২০১৯-এ গবেষণায় কেমন ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

বর্তমান বিশ্বে যে কয়েকটি সংস্থা প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য হচ্ছে স্কোপাস (www.scopus.com)।

এই ডেটাবেইস ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করলেও এতে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধের তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়। এতে বর্তমানে ৩৬ হাজার ৩৭৭টি নিবন্ধিত জার্নাল/কনফারেন্স প্রকাশনার ডেটা আছে।

প্রতিবছর স্কোপাস এই প্রকাশনাগুলোর নিবন্ধন পর্যালোচনা করে এবং শুধু যে জার্নাল/প্রকাশনা নির্দিষ্ট মান বজায় রাখতে সক্ষম হয়, তাদের ডেটা সংরক্ষিত হয়। বর্তমানে ২২ হাজার ৭৯৪টি সক্রিয় প্রকাশনা।

কাজেই এই ডেটাবেইস ব্যবহার করলে সহজেই কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চল বা প্রতিষ্ঠান থেকে কতটি গবেষণা মানসম্মত প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে, কারা তাতে অর্থের জোগান দিয়েছে, কাদের সঙ্গে মিলে গবেষণা কর্মগুলো সম্পন্ন হয়েছে, তার সব খুঁটিনাটি তথ্য জানা যায়।

২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে স্কোপাস নিবন্ধিত জার্নালে মোট ৬ হাজার ৪১৯টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে (৫৮৯৮টি প্রকাশিত এবং ৫২১টি প্রেসে আছে)।

দেশ হিসেবে সংখ্যাটি অনেক কম। যেমন কিংস কলেজ লন্ডন থেকেই এ সময় ৮ হাজার ৬৬০টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।

বাংলাদেশের থেকে গবেষণায় সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সেখান থেকে প্রকাশিত হয়েছে ৬৭৬টি গবেষণাপত্র। তার পরই আছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (৬৬৯টি)।

উল্লেখ্য, সেরা দশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র (৩৯৬টি), ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় (২৪৪টি) ও ড্যাফোডিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় (২৩৬টি)। যথাক্রমে তৃতীয়, ষষ্ঠ ও অষ্টম স্থান দখল করেছে।

আমি যেহেতু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই, তাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেটা নিয়ে আগ্রহ ছিল বেশি। বাংলাদেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান দশম।

২০১৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২১১টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে, যার মধ্যে গবেষণা প্রবন্ধ ১৫১টি (সর্বোচ্চ ২৬টি পরিবেশবিজ্ঞান বিষয়ের), কনফারেন্স পেপার ৪৪টি (সর্বোচ্চ ৩৮টি কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের), বই ২টি, অধ্যায় ৭টি ও রিভিউ ৭টি।

২০১৮ ও ২০১৭ সালে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২১১ ও ১৮০টি। ২০১০ সালে এই সংখ্যা ছিল ৯৪টি। এর মানে গত এক দশকে প্রতিবছর গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করার সক্ষমতা বেড়েছে দ্বিগুণের কিছু বেশি।

এখানে উল্লেখ্য, এই ১০ বছরে নতুন বা পুরোনো বিভাগ মিলিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে প্রায় একই অনুপাতে। ২০০০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের সংখ্যা ছিল ৩১টি। ১৯৭৩ সাল থেকে থেকে অদ্যাবধি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত মোট স্কোপাস নিবন্ধিত জার্নাল/প্রকাশনায় গবেষণাপত্রের সংখ্যা ২ হাজার ১৭৮টি।

এখন চলুন দেখা যাক কারা অর্থায়ন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালে প্রকাশিত গবেষণা প্রকল্পগুলোয়। ১২টি প্রবন্ধে বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর পরই ১০টি নিবন্ধে উল্লেখ আছে জাপান সোসাইটি ফর দ্য প্রমোশন অব সায়েন্সেসের (JSPS) নাম।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গবেষণা করে বেশি। প্রথম ১৫টি কলাবরেটিভ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ২টি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় আছে যাদের সঙ্গে ৬টি করে যৌথ প্রকাশনা আছে ২০১৯ সালে।

এদের একটি জাপানের কানাজাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যটি অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়।

২০১৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৮টি করে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন বনবিদ্যা ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ও হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আফতাব উদ্দিন। এখানে কনফারেন্স প্রসিডিংস ধরা হয়নি।

২০১৯ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুটি বই প্রকাশের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. অলক পাল ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন।

তবে আশার কথা হচ্ছে, সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও প্রকাশনা দপ্তর গবেষণা প্রকল্পের বরাদ্দ বাড়িয়েছে। আগে প্রকল্পপ্রতি বাজেট ছিল ৫০ হাজার টাকা। এখন তা আড়াই লাখের মতো। এই টাকাও প্রায়োগিক গবেষণার জন্য অপ্রতুল।

এ ছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উন্নীত হওয়ায় অনেক স্কোপাস তালিকাভুক্ত প্রকাশনা সংস্থা আর্টিকেল প্রসেসিং চার্জে (২৫০০ ইউএস ডলার) কোনো ছাড় দিতে চাচ্ছে না।

এমতাবস্থায় সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিসিএসআইআর ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে তাদের বিজ্ঞানীদের কেউ স্বীকৃত প্রকাশনা সংস্থা/জার্নালে প্রকাশের জন্য যে চার্জ, তা কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করবে বলে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। এই প্রজ্ঞাপনে স্বীকৃত বলতে কিছু নির্দিষ্ট প্রকাশনা সংস্থা ও ডেটাবেইসে অধিভুক্তর কথা বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখভাল করলে প্রতিবছর মানসম্মত প্রকাশনার সংখ্যা বাড়বে বলেই আমার বিশ্বাস।
---
মো. মাহবুব হাসান: শিক্ষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট গবেষক, কিংস কলেজ, লন্ডন, যুক্তরাজ্য।