ওসাকায় বিনম্র শ্রদ্ধায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

অনুষ্ঠানের একটি পরিবেশনা
অনুষ্ঠানের একটি পরিবেশনা

আমরা বাঙালিরা যত দূরে থাকি, যেখানেই থাকি, একুশের সূর্যোদয়ের ভোরে আমাদের মনে যে সুরটি বেজে ওঠে তা হলো, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।’ কী করে ভুলব এই দিন। কী করে ভুলব রক্তের এই ঋণ।

একুশের এই চেতনা ও প্রেরণা উদ্বুদ্ধ করতে দেশ থেকে অনেক দূরে সূর্যোদয়ের দেশ জাপানের কানসাই এলাকায় বসবাসকারী বাঙালিদের প্রিয় সংগঠন কানসাই বাংলাদেশ সোসাইটি সপ্তমবারের মতো আয়োজন করে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান।

আজ (২৩ ফেব্রুয়ারি, রোববার) ওসাকার ইকোনো কুমিন সেন্টারে সমবেত জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান।

এরপর প্রতীকী স্মৃতিসৌধে ভাষাশহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মৃতিসৌধে অর্পণ করা হয় পুষ্পস্তবক। প্রাণের ভেতর থেকে উঠে আসা সেই অমর গানের সুর ধ্বনিত হয় সবার কণ্ঠে। হাত ভরা ফুল, বুক ভরা ভালোবাসা আর শোক নিয়ে এগিয়ে যায় মিছিল।

পরে প্রবাসী ছোট্ট সোনামণিদের অংশগ্রহণে পরিবেশিত হয় গান ও কবিতা আবৃত্তি। এ ছাড়া জাপানিদের অংশগ্রহণে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি পরিবেশিত হয়। তাৎক্ষণিক নাটিকা পরিবেশন করে প্রশংসা কুড়ান দিদার, সাইফুল, তালিব, মামুন রিপন। শিশুশিল্পী তাসনিফও প্রশংসা কুড়ায়। নৃত্য পরিবেশন করেন তাসনিম ইসরাত।

শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কানসাই বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুমি খন্দকার। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন ড. মেহরুবা মোনা। আর সহযোগিতায় ছিলেন এ সরকার রবিন। কোরআন তিলাওয়াত করেন তালিব আমিন। গীতা পাঠ করেন রিপন কুমার বিশ্বাস।

অনুষ্ঠানে জাপানি অতিথিদের জন্য জাপানি ভাষায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বিশেষ আলোচনায় জাকির মোহাম্মদ বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরেন। এ ছাড়া আলোচনায় অংশ নেন এম এ মান্নান, প্রকৌশলী মো. মাসুদ-উল হাসান, বিজ্ঞানী রবিউল আউয়াল ও ডা. মারুফ হক খান।

বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস ও গুরুত্ব তুলে ধরেন। দেশের জন্য মায়ের জন্য অনেক মানুষ অনেক জাতিই তো প্রাণ দিয়েছে। কিন্তু নিজের ভাষার জন্য, মায়ের ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে একটাই জাতি, একটাই দেশ, বাঙালি আর বাংলাদেশ। আজ থেকে ৬৮ বছর আগে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায় করতে গিয়ে যাঁরা জীবন দিয়েছিলেন, সেসব সাহসী মানুষ আজও আমাদের প্রেরণার উৎস। একুশের চেতনা সঞ্চারিত হোক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, দেশে ও এই প্রবাসে এই আশা ব্যক্ত করেন তাঁরা।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা

সোসাইটির সভাপতি সৈয়দ জাহিদুল রায়হান সমাপনী বক্তব্যে মহান ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে সব ভাষাসৈনিককে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘হে অমর ভাষাসৈনিকেরা, তোমাদের আত্মত্যাগ ও সংগ্রাম বৃথা যায়নি। তোমাদের বুকের তাজা রক্তে সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বজুড়ে মাতৃভাষার মহান ইতিহাস। তাই বাঙালি জাতি তোমাদের হৃদয় গভীরে প্রভাতের সূর্যোদয়ের মতো ধারণ করবে অমলিন এবং লালন করবে মহান একুশের অমর চেতনা।’

জাহিদুল বলেন, ‘বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলার সাহসী দামাল ছেলেরা মাতৃভাষা বাংলার জন্য জীবন দিয়েছিল। সেসব ভাষাসৈনিকের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।’ সারা বিশ্বে একুশের চেতনা ছড়িয়ে পড়ুক, এই আশা তিনি ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানটির সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাদাত মো. সায়েম।