নেদারল্যান্ডসে বৃহৎ পরিসরে অমর একুশ

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস

বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিস্তারে এবং শান্তি ও বহু ভাষাতত্ত্বের সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে নেদারল্যান্ডসে বৃহৎ পরিসরে পালন করা হয়েছে অমর একুশ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

দেশটির বাংলাদেশ দূতাবাস আরও সাতটি দেশের দূতাবাসকে সঙ্গে নিয়ে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে। গতকাল শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দ্য হেগে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

দেশটিতে নিযুক্ত ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত, বেলারুশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত, নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার প্রধান, বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনৈতিক প্রতিনিধি, দ্য হেগের সাবেক ডেপুটি মেয়র, প্রবাসী বাংলাদেশি, শিক্ষার্থী, ডাচ নাগরিকসহ অনেক অতিথি এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই ১৯৫২ সালের ভাষাশহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ড. দিলরুবা নাসরিন। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস
অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ড. দিলরুবা নাসরিন। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস

অনুষ্ঠানে দেশটাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল তাঁর স্বাগত বক্তব্যে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহীদের শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উদ্দীপনায় মানবিকতাকে প্রাধান্য দিতে আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রদূত ভাষাগত বৈচিত্র্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে লালন করার প্রতি গুরুত্বারোপ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের কথা স্মরণ করেন।

এ ছাড়া ২০১৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দ্য হেগের জাউদার পার্কে শহীদ মিনার উদ্বোধনের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি প্রথমবারের মতো নেদারল্যান্ডসে শহীদ মিনার নির্মাণে সার্বিক সহায়তার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও দ্য হেগ মিউনিসিপ্যাল কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মূক ও বধিরদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শনের জন্যও রাষ্ট্রদূত সবাইকে আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের কিছু দৃশ্য। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস
অনুষ্ঠানের কিছু দৃশ্য। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূতদের জন্য ‘শান্তির ভাষা’ শীর্ষক নির্ধারিত অংশে ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত এবং তাঁদের সহধর্মিণী, অন্য কূটনীতিকেরা ও দ্য হেগের সাবেক ডেপুটি মেয়র অংশ নেন। অনুষ্ঠানের এ অংশটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সহধর্মিণী দিলরুবা নাসরিন পরিচালনা করেন।

রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকেরা তাঁদের নিজ নিজ ভাষায় শান্তির বার্তা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যসংবলিত পরিবেশনা উপস্থাপন করেন। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত তাঁর দেশের ঐতিহ্যবাহী একটি নৃত্য পরিবেশন করেন। দ্য হেগের সাবেক ডেপুটি মেয়র বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত একটি কবিতা আবৃত্তি করে শোনান।

অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শান্তির সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে বাংলাদেশ, ভারত, রাশিয়ান ফেডারেশন, আফগানিস্তান, নেপাল ও ভিয়েতনামসহ আফ্রিকান স্টুডেন্টস গ্রুপের শিল্পীরা রঙিন ও বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা পরিবেশন করে।

উপস্থিতির একাংশ। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস
উপস্থিতির একাংশ। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস

অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর ঐতিহ্যবাহী রংবেরঙের পোশাক ও পরিবেশনা সবাইকে মুগ্ধ করে।

অতিথিরা সাংস্কৃতিক সম্প্রীতি ও মেলবন্ধনকে জোরদার করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরার প্রয়াসে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত এ ধরনের অনুষ্ঠানের প্রশংসা করেন।

এর আগে ২১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্য ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে দ্য হেগের জাউদার পার্কে নির্মিত শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন।

দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্য ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে দ্য হেগের জাউদার পার্কে নির্মিত শহীদ মিনারে ২১ ফেব্রুয়ারি পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস
দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্য ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে দ্য হেগের জাউদার পার্কে নির্মিত শহীদ মিনারে ২১ ফেব্রুয়ারি পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস

ভাষাশহীদদের মহান আত্মত্যাগের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শনের অংশ হিসেবে এ সময় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রচেষ্টায় ২০১৯ সালে হেগে প্রথমবারের মতো শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি