখসে হতো
যদি চুলের গহিন থেকে ডাক উঠে আসত
যদি পাথর বলে দিত আগুন কেন থিতু হয় না
তাল তাল কাদা বুকে ধরে,
যদি রাতে রাতে জ্বলে ওঠা দাবানলে জীবাশ্ম ভেসে উঠত
যদি কোনো যদি-র বনে কুহেলিকায়
আবারও দেখা মিলত আলেয়ার,
ধরে নিতাম, যা ছিল না, আর যা নেই, তার সবই ধাঁধা।
যখন মন চায় ডুব দিতে মরাকটালে
কিংবা তার ফেলে যাওয়া শামুকের খোসায়,
তখন এ-ও ভাবি, আদতে চেয়েছিলামটা কী—
হারিয়ে যেতে, নাকি ভুলে যেতে?
ততটুকু ভুলে যেতে না, যতটুকু না ভুললেই না; ততটুকু।
আধো বিস্মরণের পরতে পরতে মিলে গিয়ে শীতলপাটির
ঠাসবুনটে গেঁথে যেতে-জমে উঠতে খেজুরের পাটালিতে।
আমাদের চাওয়াগুলো ছিল এমন যে
তারা বুকের কলকবজা নাড়তে জানে,
পুতুলনাচের অদৃশ্য কাঠি হয়ে
ক্রীতদাসীর ভুবনমোহিনী হাসিটি হাসতে জানে।
আমরা শিখেছি কল্পনাকে বন্দী রাখতে
বলতে-কিছু না বলে, দেখতে-কিছু না দেখে।
চাওয়াগুলোকে বশ করতে চৌকো চৌকো তাবিজে।
শিখেছি লেনদেনের বাজারে শুধু রেখে যেতে বাকি—
বাকি রাখতে কবিতার বর্ণ, শব্দ,
শব্দের জুড়ে যাওয়া, ছাড়িয়ে যাওয়া
আবারও খাপে খাপে জুড়ে যাওয়া।
এসবের ফাঁকতালে ‘না’ বলেছি সৃষ্টিকে
পাশ কাটিয়েছি নোনা ঘাস। নোনা বন্দর।
ঝিম ধরা শহর। বেতো ঘোড়া। ঘুমন্ত পোতাশ্রয়।
চোখাচোখি করিনি আধখোলা জানালার সঙ্গে।
আমরা ছেড়ে দিয়েছি প্রশ্ন করা,
যদিও প্রশ্নাতীত বলে কিছু নেই।
ধরো যদি হারিয়ে যায় প্রশ্নেরা,
এসব বাকলেরা আরেকটু কম খসখসে ভোরে
কান্নার বুক থেকে উঠে এসে হাসিতে লুটিয়ে পড়ত;
যা কিছু দৈব, যা নেই, হয়তো তারাও খসে পড়ত
এই মন্দাক্রান্ত জন্ম ঘোরে।
আরও ছেড়ে দিই উত্তরের খোঁজ,
যেমন ছাড়িয়ে এসেছি প্রশ্নের বেড়াজাল
আমাদের মাঝামাঝি বলে কোনো অবস্থা যেন নেই।
কেন যেন ঠাহর করতে পারি না
খসখসে বাকলেরা স্বপ্ন নাকি ঘোর ছিল,
শব্দ-নাকি শব্দহীন কোনো দৃশ্য ছিল
দৃশ্য-নাকি দৃশ্যহীন কোনো পটভূমি ছিল।
–––

বিপাশা হক: অ্যাডিলেড, অস্ট্রেলিয়া। কবিতা লেখেন তিনটি ভাষায়। জীবনবোধের ন্যূনক্তি তার কবিতার প্রাণ।